মোঃ মোসাব্বির রাহমান :
দেশ বিভক্তের পর থেকে আজ অবধি রাজনীতিতে ছাত্র সমাজের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এ দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে বা সংকটকালীন মুহুর্তে ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই সবার আগে এগিয়ে এসেছে, রেখেছে সবচেয়ে মূল্যবান সাহসী ভূমিকা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির সূচনা, বিস্তৃতি এবং অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। এই গৌরব-দীপ্ত ভূখণ্ডে ছাত্র রাজনীতির উন্মেষ ঘটেছিল প্রগতিশীল দর্শন তথা জীবনের মননশীল স্তরায়নে অনুঘটক হিসেবে কাজ করার জন্য। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান সৃষ্টি, ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৬৯-র গণ অভ্যুত্থান, ১১ দফার আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসনের স্বপক্ষে সংগ্রাম সর্বোপরি ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র সমাজ শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত করে। তাই ছাত্ররাজনীতি একদিকে যেমন মানবিকতা ও সৃষ্টিশীলতায় উৎসারিত; তেমনি অভিন্ন সেই বোধে অনিবার্যভাবে অসুন্দর আর নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে শক্তিও বটে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতি বলতেই দলবাজি, টেন্ডার বাজী, মাস্তানী করা, একরোখা অসহিষ্ণু অস্ত্র হাতে মাস্তানদের যে ছবি ভেসে উঠে সেটাই কিন্তু পুরো চিত্র নয়। তার বাইরেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা কোনো রকম স্বার্থের জন্যে ছাত্র রাজনীতিতে আসেনি। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্যে সেটা খুবই স্বাভাবিক- তারা সত্যি সত্যি একটা আদর্শের জন্যে রাজনীতিতে এসেছে। তাদের দেশের জন্যে গভীর মমতা এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্যে সত্যিকারের ভালোবাসা রয়েছে। রাজনীতির জগতটা যেহেতু ঘোলাটে এবং কলুষিত তাই যারা এই ছাত্রদের ব্যবহার করতে চায় তারাই শুধু তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে অন্যেরা তাদের থেকে দূরে দূরে থাকে। কিছুদিন থেকে আমার মনে হচ্ছে সম্ভবত পুরো বিষয়টা আমাদের আরো একটু মমতা দিয়ে দেখা উচিৎ। এ কথাটি সত্যি, একজন আরেকজনকে অমানুষিক অত্যাচার করে খুন করে ফেলতে পারে এরকম ছাত্র সত্যিই আছে। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন সেনাবাহিনী মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছিল তখন তাদের বিরুদ্ধে তো এই ছাত্রেরাই প্রথম প্রতিবাদ করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলো। ছাত্ররাজনীতির শুধু নেতিবাচক দিকগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে না দেখে তাদের আদর্শিক দিকগুলো আরো একটু আন্তরিকভাবে দেখলে শেষ পর্যন্ত আমরাই কী লাভবান হয় না ? নেতৃত্ব খুব রহস্যময় একটা ব্যাপার, যারা ভবিষ্যতের নেতা হবে আমরা কী এখন তাদের একটু সাহায্য করব না?
তাই, ছাত্র রাজনীতিকে ঘৃণা না করে আধুনিক, শিক্ষিত এবং সচেতন শিক্ষার্থীদের’ই ধরতে হবে রাজনীতির হাল আর, দৃঢ় কণ্ঠে স্লোগান তুলতে হবে- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।