মাহমুদুল হাসান:
সোভিয়ত আমল তথা ‘৯০ পূর্ববর্তীতে আফগানিস্তানে যখন মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে ঠিক তখন সে দেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছে। করেছে মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, সংগ্রাম আরো কত কি। কিন্তু কাজতো হচ্ছিল না কোনটাতেই।
এমন অবস্থায় পশ্চিমারা আফগানদের প্রতি সাহায্যের (সার্থ ও ধোঁকাবাজীর) হাত বাড়িয়ে দিল। এমনকি সোভিয়ত বিরোধীদেরকে মুজাহিদ খেতাবে ভূষিত করতেও কোন দিধা করেনি, করেনি কিঞ্চিৎ সংকোচবোধটাও! যাহোক শেষ পর্যন্ত আফগানরা শোষণের পাতানো কল থেকে মুক্তি পেল।
‘৯০ পরবর্তীতে আফগানরা যখন দেশ গঠনে মনোনিবেশ করল আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে অংশীদার হয়ে আসা পশ্চিমাদের প্রভাব ক্রমশই বাড়তে শুরু করল। একটা পর্যায়ে এসে এমন হয় আফগানিস্তানের অধিপতি যেন তারাই!
এবার কথিত ঐ মুজাহিদদের প্রতিবাদের দৃষ্টি পড়ল গিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দিকে। মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি, পাঞ্জাবি পরিহিত ঠুনকো মাওলানাদের কখনো মিষ্টি কথায় আবার কখনো প্রতিবাদী মিছিলে ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে ঠান্ডা করে বুঝানোর কত চেষ্টাইনা করেছেন। কিন্তু কি লাভ? মাওলানা বলে কি তাদের কোন বুদ্ধি সুদ্ধি নাই?
হুম থাকবে না কেন! মাওলানা হোক কিং বা স্যার হোক মাথাতো কারো দুইটা নয়, একটাই। সুতরাং মোল্লা-মুন্সি বলে কাউকে ছোট করে দেখার কোন জো নেই। অবশেষে এই মাওলানারাই পশ্চিমাদের কায়েমী সার্থের পথের কাটা হয়ে দাঁড়াল।
তারা কোনভাবেই যখন এ মাওলানাদের সাথে পেরে উঠছিলেন না…ঠিক তখন মাওলানাদের মোকাবিলা করতে সামনে নিয়ে আসা হয় নতুন হাতিয়ার । যার নাম দেওয়া হয়….আল কায়েদা, তালেবান, জঙ্গি, সন্ত্রাসী রেডিকাল, ফান্ডামেন্টাল ইত্যাদি।
কিন্তু কেন?
এরা না মুজাহিদ ছিল?(’৯০পূর্বে)
অধিকার আদায়ে অকুতোভয় সৈনিক ছিল?
অনুরূপভাবে একই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে কাশ্মির, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশও।
সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞাটা জানার ইচ্ছা সে অনেক আগ থেকেই।জানব জানব করে আর জানা হয়ে উঠে
★শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে বলা হয় সন্ত্রাসবাদ(টেররিজম)।
★যখন কোন মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাকে বলা হয় সন্ত্রাসী(টেররিস্ট) ।
★শোষিত লোকটি যদি হয় মুসলিম, বলা হবে তাকে মুসলিম টেরোরিস্ট(হাসান রুহানি, মুরসি, ইউসুফ আল কারজাবি)
★মুসলিম কোন রাষ্ট্রীয় শক্তি যখন পশ্চিমা শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ন্যায়ের পক্ষ নিবে, তখন তার নাম হবে ইসলামিক টেররিজম(তুরস্ক,ইরান,পাকিস্তান)
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো কোরানের নির্দেশ। সেই নির্দেশ পালনের কারনে মুসলিম যদি হয়ে যায় সন্ত্রাসী তবে বলা যায় ঐপশ্চিমা শোষকরা শুদু আমাদেরকে না, আমাদের কিতাব তথা কোরআনকেও সন্ত্রাসবাদের উৎস বলে প্রমান করতে চাইছে।
অনেক শিক্ষিত পন্ডিত, এতক্ষণে হয়তো অক্সফোর্ড ডিকশনারি খোলে বসে পড়েছেন। এমন কি খুজতেও হয়তো শুরু করেছেন, লেখক কোথায় পেল এমন সংজ্ঞা? কই, নাইতো আমাদের বিশ্ব বিখ্যাত ডিকশনারিতে!
শোনেন আপনাদেরকে বলছি,
“শোষকদের তৈরীকৃত অভিধানে যদি তাদের কর্মের বিপরীত সংজ্ঞা উপস্থাপন করে তখন সেটাকে বলা হতে পারে টেররিস্ট-ডিকশনারী আর আপনাকেও তখন “ফলোওয়ার অব দ্যা টেরোরিস্ট” বলা হতে পারে।অতএব সারাদিন অক্সফোর্ড-অক্সফোর্ড না করে আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। বহুত ফায়দা হবে।”
মুসলিম ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকজন যেখানে তাদের সকল অধিকার নির্দিধায়, নিঃসংকোচে অবিরাম ভোগ করে চলেছে সেখানে প্রতিবাদের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার বোধগম্য নয় আর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ!? সেতো মহাবিশ্বের এক অকল্পনীয় বিস্ময়!
আজ আর বল্লাম না। শুধু এটুকুন মনে রাখাই শ্রেয় যে বর্তমানে মুসলমানরাই যেহেতু সবচেয়ে বেশি নিপিড়ীত, নিগৃহীত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও শোষনের শিকার,তাই বলা চলে টেররিজম মানে ইসলামিক টেররিজম আর টেরোরিস্ট অর্থ ইসলামিক টেরোরিস্ট।
-------------------
লেখক-মাহমুদুল হাসান
শিক্ষার্থী- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
নোট : (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়, এটা লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত)
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০