------
তোমার রূপের নেশায় মুগ্ধ আমি,হয়ে যাই পাগলপারা বাংলার যে দিকে তাকাই না কেনো মুগ্ধতার আবেশনে বাঁধা পড়তেই হয়।
এই চিরযৌবনা বাংলার রূপ কীর্তনে লেখকের চিন্তারাজ্যের কথা ফুরিয়ে যেতে পারে,তবে এই বাংলার চিরাচরিত রূপের মাধুর্যতার একটুও লোপ পাবে না।
কবির দেশে বাংলার রূপের যে কদর তা এদেশের মানুষের নজর এড়ায়নি। জীবনানন্দ দাশের লেখা কিংবা জসীম উদ্দীনের লেখনীতে বারংবার উঠে আসে বাংলা মায়ের মোহনীয় রূপের বর্ণনা।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেহটায় সবদিকে ছড়িয়ে আছে নানান ঢঙে সাজানো অপরূপ সৌন্দর্য্যের মায়াবতী স্থান সমূহ।
ঘুরে বেড়ানোর অভিপ্রায়ে যখন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াই তখন দৃষ্টিগোচর হয় বাংলার নানান রূপের।
তেমনি একটা স্থান নিয়ে দু'কলম লেখার আয়োজনে বসেছি-
সেলফি রোড:-
বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা 'সেলফি' নামক এই প্রত্যয়ের সাথে পরিচিত, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে,মিলনমেলার আয়োজনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সেলফি তোলা।মুঠোফোনের সামনের ক্যামেরার ব্যবহারে যত্রতত্র সেলফি তুলতে পারলেও আপনি এই সেলফি রোডের সন্ধান পেতে বেড়িয়ে পড়তে হবে আপন আঙিনা ছেড়ে।
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হেয়াকো আসলেই আপনি সেলফি রোডের সন্ধান পাবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রাবার বাগানটাকে নিয়ে কথিত সেলফি রোডের আত্মপ্রকাশ।
রাস্তার দু'পাশের সারি সারি রাবার গাছের মাঝ দিয়ে পাহাড়ি আবহে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা একটা রাস্তাই সেলফি রোড।
এখানে আপনি হারিয়ে যেতে পারবেন মুগ্ধকর এক কল্পরাজ্যে যেখানে সবুজের সমারোহে মিলন ঘটবে প্রাণের সাথে সবুজের।
বিখ্যাত বনে যাওয়া রোড:-
যান্ত্রিক নগরে মানুষকে একটু যানজটের চাপ থেকে বাঁচানোর জন্য বর্তমান সরকারের আমলে এই সেলফি রোডের নির্মাণ কাজ হয়।বাইপাস হয়ে রাবার বাগান দিয়ে রাবার ও মালবাহী ট্রাকগুলো চলে যায় রামগড়-বারইয়ারহাট ও হাটহাজারীর দিকে।
জনমানবহীন এলাকা হওয়ার এলাকার মানুষেরা মোটরসাইকেল চালানো শেখার জন্য এটা বেচে নিয়েছিলো,এক দুই করে করে হাজার হাজার মানুষের গমন শুরু হতে থাকে।
এলাকার এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কল্যাণে অল্প সময়ের মধ্যে এই রাস্তার দু'পাশের সৌন্দর্যের চিত্র পৌঁছে যায় ভ্রমণ পিপাসুদের নজরে।
মানুষজনের আনাগোনায় অখ্যাত একটা সাধারণ রোড হয়ে যায় বিখ্যাত ও পর্যটক আকৃষ্ট এক রাস্তায়।
সেলফি রোডের সৌন্দর্য:-
দাঁতমারার ইসলামপুর নামক স্থান থেকে শুরু হয় মূলত এই রোডের সৌন্দর্যের দৃশ্যগুলো। যেদিকে তাকাবেন আপনার চোখ আটকে যাবে সারি সারি রাবার গাছের দিকে।একদম সকালে গেলেই চোখে পড়বে রাবার বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের রাবার গাছের কষ তোলার দৃশ্য।
দুই পাশের গাছ গুলোর ডালপালা গুলো যেন পরস্পর নিজেকে আবদ্ধ করার নেশায় মজে রাস্তাটাকে ছায়ার প্রেমে আবদ্ধ করে রাখে।
বাগান হতে একটু এগিয়ে গেলে যেমন মিলবে চা বাগানের অপরূপ রূপ তেমনি পাশের টিনের ছাউনির ঘর গুলো আপনাকে গ্রাম বাংলার রূপ আস্বাদনে বাধ্য করবে।
দর্শনার্থী ও জীবিকা:-
লোকমুখে এই সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটতে ঘটতে এই রাস্তাটা হয়ে উঠে দর্শনীয় স্থান হিসেবে।
প্রতিবছর ঈদের দিনগুলোতে বাংলাদেশের নানা স্থান থেকে মানুষ এখানে বেড়াতে আসে।প্রতি শুক্রবারে এখানে মানুষের ঢল নামে।
এই রাস্তাকে কেন্দ্র করেই এখন বহু মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়েছে-
চটপটি, ফুসকা ও ঝালমুড়িওয়ালাদের জীবিকার সংস্থান হয় এখানে আগত দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে।
মৌসুমি অনেক ফলও আপনি সহজে এখানে পেতে পারেন। পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মানুষজনদের কথা চিন্তা করে এখানে গড়ে উঠেছে ছোটখাটো দোকানপাটের।
নিজেকে বিলিয়ে দিতে যদি চান সবুজের সমারোহে তবে আপনি আসতে পারেন এই সেলফি রোড়ে।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করবে সুন্দরে।
তবে হ্যাঁ-
এই সেলফি রোডের সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে মজতে পারবেন সেলফি তোলার আয়েশে।
লেখক : ছাত্র, চবি
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০