এ-বঞ্চনার শেষ ক’বে হ’বে
শ্রমিক পায়না ভেবে,
মনের মধ্যে জমে ওঠে ক্ষোভ
প্রতিশোধ তারা নেবে।
বিশ্বায়ন, নগরায়ন ও সভ্যতার চাকা সচল হয়েছে শ্রমিকের হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে। শ্রমিকের শরীরের ঘামের বিনিময়ে শুরু হয় পৃথিবী নামক গ্রহটির অগ্রযাত্রা। অথচ সূচনালগ্ন থেকেই শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, কোথাও কোথাও আবার লাঞ্চিত- অপমানিত। আপনারা আকাশ চুম্বি প্রাসাদে যে মহাকাশ যাত্রার স্বপ্ন বুনেন, সেই আকাশ চুম্বি প্রাসাধটাও ইটের উপর ইট রেখে সজ্জিত করেছে শ্রমিকেরা। ইট-পাথর ও সিমেন্ট-বালির যে রাস্তায় দিয়ে আপনারা দিক থেকে দিগন্তে ছুটে বেড়ান ঠিক তখনও শ্রমিকেরা অধিকার আদায়ে বুকের তাঁজা রক্ত ঝরায় রাস্তায় রাস্তায় কেউ বা আবার নিজ কর্মস্থলে। খেটে খাওয়া মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের হাজার বছরের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও অপমানের অগ্নি শিখার প্রজ্জ্বলোন থেকেই ১৮৮৬ সালের আজকের এই দিনে বুকের তাঁজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছিল অধিকার আদায়ের স্বার্থে।
পহেলা মে’র আত্মত্যাগে
শ্রমজীবী পেলো শিক্ষা,
শ্রমের মূল্য দিতেই হ’বে
এটা নয় প্রাণ-ভিক্ষা।
১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকার শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রমঘণ্টা ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে একটি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। ৩ মে, ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা শিকাগোর হে মার্কেট বাণিজ্যিক এলাকায় জড়ো হওয়া শ্রমিকদের দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছু পুলিশ সদস্য। এমন সময় হঠাৎ আততায়ীর বোমা বিস্ফোরণে কিছু পুলিশ আহত হন এবং কিছু মারা যান। পরে পুলিশও শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ চালালে নিহত হন কিছু শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের হত্যামামলায় অভিযুক্ত করে ছয়জনকে প্রহসনমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।
আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সকল মেহনতি দিন মজুদের, যাদের বুকের তাঁজা রক্ত ও আত্মত্যগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আজকের এই শ্রম অধিকার। যা ভোগ করছে বিশ্বের লক্ষ কোটি খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ।
হাজার হাজার বছর ধরে যে শ্রমজীবী মানুষের শ্রম-ঘামে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তা থেকে সেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীই থেকেছে উপেক্ষিত। কোথাও কোথাও আবার নির্যাতিত। এ বছর শ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে। শ্রমিকের অধিকার হচ্ছে তাঁর মজুরি ও বোনাসসহ অন্যান্য সুবিধা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই স্বাভাবিক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিই অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
শ্রমিক দিবস পালিত হয় দেশ থেকে দেশান্তরে। দেশ থেকে দেশান্তরে শ্রমিক দিবস পালিত হওয়া টাই এই দিবসের মূখ্য বিষয় নয়। অনেকে আবার শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন- শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি করে থাকেন যা শ্রমিক দিবসটি স্মরণ করা মাত্র। বাস্তবে শ্রমিকদের বেহাল দশায় তাদের পাশে পাওয়া বড়ই দূরহ। শ্রমিক দিবসটি তখনি সফল হবে, যখন বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শ্রমজীবীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে।
সর্বোপরি সকল প্রকার মালিক শ্রেণির বাবু সাহেবদের উদাত্ত আহ্বান চিত্তে সবিনয় অনুরোধ করছি যে, শ্রকিকদের সকল প্রকার অধিকার, সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত পূর্বক শ্রমিকদের সাধারণ মানুষের কাতারে স্থান দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
মো. রাশেদুল ইসলাম,
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০