———-
কেন পশ্চিমা কালচারে ভরে যাচ্ছে সৌদি আরব? আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে থাকবেনা ইসলামের কোনো কিছুই!
এমন প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আগে ঘুরে আসতে হবে সৌদি আরব দেশটি কীভাবে একটি দেশে পরিণত হলো,কারা এবং কাদের নামে দেশের নামকরণ করা হয়েছে। চলুন, ইতিহাস এর পৃষ্ঠা খোলা যাক!!
হযরত মোহাম্মদ (স:) (৫৭০-৬৩২) ৬২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করলে তাঁর পরবর্তী ৩০ বছর চার খলিফাসহ হযরত হাসান (রা:) খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে সব এলোমেলো। ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ খিলাফত ব্যবস্থা উসমানীয় খিলাফত। মূলত “সৌদ” একটি আরবের বিখ্যাত রাজবংশের নাম। উসমানীয় খিলাফত ব্যবস্থার প্রভাব বিস্তার দেখে তারা সইতে না পেরে বিদ্রোহ ঘোষণা করে উসমানীয় খিলাফত এর বিরুদ্ধে। এই সৌদ পরিবারের প্রধান মুহাম্মদ বিন সৌদ উসমানীয় খিলাফত ধ্বংস করার জন্য ১৭৪৪ সালে আরবের এক ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব ( ওয়াহাবি মতবাদের প্রবক্তা) এর ধর্মীয় কাজকে কাজে লাগায় বিশুদ্ধ ইসলাম ফিরিয়ে আনার নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠা করেন “দিরিয়া আমিরাত”। তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে মুহাম্মদ বিন সৌদ এর ছেলে আব্দুল আজীজ এর সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব এর মেয়ের নিকাহ সম্পন্ন হয়।
১৮০৩ সালে আব্দুল আজীজ নিহত হন এক শিয়া মুসলিম এর হাতে।কারণ আব্দুল আজীজ ক্ষমতায় এসে হযরত আলী (রা:) ও হযরত হুসাইন (রা:) এর মাজার শরীফ ভেঙে দেন।এমনকি পবিত্র মক্কা -মদিনার অসংখ্য মুসলিম কে হত্যা করেছে, সাহাবীদের কবর ধ্বংস এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র কবরে ছায়াদানকারী মিম্বর-গুলো ধ্বংস করে। এবং ধ্বংস করে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে।
পরবর্তীতে উসমানীয় খিলাফতের দ্বিতীয় মাহমুদ ক্ষমতায় এসে ইরাক-মক্কা-মদিনার এমন ধ্বংসলীলা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে “সৌদ” পরিবারকে দমনের উদ্দেশ্যে ১৮০৮ সালে শক্তিশালী এক সেনাদল পাঠান। এবার ব্রিটিশরা সৌদ পরিবারকে বাঁচাতে না পেরে আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে মাথা-নত করতে বাধ্য হয়।
১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সৌদি পরিবারের শেষ ইমাম আব্দুর রহমান বিন ফয়সাল তাঁর পুত্র এবং দল-বল নিয়ে পালিয়ে গিয়ে অবশেষে ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি আল-সাবাহ রাজপরিবারে আশ্রয় নেন।
ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি এই রাজপরিবারের সহায়তায় আবার আক্রমণ শুরু করে উসমানীয় খিলাফত এর বিরুদ্ধে। আবার, উসমানীয় খিলাফত এর বিস্তার,প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে কুয়েতি আমীর মুবারক আল -সাবাহ ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্থাপন করে কুয়েতকে ব্রিটেনের করদরাজ্য হিসেবে পরিণত করে। বর্তমান সৌদি আরব এর রাজধানী “রিয়াদ” তখন উসমানীয়দের দখলে ছিল। আবদুর রহমান মারা গেলে পুত্র আব্দুল আজীজ ইবনে সৌদ “রিয়াদ” দখলের জন্য তৎপর হয়ে সাহায্য চাই কুয়েতি আমীর মুবারক আল সাবাহ এর কাছে। ব্রিটিশ এবং কুয়েত উভয়েরই সহযোগিতায় “রিয়াদ” সৌদিদের দখলে আসে। ১৯১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আব্দুল আজীজ ইবনে সৌদ উসমানীয় খিলাফতকে সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করতে ব্রিটিশদের সাথে আবার একটি “ দারিন চুক্তি “ স্বাক্ষর করলে চুক্তি অনুযায়ী সৌদ রাজ পরিবার ব্রিটিশদের করদরাজ্যে পরিণত হয় এবং ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্স-ব্রিটেন- রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ উসমানীয় খিলাফত এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধেই মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ খিলাফত ব্যবস্থা উসমানীয় খিলাফত এর পতন ঘটলে, পবিত্র ভূমি থেকে উসমানীয়দের বিতাড়িত করে ১৯৩২ সালে আব্দুল আজীজ ইবনে সৌদ এর নাম অনুসারে kingdom of Soudi Arabia নামে রাষ্ট্র গঠন করে মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতা দখল করে নেন এই সৌদ পরিবার।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশদের সাথে করা দারিন চুক্তির পুরস্কার হিসেবে আব্দুল আজীজ বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ড করে পেতে থাকে।
পশ্চিমা সংস্কৃতির হ্যালোইন উৎসব এখন সৌদি আরবে:
বর্তমান বিশ্বের আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সের উত্তরাংশে এক-কালে সেল্ট(সেল্টিক) জাতির আগমন ঘটে। তারা মূলত মূর্তিপূজা ও বহু-ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তারা ৩১শে অক্টোবরে সাও-উইন নামে একটি শয়তানী-কুসংস্কার, শিরক ও ভূত- প্রেতার্চনার উৎসব করতো। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায়-সব অমুসলিম দেশে এই উৎসব পালন করা হয়। সাও-উইন থেকে পরিবর্তন হয়ে “হ্যালোইন”(পবিত্র সন্ধ্যা) নামে পালন করা হয়। দুঃখের বিষয় যে এমন শিরকি উৎসব, পশ্চিমা সংস্কৃতি পালন করা হয়েছে পবিত্র ভূমি সৌদি আরবে, নারী-পুরুষ এক সাথে।
শুধু তাই নয়….
পশ্চিমে যৌন চরিতার্থ করা বৈধ, পতিতালয় বৈধ, সমকামিতা বৈধ তাদের সাথে মিল রেখে সৌদিতে ও “হালাল পতিতালয়” নামে পতিতালয় খুলা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। এমনকি সেই পতিতালয় কে হালাল করার জন্য তিনজন ইমামের বৈধ ফতোয়া নেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, ৩৫ বছর ধরে হারাম হয়ে আসা সিনেমাহল এখন সৌদিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধ করা হয় ব্রিটিশদের প্ররোচনায়। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আমদানি করে আনা হয় হলিউড -ভলিউড এর অশ্লীল পোশাকধারী নায়ক -নায়িকাদের।১৪৫ টিরো অধিক সিনেমাহল খুলা হয়েছে এই সৌদিতে। এই পবিত্র ভূমিতেই এখন পশ্চিমাদের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে গানের কনসার্ট, বিভিন্ন নারী-পুরুষের নাচ-গানের শো হয়। কিছু-কাল আগেও নারীদের স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা নিষিদ্ধ করা হলেও বর্তমানে এটা হালাল করা হয়।
গত কিছুদিন আগেও পশ্চিমা বাহিনীর ভক্ত ফুটবলার নেইমার -কে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল হিলালে আনা হয়। দুঃখের বিষয়, তাকে যে সুবিধা গুলো দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সুবিধা হলো, তার গার্লফ্রেন্ড, এবং বিভিন্ন মেয়েদের সাথে যৌনকর্ম করার সুযোগ দিয়েছে। কোনো ইমাম মুখ খুলে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। করলে সাথে সাথে চার দেয়ালে বন্দী। কে আর বলবে সব ইমাম খতিব তো সৌদ পরিবারের ভাড়া করা।
আধুনিক সৌদি রাষ্ট্র গঠনের নামে ডুকে পড়েছে সব পশ্চিমা সংস্কৃতি।কথা বলার কোনো সাহস নেই কারো, কারণ গোপন আঁতাত রয়েছে ব্রিটিশদের সঙ্গে।
ইসরাইল বাহিনী একের পর এক মুসলমানদের আরো একটি পবিত্র ভূমি জেরুজালেম এ আঘাত করলে, অসংখ্য ফিলিস্তিনি কে হত্যা করলে,আল- আকসা মসজিদে খ্রিস্টান-রা বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করলে, কই এমন একটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা মুসলিম কান্ট্রি হিসেবে সৌদি আরব কোনো টু-শব্দ করেছে? করার সুযোগ নেই কারণ সৌদি রাষ্ট্র গঠনে খ্রিষ্টানদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।এই সৌদ পরিবারের ক-একজন রাজা ধর্মপ্রাণ ছিলেন বলে ইসলাম এতো দিন ঠিকাছিল।
যেই দেশ থেকে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে জেহাদ এর ঘোষণা আসার কথা সেই দেশে এখন খ্রিষ্টান কালচারে ভরপুর। সৌদ পরিবার পশ্চিমাদের দালাল।
সেই-দিন আর বেশি দূরে নয়, যেই-দিন এমন পবিত্র ভূমিতেও ইসলামের আনাগোনা থাকবে না।
লেখক :
এম.এ.হোসাইন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।।