———
সংকটময় এ সময়ে সবচেয়ে সংকটে আছে সমাজের নিম্ন আয়ের এবং দিনমজুর শ্রেণির মানুষ।পত্রিকার শিরোনাম পড়ে অভাগা মানুষরা সামান্য স্বস্তি পায় এই ভেবে, এবার তাদের আর না খেয়ে মরতে হবে না। সরকারি তহবিল থেকে ত্রাণ পাবে তারা এ আহ্লাদে অশান্ত মনে সামান্য তৃপ্তি বয়ে যায়। কিন্তু এ তৃপ্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিল না জনদরদী সেজে থাকা দ্বিতীয় স্তরের খাদক সম্প্রদায়। সরকারি তহবিল থেকে ত্রাণ আসছে ঠিকই কিন্তু তা জনসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছানোর পূর্বেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। নামমাত্র কিছু ত্রাণ বিতরিত হলেও সেসব পাচ্ছে কেবল দলীয় লোকেরা। সরকারি আমলাগণ প্রতি পদে এ মোটাসোটা ত্রাণ থেকে ডানবাম করতে করতে জনগণ পর্যন্ত সামান্যই ত্রাণ পৌঁছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন চালচুরির হীন দৃষ্টান্ত জনগণ পরিলক্ষিত করেছে। যথাযথ ব্যক্তি পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছাতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে তার পোষা আমলাদের কারণে। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে নরপিশাচরা চুরির হীন আমেজে মেতে উঠেছে। করোনা মহামারি অসহায়দের জন্য অভিশাপ হয়ে আসলেও খাদকদের জন্য ঠিকই সহায়ক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এ মুহূর্তে সরকারের প্রয়োজন এসব মানুষরূপী পশুদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। যেখানে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পুরো দেশব্যাপী যথাযথ ব্যক্তিদের ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার নজির রাখছে সেখানে সরকারের এমন ব্যর্থতা অনাকাঙ্ক্ষিত আগামীর বার্তা দিয়ে যায়। ত্রাণ বিতরণে বেশ কিছু দুর্নীতি যেমন দলীয় লোকদের ত্রাণ প্রদান, আত্মীয় স্বজনদের অগ্রে রাখা, ত্রাণকর্তাদের কারচুপিসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলছে প্রায় সবখানেই। খুব কম এমন ইউনিয়ন আছে যেখানে সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা যাচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণে দুর্নীতিকারীদের কঠোর এবং প্রকাশ্য শাস্তি, দল থেকে বহিষ্কার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার তৎপর হবে সেটাই আম জনতার একমাত্র প্রত্যাশা। সংকটকালে প্রকৃত ত্রাণগ্রহীতার কাছে সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য আলাদা ফোর্স গঠন অবস্থার চাহিদা হলেও তা অসম্ভব প্রায়। শুধু সরকারি ত্রাণ বিতরণ নয় ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণ দিচ্ছে সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।
মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করার মোক্ষম সময় এখন। এ সংকটময় সময়ে পাশে না থেকে অধিকার ছিনিয়ে নেয়া অমানুষদের রুখে দিতে আম জনতাকেই সোচ্চার হতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে বাস্তুতান্ত্রিক খাদ্য প্রক্রিয়া মেনে নেয়া যায় না। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বিজয়ী হওয়া জাতির কাছে আরেকটি যুদ্ধ মোকাবিলার সময় এসেছে। সমাজের সকল অসঙ্গতি, অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আম জনতাই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। মহামারি করোনা প্রতিরোধ করতে যেয়ে সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ অভাবীদের বাঁচিয়ে রাখা। এ শ্রেণির মানুষ হয় করোনায় মরবে নতুবা খিদেয় মরবে। এখন সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের,তার জনগণকে কীসে মরতে দিবে। পক্ষপাতদুষ্ট বিচার ব্যবস্থা, শাস্তি বিলম্ব, দুর্নীতিবাজের রাজনীতিক শেল্টার ইত্যাদি জটিলতা কাটিয়ে অপরাধীর যথাযথ শাস্তি হবে অদৃশ্য শক্তির কাছে সে কামনায় ক্ষান্ত হচ্ছে ভুক্তভোগী মানুষ। চোখ বুজে নির্বাক সয়ে গেলে কখনই সোনার বাংলাকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জনতাকে সচেষ্ট হতে হবে।
——
রাশেদুল বারী
শিক্ষার্থী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”