পর্ব: ০২
প্রিয় শিক্ষার্থীরা! আশা করি তোমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিচ্ছো। আজ তোমাদের জন্য থাকছে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা।
নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পাঠগুলোতে শান্তির জন্য যে চুক্তি করা হয়েছিল বা শান্তির চেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সেই সব চুক্তি গুলো নিয়েই দ্বিতীয় পর্ব সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে প্রথম পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইন। দ্বিতীয় পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের ভার্সাই সন্ধি এবং দ্বিতীয় পত্রের ষষ্ঠ অধ্যায়ের জাতিসংঘ যা সারা বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে কাজ করে। তো আলোচনা শুরু করা যাক!
১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইন
–এই আইনের মাধ্যমে ভারত বর্ষ ১৯০ বছরে ইংরেজ শাসনের ইতি ঘটায়। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু ধারা উল্লেখ করা হলো
১.ব্রিটেনের ভারতীয় উপনিবেশটি ‘ভারতীয় ইউনিয়ন’ এবং ‘পাকিস্তান’ নামে দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ডোমিনিয়ন এর বিভক্ত হবে এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে স্বাধীনতা কার্যকর হবে।
২.ব্রিটেনের রানীর প্রতিনিধির প্রতীক হিসেবে উভয় ডোমিনিয়নে দুইজন গভর্ণর জেনারেল নির্বাচিত হবেন এবং এদের হাতে কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হবে
৩.১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট এর পর থেকে দেশীয় রাজ্যগুলোর উপর থেকে ব্রিটিশ সরকারের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে এবং তাদের ইচ্ছেমতো তারা ভারতীয় ইউনিয়ন কিংবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে।
৪.উভয় ডোমিনিয়ন তাদের নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা পরিচালিত হবে।
ভার্সাই সন্ধি
—১৯১৯ সালের ২৮ শে জুন ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ।এই চুক্তির শর্তাবলী নির্ধারণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি,ব্রিটেন ও জাপান দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। কিন্তু ইতালি ও জাপান সরে দাঁড়ায়। প্রধান শর্তাবলি এখানে দেয়া হলো :
ভৌগোলিক শর্তাবলী
ঐতিহাসিক ন্যায় বিচার নীতি অনুযায়ী জার্মানি লরেন ও আলসাস অঞ্চল এবং খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ সার অঞ্চল ১৫ বছরের জন্য ফ্রান্সকে ছেড়ে দিবে।জার্মানির ডানজিগ বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এই বন্দরটি জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।অস্টো- হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি নামে দুটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়।আফ্রিকা ও দূরপ্রাচ্যের উপনিবেশগুলোর উপর থেকে জার্মানির অধিকার বিলুপ্ত করা হয় ।দূরপ্রাচ্যের উপনিবেশ গুলো জাপানকে দেয়া হয় এবং অপরাপর উপনিবেশ গুলো জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয় ।
ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত ধারা
—যুদ্ধের সব দায় দায়িত্ব জার্মানির উপর চাপানো হয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তা আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হয় একটি কমিশন গঠন করে। কমিশনকে তিন বছরের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয় ।এর মাধ্যমে জার্মানির কাছ থেকে ১৩২ বিলিয়ন স্বর্ণ মুদ্রা আদায় করা হয়। ৫২ % ইংল্যান্ড ২৩% ফ্রান্স ১০% ইতালি এবং বাকি অংশ অন্য মিত্র পক্ষীয় দেশগুলিকে প্রদান করা হয়।
অর্থনৈতিক ধারা
—–রাইন নদীকে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।জার্মানি মিত্র শক্তিকে কয়লা, কাঠ ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে ।এই সন্ধির ২৩৪ ধারায় বলা হয় যে মিত্রশক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত শিল্প দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য জার্মানির বাজারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সামরিক বিষয় সংক্রান্ত ধারা
—–জার্মানির সৈন্য সংখ্যা এক লাখে সীমিত করা হয়। বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা বন্ধ করা হয় ।জার্মানির যুদ্ধ জাহাজগুলোকে ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দেয়ার কথা বলা হয়। জার্মানি কেবল ছয়টি ছোট যুদ্ধজাহাজ ,তিনটি ছোট ক্রুজার, চারটি ডেস্ট্রয়ার, ১২টি সাবমিনের রাখার অধিকার পায়। রাইন নদীর পশ্চিম তীরের ৫০ কিলোমিটার এর মধ্যে জার্মান দুর্গ ও সামরিক ঘাঁটি ভেঙে ফেলার আদেশ দেয়া হয়। হেলিগোল্যান্ডের নৌ ঘাঁটি বিলুপ্ত করা হয়।
জাতিপুঞ্জ ও সংক্রান্ত ধারা
—ভবিষ্যতে যুদ্বিবিগ্রহ রোধ করা এবং আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। বিশ্বের সব স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত ও ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস প্রাপ্ত দেশ এর সদস্য হতে পারবে। বিশ্বের বৃহৎ পাঁচটি দেশ নিয়ে একটি বিশেষ পরিষদ এবং যোগদানকারী সব রাষ্ট্র নিয়ে একটি সাধারণ সভা গঠন করা হবে। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভা নগরীতে জাতিপুঞ্জের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।
জাতিসংঘ
—-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ মানব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিল সেসব সংগঠনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের সম্মেলনের ভিত্তিতে একটি সর্বজনীন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আটলান্টিক সনদ ১৯৪১, ওয়াশিংটন সম্মেলন ১৯৪২ ,মস্কো তেহরান সম্মেলন ১৯৪৩, ডাম্বারটন ওকস ও ইয়াল্টা সম্মেলন ১৯৪৪, এবং ফ্রান্সিসকো সম্মেলন ১৯৪৫–এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ গঠিত হয়।
ছয়টি সংস্থা জাতিসংঘের প্রধানতম হাতিয়ার –
১. সাধারণ পরিষদ
২. নিরাপত্তা পরিষদ
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
৪. অছি পরিষদ
৫.আন্তর্জাতিক বিচারালয়
৬.সচিবালয়
জাতিসংঘের অনেক সাফল্য আছে। এর ব্যর্থতার প্রধানতম যে কারণটি বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন সেটি হচ্ছে পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ক্ষমতা প্রদান। ভেটো শব্দটির অর্থ হচ্ছে আমি মানি না। বিশ্বের যে কোন সিদ্ধান্তের শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতার জন্যই সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায় না।
তাইতো সারা পৃথিবী একসাথে হয়েও ফিলিস্তিন সমস্যা কাশ্মীর সমস্যা এবং সম্প্রতি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। কিছুতেই অশান্তি দূর হচ্ছে না।
———–
লেখক: আলো আরজুমান বানু
সহকারী অধ্যাপক
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ
আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়