শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট:
১২ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায় আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে সেদিন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা গ্রামের সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল শত শত মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সাথী সরকার ও তাঁর স্বামী জর্জি সরকারও। সূর্যোদয়ের কিছু আগে সাথীর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক শিশু। ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার মধ্যে নতুন প্রাণের বারতা বয়ে আনা শিশুটির নাম রাখা হয় ‘সিডর’। সেই সিডর সরকার আজ ১১ পেরিয়ে ১২ বছরে পা দিল। খুলনার দাকোপ উপজেলার হরিণটানা গ্রামে হোম অব লাভ নামের একটি মিশনারি বোর্ডিং স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে।
ওই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয় ৫৫ হাজার মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮৫ লাখ মানুষ। উপকূলীয় এলাকার অন্য পরিবারগুলোর মতো সিডরের পরিবারকেও এখনো অভাব অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে। গত বছর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘সিডরের সংগ্রাম চলছে’ দেখে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন এবং কয়েকজন মানবদরদি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ান। মোংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের সহায়তায় একটি টিনের ঘর পায় পরিবারটি। সিডরের দাদা রঞ্জিত সরকারের চিকিৎসার খরচ মেটাতে ঋণগ্রস্ত সিডরের বাবা গত বছরই ঘরটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। পরে জর্জি একমাত্র সম্বল তিন কাঠা জমির ওপর নতুন করে ঘর তোলেন। গতকাল বুধবার সকালে সিডরের বাড়ি গেলে তার দাদি রিভা সরকার বলেন, জর্জি সাগরে মাছ ধরতে গেছেন। সাথী ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।রিভা সরকার বলেন, পড়াশোনার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ায় সিডরকে মিশনারি বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়েছে।
অর্থাভাবে সিডরের জন্য খাবারদাবার, কাপড় কিনে দিতে পারেন না তাঁরা। দাকোপের হরিণটানা গ্রামের হোম অব লাভ-এ মিশনের বোর্ডিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মাইকেল হালদার বলেন, সিডরের পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাকে নিয়ে এসেছেন। বোর্ডিং স্কুলটিতে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পাঠদান এবং মৌলিক সব চাহিদা পূরণ করা হয়। কিছুক্ষণ পর সিডরকে ডেকে আনা হয়। সে বলে, ‘পড়াশোনা করে অনেক বড় হব।’ বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না এ প্রশ্নে মুখ ভার করে জবাব দেয়, ‘না’। তারপরই বলে ওঠে, ‘বড়দিনে যাব।**ছবি সংযুক্ত আছে। ##