---------
মা-বাবার পরেই আমাদের স্নেহ-মমতা আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখেন আমাদের শিক্ষকেরা। কখনো একটু শাসন, কখনো একটু সমর্থন, কখনো একটু একটু করে সাহস জুগিয়ে আমাদের হৃদয় সিংহাসন দখল করে নেন তারা। কিছু কিছু শিক্ষক থাকেন যারা আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যান,চাইলেও আমরা তাদের ভুলতে পারিনা। আমার জীবনে ঠিক তেমনি একজন শিক্ষক মোঃ হেলাল উদ্দিন স্যার।
হ্যাঁ,বলছি গনিতের প্রভাষক মোঃ হেলাল উদ্দিন স্যারের কথা। যিনি আমার শিক্ষা জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন। "সাইন্স" কি জিনিস তা বুঝতে শিখি স্যারের কাছ থেকে। যখন প্রাইমারিতে পড়ি তখন থেকেই সবার মুখে স্যারের প্রশংসা শুনতাম যে,স্যার অনেক ভালো পাঠদান করান। প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন স্যারের প্রশংসা আরো বেশি শুনতে পাই। স্যারকে দেখা এবং স্যারের কাছে পড়ার জন্য আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি। আস্তে আস্তে
সময় গড়িয়ে যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠি তখন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য সুযোগ হয়। স্যার তখন প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম কলেজে গনিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। খুব আগ্রহ নিয়ে প্রথমদিন স্যারের কাছে পড়তে যাই! প্রথম দিনেই মনে হয়েছে গনিতের সব ভয় মুহুর্তেই নাই হয়ে গেছে। প্রথম দিনেই স্যারের আচার- আচরণ, কথাবার্তা, পড়ানোর কৌশল আমাকে ভীষনভাবে আন্দোলিত করেছে আনন্দে। এরপর এক মাস না যেতেই স্যারের কাছে সাইন্সের সবগুলো সাবজেক্ট পড়া শুরু করি! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, একটা মানুষ সব বিষয়ে এত পারদর্শী হয় কিভাবে তখন আমার বোধগম্য হয়নি! প্রতিনিয়ত স্যারের সাথে সুন্দর সুন্দর স্মৃতি তৈরি হতে থাকে। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে যায়, আমি জেএসসি ও এসএসসি তে জিপিএ-৫ পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হই। আমার এই সফলতার পিছনে স্যারের অবদান অবিস্মরণীয়। সময় অসময়ে স্যারকে কত বিরক্ত করেছি তার হিসেবে নেই! কখনো স্যারকে বিরক্তবোধ করতে দেখিনি। একটা মানুষ কতটা বন্ধুত্বসুলভ, সাহসী, ত্যাগী,মেধাবী, পরিশ্রমী, কৌশলী ও ভদ্র হতে পারে তা শুধু হেলাল উদ্দিন স্যারকে দেখলেই অনুধাবন করা সম্ভব।
তারপর মাধ্যমিক জীবন শেষ করে কলেজে ভর্তি হই। ততদিনে আমার স্বপ্ন হলো- আমাকে ডাক্তার হতে হবে। বাবা মায়ের ইচ্ছে ও আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তারপর প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম কলেজে সাইন্স বিভাগে ভর্তি হই। কলেজে গিয়ে ও আমি স্যারের সান্নিধ্যে পাই। স্যার আমাদের উচ্চতর গনিত ক্লাস নিতেন। ভাবছিলাম মাধ্যমিক জীবন শেষ করে হয়তো আর স্যারের সান্নিধ্যে পাব না। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে কলেজ জীবনেও স্যারের সান্নিধ্যে পেয়ে যাই। যা আমার জন্য ছিলো অনেক বেশি আনন্দের ও প্রাপ্তির। এরপর আমার স্বপ্ন পূরণে সবসময় সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। যা আমাকে এগিয়ে যেতে ভীষনভাবে সাহায্য করেছে। আমার আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনে স্যারের অবদান কখনোই ভুলার নয়। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ঢাকা কোচিং-এ ভর্তি হই! তখন স্যার আমার সাথে দেখা করেন। কোচিং রুম থেকে বের হয়ে দেখি স্যার রুমের সামনে বসে আছেন! সেই মুহুর্তে আমার চোখ আনন্দে টলমল করে উঠে। আমি জানতাম না স্যার আমার সাথে দেখা করার জন্য আসবেন। একজন স্টুডেন্ট হিসেবে তার প্রিয় শিক্ষকের কাছে এমন স্নেহ ও ভালোবাসা অনেক বেশি আনন্দের এবং গর্বের। স্যার আমাকে বুঝিয়েছেন শিক্ষিত নয়,একজন সুশিক্ষিত মানুষ হতে। আমি সর্বোচ্চ দিয়ে স্যারের সব পরামর্শ মেনে চলার জন্য। স্যারের কথাবার্তা, মন-মানসিকতা, চিন্তা ভাবনা সবকিছু আমাকে ভীষনভাবে টানে!
স্যার,আপনি হাজারো শিক্ষার্থীদের মনেপ্রাণে আজন্মকাল গেঁথে থাকবেন।
আপনার সান্নিধ্যে কাটানো সময়গুলো আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে দামী সময়। একজন ছাত্র কিভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে সেই শিক্ষা আমি আপনার কাছে পেয়েছি। এইটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। আপনাকে অনেক ভালোবাসি স্যার। দোয়া করবেন স্যার আপনার সেই ছোট্ট শুভ যেন একজন ভালো ডাক্তার হতে পারে।
ইতি,
আপনার আদরের ছাত্র শুভ
লেখকঃ হাসান মাহমুদ শুভ
শিক্ষার্থী,ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০