প্রাণিসম্পদ হলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে খামারে গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগী প্রতিপালন যার দ্বারা শ্রম প্রদান এবং মাংস ডিম, দুধ, পশম, চামড়া উৎপাদন করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো প্রাণিসম্পদ যা কৃষিখাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভিশন হচ্ছে 'সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ'।
প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেকাংশে। আয় বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রাণিসম্পদ একটি সম্ভাবনাময়ী ক্ষেত্র ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বাংলাদেশের শতকরা ৮৩.৯ ভাগ পরিবার প্রাণি-পাখি প্রতিপালন করছে এবং মোট জাতীয় উৎপাদের প্রায় ২.৯% যোগায় প্রাণিসম্পদ খাত।
পার্বত্য অঞ্চলে তুলনামূলক জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। এখানে গবাদি পশুপাখির খাদ্যের অনেকাংশেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তবে চাকরি বাজারের দুষ্প্রাপ্যতা এবং মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে খামার কেন্দ্রিক নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। যা স্থানীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডিম, মাংস, চামড়াসহ প্রানিজ খাদ্যের সরবরাহ করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের 'বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন' সম্পর্কিত কোর্সের অধীনে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় যে বার্ষিক লক্ষমাত্রায় কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ ৭৯%, শংকর জাতের বাছুর উৎপাদন ৭৩%, হাস মুরগির টিকা প্রদান ৯৭%, ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ৮০%, মাংস উৎপাদন ৬৯% এবং দুধ উৎপাদন, গবাদি পশুর চিকিৎসা প্রদানে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে।
এছাড়াও যুব উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় গবাদি প্রাণির চিকিৎসা প্রদান এবং হাস-মরগী গবাদি পশু পালনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় যা বেকারত্ব হ্রাস এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হচ্ছে।
তবে ক্রমাগত বনভূমি উজাড় করন, পাহাড়ী ও বন্যভূমিকে ফসল চাষ এবং পশুচারণের ভূমির জন্য রূপান্তর করে বন্য পশুপাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয় ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
পার্বত্য অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নাইক্ষংছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকান্ত কুমার সেন বলেন, পার্বত্য এলাকা তুলনামূলক গহীন এবং পাহাড় বেষ্টিত হওয়াও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয় যেমন ২০১৮ সালের পর থেকে পাহাড় ধ্বসের পরিমাণ বেড়েছে যা প্রাণির খামার সহ সামষ্টিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ, যথাযথ বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেট কানেকশনের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
ফলে প্রাণিজ সম্পদ উন্নয়নে ব্যঘাত ঘটছে।
আশার দিক হলো বাজার চাহিদার যোগান মিটাতে এগিয়ে আসছে তরুণদের একাংশ যাদের উদ্যোগ দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দেশের প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করছে।
প্রাণি-পাখির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে আন্তর্জাতিক এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহকে সম্পৃক্তকরণ প্রয়োজন।
বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষক ও গ্রামীণ মহিলাদের জন্যে প্রাণি-পাখি প্রতিপালনের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
পাহাড় ধ্বস রোধে বনভূমি সংরক্ষণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ -নেট কানেকশনের অগ্রগতিসহ সার্বিক কার্যক্রম প্রতিফলিত করতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
পার্বত্য জেলাসহ সমগ্র দেশে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প সৃষ্টি এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দ্বারা ২০৩০ সালের যে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে যুগান্তকারী উন্নয়ন সম্ভব।
তানবীরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০