ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ঢাকা শহর থেকে কুকুর স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২৬ অপরাহ্ণ

Link Copied!

কাজী এইচ হক রায়হান

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি ৩০ হাজার কুকুর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপে যথারীতি সচেতন মহল দুভাগে বিভক্ত।
মেয়র সাহেবও একটা পক্ষে অবস্থান করে বলেছেন, কুকুরকে বিস্কুট না দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে এতে সমস্যা সমাধান হবে। একজন মেয়র সাহেবের এরকম দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সচেতন মহলের কাছে বেশ কটু টেকেছে।

রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় কুকুরের কামড়ে বা আঁচড়ে গত ৯ মাসে রাজধানী ও এর আশপাশে জলাতঙ্ক রোগে ১৩ জন মারা গেছেন। সারা দেশে গত পাঁচ বছরে এ রোগে মারা গেছেন ৪৪২ জন। এসব বিষয়কে এলার্মিং ভেবে হয়তো দক্ষিণ সিটি কুকুর সরানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পদক্ষেপ দেখে আমার ইতিহাসের একটি ঘটনা মনে পরে।

১৯৫৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান মাও সেতুং চীন থেকে সব চড়ুই পাখি মেরে সাফ করতে নির্দেশ দেন। অভিযোগ চড়ুই পাখিরা বেশি শস্য খেয়ে চীনাদের খাদ্যসংকট ঘটাচ্ছে। ব্যস, নেতার নির্দেশ পেয়ে চীনজুড়ে আবালবৃদ্ধবনিতা মিলে চড়ুই হত্যা ক্যাম্পেইনে কোটি কোটি চড়ুই হত্যা করে। এর পরের বছরেই অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে চীনজুড়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে এবং মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই মহাদুর্ভিক্ষ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ৩ বছর স্থায়ী হয়েছিল। আগে কোটি কোটি চড়ুই পাখি প্রতিদিন কীট-পতঙ্গ খেয়ে জমির ফসলকে রক্ষা করত। তখন তো চড়ুই নেই, তাই কীট-পতঙ্গের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য সম্পর্কে অজ্ঞ চীনা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে চড়ুই আমদানি শুরু করে; কিন্তু শিকারি চড়ুই শূন্যতায় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া কীট-পতঙ্গরা সব ফসল খেয়ে সাবাড় করল। তারপর? তারপর মহাদুর্ভিক্ষে না খেয়ে ৩ কোটি লোক প্রাণ হারাল।

এখানে যদিও কুকুর আর চড়ুইয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন তবু ইকোসিস্টেম ঠিক রাখতে প্রতিটা প্রাণী সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের সাথে কুকুরের সম্পর্ক প্রায় ১৫ হাজার বছরের পুরোনো। কুকুররা প্রজনন ঋতুতে একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজিত থাকে বলে হিংস্র দেখায়।তাই এই সময়টা এলেই সবাই ভয়ে কুকুর নিধনের পক্ষে কথা বলে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিউমেন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা শহরের কুকুর জরিপ করে। তাদের হিসাবে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৭ হাজার ৯টি কুকুর আছে। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ২৪ হাজার ৩৮৪ ও ডিএসসিসি এলাকায় আছে ১২ হাজার ৬২৫টি কুকুর।

অন্যদিকে ঢাকার থেকে কম বসবাস করা নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লক্ষ ২৫ হাজার কুকুর, বার্লিনে ১ লক্ষ এবং তেল আবিবে প্রায় ৩৫ হাজার কুকুর যেখানে কেবল মাত্র ৪ লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের চেয়ে কম মানুষ বসবাস করা শহরগুলো কিভাবে এতো কুকুর নিয়ে মানিয়ে আছে?

তারা নিয়মিত ভ্যাকসিন এবং নিউটার-স্পা কার্যক্রম চালায় যাচ্ছে স্ট্রে ডগ গুলোর জন্য। যেখানে ঢাকায় এটা নিয়মিত হচ্ছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘অভয়ারণ্য’, হিউমেন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ও ওয়ার্ল্ড ফুড অর্গানাইজেশনের অর্থায়নে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ১০ হাজার কুকুর বন্ধ্যাকরণ করে ও টিকা দেয়। ২০১৫ সালে এই কর্মসূচি বন্ধ থাকে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে অভয়ারণ্য আবার কার্যক্রম শুরু করে। ডিএনসিসির এলাকায় তাদের এই কর্মসূচি চলছে। ওই সময় ডিএসসিসি এ কাজে আগ্রহ দেখায়নি, নিজেরাই টিকা দেওয়া ও শুধু পুরুষ কুকুর বন্ধ্যাকরণের কাজ হাতে নেয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

তাই এরা সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে কুকুর সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিক সরিয়ে ফেলা না একরকম মেরে ফেলা। ঢাকার সবগুলো কুকুর হেলদি। এদের অন্যত্র নিয়ে গেলে খাবার দিবে কে?কোন এলাকায় নতুন দশটা কুকুর রেখে আসলে ঐ এলাকার মানুষ এদের সাথে সহজে মানিয়ে নিবে না,খাবার দিবে না। কারণ গ্রাম এলাকার মানুষ ওতো কুকুরবান্ধব না। এভাবে আস্তে আস্তে কুকুরগুলোকে সাইলেন্ট কিলিং করা হবে।

কুকুর হলো দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এরা এরা চারপাশের ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিষ্কার রাখে। ইদুর চিকা ইত্যাদির উৎপাত থেকে রক্ষা করে শহরকে। একটা সুন্দর শহর গঠনে কুকুরের বিকল্প নেই। কুকুর কমে গেলে ময়লা আবর্জনা থেকে নানান রোগের উৎপাত হতে পারে। তিনদিনে শহর ভাগাড়ে রুপ নিবে।

প্রতি কিলোমিটারে নিউইয়র্কে বসবাস করেন ১০ হাজার মানুষ,অন্যদিকে ঢাকায় এ সংখ্যাটা ৪৮ হাজার যা ঘনত্বের দিক থেকে প্রথম।
কিন্তু কখনো কি আমরা মানুষ সরানোর প্ল্যান করেছি? এ পৃথিবী সবার,ইকোসিস্টেমে যে যেখানে থাকার সেখানেই অবস্থান করবে এটাই প্রকৃতি। নাহলে প্রকৃতিতে ব্যাঘাত ঘটে চিনের মতো ভয়াবহ বিপর্যয় যে আসবে না তার নিশ্চয়তা নেই। আর গবেষনা বলে,কুকুর সরিয়ে ফেললে কুকুরের প্রজননের হার বেড়ে যায়,তখন কয়েক বছরেই কুকুরের সংখ্যা অনেকগুন বেড়ে যাবে।

যাইহোক,সিটি কর্পোরেশন যে কুকুর সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাংলাদেশ এ্যানিমাল এক্ট ২০১৮/১৯ এ স্পষ্ট করে বলা আছে কোন প্রাণী রিলোকেট করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এখন তারাই এখন কিভাবে সেই আইন ভাঙছে সেটাই বুঝে আসার মতো নয়।

শিক্ষার্থী: ফিন্যান্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

140 Views

আরও পড়ুন

পাঠকের অনূভুতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ