মাসুদুর রহমান-
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে টিউবওয়েলের পানি খেয়ে প্রায় ২৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রবিবার রাত ৮ টা থেকে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমি থেকে ১৬ জন ও বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সোমবার সকালে ৫ জন এবং মঙ্গলবার দুপুরে ২ জন শিক্ষার্থীকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে । অসুস্থ শিক্ষার্থীরা সবাই বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৬ জনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে , ২ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১ জনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে । তবে বিষয়টি নিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা চালু রয়েছে । তবে বিষয়টি রহস্যজনক এবং টিউবওয়েলের পানিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়েছে কিনা তদন্তের মাধ্যমে খোজ নেওয়ার দাবী জনান স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল ।
খোজ নিয়ে জানা যায় , বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পার্শবর্তী চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করে আসছে। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর ) রাতে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিতে কোচিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বিদু্যৎ চলে যাওয়ায় অন্তত ১৫/২০ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের টিউবওয়েলের পানি পান করে । তারপর থেকেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থীকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি ও বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় । এ কোচিং সেন্টারে ছেলে-মেয়ে উভয়ই লেখাপড়া করলেও শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীরা ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় এলাকায় চলছে নানা জল্পনা কল্পনা । এই শিক্ষার্থীদের উপসর্গ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে । তারা হলেন , বগারপাড় এলাকার শফিকুল ইসলাম এর মেয়ে চৈতি , ফেরদৌস এর মেয়ে রাখি , লিমন তরফদারের মেয়ে তিথি ,আল আমিনের মেয়ে আশা , ফজলুল হকের মেয়ে অন্তরা , আঃ খালেকের মেয়ে নাদিয়া , লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য ,আলমাছ এর মেয়ে তর্জনী , টুকন মিয়ার মেয়ে তমা ,তোজাম্মেল হক এর মেয়ে মেঘলা , এছাড়াও জান্নাতুন ফেরদৌস, তানিয়া। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখে ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে এবং পরিচালক কামরুজ্জামান লিটন নিজেও অসুস্থ হয়ে সোমবার দুপুর থেকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে । এদিকে সোমবার বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান চলাকালীন সময়ে আজিজল এর মেয়ে ৬ ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আখি ,নুরুল ইসলাম মেয়ে নিরা ,আমিনুর এর মেয়ে আরফিন , ইমরানের মেয়ে নুসরাত এবং মঙ্গলবার দুপুরে বগার পাড় এলাকার হারুন অর রশিদের মেয়ে মিতু , মোনারপাড় এলাকার বাদাহর মেয়ে বিথিও অসুস্ত হয়ে পড়লে তাদের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
৬ ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আখি জানান ,পানি আর ঝালমুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম । পায়ে বল পায়না মাথা ব্যাথা করতেছে । শিক্ষার্থী আরফিন জাহান জানায়, কোচিং সেন্টারে এসে পানি খাওয়ার আধা ঘন্টা পর বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট
দেখা দেয়। এরপর শরীর জিমিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, গত রবিবার থেকে প্রায় ২০ জনের মতো রোগী হাসপাতালে এসেছিল। আমাদের খাতায় ভর্তি আছে প্রায় ১৭ জন । এ ছাড়াও কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে । এদের মধ্যে প্রায় ৯জনকে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করেছি । বাকী সবাই মোটামোটি সুস্থ আছে । তিনি আরো বলেন , আমরা সবাইকে উদ্বিগ্ন না হয়ে শান্ত থাকার জন্য বলব । সবার মনে সাহস রাখার জন্য বলি ।
এদিকে শিক্ষার্থী মিতুর বাবা জানান, আমার মেয়ে আজ বিদ্যালয়ে যায়নি৷ ওরও একই সমস্যা হল।
চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামরুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। টিউবওয়েলের পানি খেয়ে কেনো অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমি কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না। আর তা ছাড়া সবাই আমার কোচিং এর শিক্ষার্থী না ।
এদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জানান , হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে । স্বাভাবিক হয়ে কয়েকজন বাড়ী চলে গেছে । বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০