মাহবুবুর রহমান সাজিদ:
আসিতেছে নবীন শিক্ষার্থীরা। বাকি আছে টিভি রুম। এবার থেকে হয়ত টিভিরুম দখল শুরু হতে পারে।
৮৫ ওরফে গেমসরুমের শিক্ষার্থীদের কোথায় পাঠানো হবে? হলের চিপাচাপায় কয়জন আর জায়গা হবে? চারসিড়ির নিচে আটজন। এদিকসেদিক মিলিয়ে আরও ১০-১৫ জন। বাকিরা কোথায়?
চিন্তার কারণ নেই ডাইনিং টাইলস করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত কর্তৃপক্ষ প্রতিরাতে ডাইনিংরুমে তালা দিবে। বারান্দার শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে? গেমসরুমে তো এবার হবেনা। নো চিন্তা। হলের সুবিশাল মাঠ, সবুজ ঘাস, স্নিগ্ধ বাতাস, ঝাউগাছ।
এমন শান্ত সুনিবিড় পরিবেশ আর কোথায় পাওয়া যায়। আমি একদিন হলের মাঠে ঘুমিয়েছিলাম। রাত ৩.০০ টায় একজন জাগিয়ে দিয়েছিল। আকাশের তারা দেখতে দেখতে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গিয়েছিলাম। সে রাতের স্মৃতি কখনো ভুলবনা। আমার অবশ্য হলের প্রায় সর্বত্র রাত্রি যাপন হয়েছে। পূর্বব্লকের সিড়িতে প্রায় এক সপ্তাহ ছিলাম। একদিন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গল। এখনি এখান থেকে সরে যেতে হবে। সরে এলাম। ডাইনিংয়ের পাশে বানালাম বাবুই পাখির বাসা। কালবৈশেখি ঝরে বাবুই পাখির বাসা ভাঙ্গতে দেখে ছোটবেলায় আফসোস করতাম। অথচ আমার এত সাধের খুপরি ভাঙ্গা হল। আমি নির্বিকার।
এখানে বসে একসময় বঙ্গবন্ধু নিয়ে মজে ছিলাম। হাতের কাছে যা পেয়েছিলাম তাই পড়েছি। সত্যি বলছি, একদিন এই খুপড়িতে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। আমি সেদিনকার স্মৃতি নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম, "স্বপ্নযোগে বঙ্গবন্ধু"।
আমি আমার গল্প বলছিনা। এটি অনেকেরই গল্প। কেউ গল্প বলতে পছন্দ করে কেউ আবার হজম করতে পছন্দ করে।
আমার একবছরের বারান্দা লাইফে আমি হল প্রভোস্টকে একবারও বারান্দায় আসতে দেখিনি। তিনবছরের হলজীবনে হাউস টিউটরকে খোঁজখবর নিতে দেখিনি। এবছর যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছিল। ডাকসুর ভিপি, জিএস আসলেন। হল প্রভোস্টকে প্রথমবার দেখলাম বারান্দায়। তখন সবার সামনে একটা ছেলে বলেছিল, আমাদের দেখতে আসছেন নাকি ভিপি, জিএস দেখতে আসছেন। স্যালুট জানাই ছেলেটিকে।
বারান্দায় আগুন লাগে, বৃষ্টিতে বিছানাপত্র ভিজে একাকার হয়, ছারপোকার চুমুতে ঘুম হারাম হয়। তারপর প্রমোশন হয় গণরুম ওরফে গেমসরুমে। এরপর তেলের ব্যবহারে দক্ষ হলে রুম পাবে নাহয় বারান্দা।
সব সমস্যা লিখলে একটি উপন্যাস হবে।
সহজ সমাধান দিতে চাই।
সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে হল প্রশাসনের। এখানে সিন্ডিকেট, ব্যক্তি এবং এলাকাকেন্দ্রিক সিট প্রদানের প্রবণতা বিলুপ্ত করতে হবে।
নবীন শিক্ষার্থীদের হলে তুলবে হল প্রশাসন। তাহলে উনারা জানবে যে হলে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আছে। হল অডিটোরিয়ামে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন হতে পারে হল সংসদের উদ্যোগে পরিচয় পর্বের জন্য। আমরা সুসভ্য জাতি। আমাদের সংস্কৃতি হবে সুসভ্য সংস্কৃতি। মধ্যযুগীয় কালচারে গেস্টরুম সংস্কৃতি কেন আমাদের ঐতিহ্য হবে?
মাস্টার্স শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হল ছাড়তে বাধ্য করতে হবে। এই দায়িত্ব পালন করবে হল প্রশাসন।
নিজনিজ রুম নং অনুযায়ী প্রত্যেকটা রুমে
শিক্ষার্থীরা থাকবে। বৈধভাবে থাকার মধ্যে একটা গর্ববোধ আছে। একটা প্রশান্তি আছে। কারো কাছে মাথা নত করতে হয়না। কাউকে তেল দিতে হয়না।
হাউস টিউটররা প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটা হাউসের খোঁজখবর রাখবেন। উনারা পৃথিবীর সর্বসুখি মানুষ। দায়িত্বে অবহেলার জবাবদিহিতায় উনাদেরকে নিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ বিবেচনায় কাউকে হলে রাখা যাবেনা। কারণ, সেই বিশেষ মর্যাদাবান সবাই। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। হল থেকে বের করে দিলে দ্রুত চাকরী হয়ে যাবে। অন্যথায়, চৌদ্দ বছরেও হবেনা।
এই ভাই পলিটিকাল ঐ ভাই ননপলিটিক্যাল এই ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকা চাই। আত্মমর্যাদাবোধ থাকা চাই। আদর্শ থাকা চাই। একজন রাজনীতিবিদ দাবী করে অবৈধভাবে হলে থাকব। আমার জুনিয়রেরা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিবে, "একটা একটা আদুভাই ধর, ধইরা ধইরা বাহির কর।" আমার আত্মমর্যাদা থাকল কই? আমার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকল কই?
এরচেয়ে তো ঢাকা শহরের রাস্থায় থাকা শ্রেয়।
সকল শিক্ষার্থীদের সিটের লোভ এবং অহেতুক ভয়ের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সিট আমার অধিকার। এটি আমাদের আদায় করতে হবে। এই হল আমার। আমি এখানে বুক ফুলিয়ে চলব।
সিট বরাদ্দের প্রসিডিউর কেমন হবে:-
যেহেতু দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থাপনা, অনিয়মের ফলে বেহালদশা তৈরী হয়েছে। সুতরাং পরিবর্তনটা করতে হবে একেবারে রুট থেকে। এক্ষেত্রে দলমত, এলাকা নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা আবশ্যক।
প্রথমেই বৈধ শিক্ষার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। যেটি হল প্রশাসনের কাছে অবশ্যই আছে। দ্বিতীয়ত, বারান্দা, গেমসরুম এবং এখানে সেখানে যারা আছে তাদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।
তারপর হল প্রশাসন, হল সংসদ প্রক্টোরিয়াল টিমসহ শুরু করবে অভিযান একেবারে ১ নম্বর রুম থেকে। চলবে একেবারে ১৮০ নং রুম পর্যন্ত। কাজটি করতে হবে খুব দ্রুত, সুক্ষ্মতা এবং স্বচ্ছতার সহিত। পক্ষপাতিত্ব করতে গেলে কিছুই হবেনা। নিজের নৈতিক অবস্থান দৃঢ় না থাকলে এগিয়ে যাওয়া যায়না।
প্রত্যেকটা রুমে বৈধ শিক্ষার্থীদের যদি রুম নাম্বার ঠিক থাকে তাহলে তো সমস্যা নেই। যাদের রুম নাম্বার অন্যটি অথচ এখানে আছে তাকে সাথেসাথে তল্পিতল্পাসহ তার নির্দিষ্ট রুমে পাঠিয়ে দিতে হবে। যারা অবৈধ তাদেরকে তাকে সাথেসাথে জরিমানা প্রদানপূর্বক বের করে দিতে হবে।
এই খালি হওয়া সিটগুলোতে বারান্দা, গেমসরুমের শিক্ষার্থীদের তুলে দিতে হবে।
নবীন শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন হলে উঠাবে। কোথায় উঠাবে সেটা উনারাই জানে। যদি সিট সংকট হয় তাহলে একবছরের জন্য এসএমহলে এটাচমেন্ট বন্ধ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, অভিযানের দিন তারিখ একসপ্তাহ পূর্বে জানিয়ে দিতে হবে।
বি.দ্র: পুরো প্রসেসিংটা এক সপ্তাহের মধ্যে করতে হবে। এক্ষেত্রে নভেম্বরের কোন একটা সপ্তাহকে এসএমহল সপ্তাহ ঘোষণা করা যেতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০