বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২২ আগস্ট) সকালে তাকে মারধর করেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা ভ্যালীর আওতাধীন কালিঘাট চা বাগানের শ্রমিকরা।
জানা গেছে, সোমবার সকালে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা ভ্যালীর আওতাধীন কালিঘাট চা বাগানে যান বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দ। তিনি আন্দোলনরত শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানাতে আসেন। এসময় চা-শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করেন। পাশাপাশি তারা চা বাগানের ট্রাকও আটকে দেয়।
এ বিষয়ে একজন চা-শ্রমিক জানান, আমাদের আন্দোলনে নামিয়ে দাবি আদায়ের আগেই তারা সরে গেছেন। তাই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জেসমিন আক্তার বলেন, আমরা শুনেছি পঙ্কজ দাদাকে মারধর করা হয়েছে। শুধু তাকে নয়, বিভিন্ন জায়গায় যারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে কাজে যোগ দিতে বলছেন, তাদেরই ধাওয়া দেওয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে। আমরা কিন্তু বের হতে পারছি না। বের হলেই মার খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আন্দোলনের বিষয়ে কালিঘাট পঞ্চায়েত সভাপতি অবাং তাতি বলেন, আমরা তাদের নেতা বানিয়েছি। কিন্তু তারা যদি আমাদের সমস্যা না বুঝেন তাহলে তাদের নেতা থাকার দরকার নেই। আমাদের মাঠে নামিয়ে তারা উধাও হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী টিভিতে এসে ৩০০ টাকা মজুরি হবে— এই ঘোষণা দিলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব। নয়ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
মৌলভীবাজারে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে পুরোনো বেতনে কাজে যোগদান করার ঘোষণা করা হলেও সিলেটের মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জসহ অনেকগুলো বাগানের চা শ্রমিকেরা কাজে ফেরেননি। তারা ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত’ মানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, রবিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ সেই বৈঠক শেষ হয় রাত ৩টার দিকে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, সোমবার (২২ আগস্ট) থেকে শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে নিজেদের দাবি দাওয়া জানাবেন তারা। কিন্তু গভীর রাতে শেষ হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ সকালে জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন চা শ্রমিকরা। বিভিন্ন ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতারাও কেন্দ্রীয় নেতাদের ওই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির ওপরই অনাস্থা প্রকাশ করছেন ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে তারা ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।