মো. রাশেদুল ইসলাম
আজি মোর কিসের শুরু-
কিসে আমি হয়েছি পুরু,
পিতা লালিলো মানুষ রুপে
মনুষ্যত্ব গড়িলো শিক্ষা গুরু।
আচ্ছা, যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় বাবা-মায়ের পরে আপনার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশী অবদান কার? বলার অপেক্ষা রাখেনা উত্তরটি হবে 'শিক্ষক'।
জন্মের পর বাবা-মা আমাদের নৈতিক গুণাবলির শিক্ষা দেন আর শিক্ষা ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমে দেশের সম্পদে রূপান্তরিত করার মহান দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন শিক্ষক। শিক্ষকদের শাসনের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক গভীর মমত্ববোধ আর অকৃত্রিম স্নেহ যার উপলব্ধি করতে হয়তো আমাদের অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়!
শিক্ষক হলেন জাতির আলোক বর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যতের রূপকার। শিক্ষকতা হলো এমন একটি পেশা যা অন্যান্য পেশার সৃষ্টি করে। তাই তো হেনরি এডামস বলেছেন, “একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়”। একজন শিক্ষকের ভূমিকা ব্যতীত কোন জাতিই শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতে পারে না। শিক্ষার হাতে-খড়ি যদিও শুরু হয় পরিবার থেকে, কিন্তু তার পূর্ণতা পায় একজন শিক্ষকের হাতে। জাপানী একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, “এক হাজার দিনের পরিশ্রমী অধ্যয়নের চেয়ে একদিন একজন শিক্ষকের কাছে অধ্যয়ন করা অধিক শ্রেয়”। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের প্রতিটি পদক্ষেপে শিক্ষকের গুরুত্ব লক্ষণীয়। সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে মুখ্যভূমিকা পালন করেন। তাই তো শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা।
১৯৬৬ সাল থেকে প্যারিসে শিক্ষকের মর্যাদা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সম্মেলনে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে একটি যৌথ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। উক্ত সুপারিশমালায় শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়াসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, দায়িত্ব ও অধিকার, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছিল।
অবশেষে ১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়। এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘The transformation of education begins with teachers.’ অর্থাৎ ‘ শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষার রূপান্তর শুরু।’
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। আজকের এই মহান দিবসে পরম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই সকল প্রতিভাবান শিক্ষকদের। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঠিক দিক নির্দেশনায় পুরো জাতি আজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০