রফিকুল ইসলাম জসিম
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইলো অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। মায়ের প্রতি আবেগ নিয়ে এদিন সন্তানেরা মাকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন, ভালোবাসেন। আর সবার মতো মনিপুরি মেয়েরাও তাদের মায়েদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। মাকে নিয়ে লিখছেন। কেউ কেউ মাকে মিস করছেন। বিশ্ব মা দিবসে মনিপুরি মেয়েদের মায়েদের নিয়ে নিউজ ভিশনের এই আয়োজন-
শানারেই দেবী শানু
লেখিকা ও অভিনেত্রীঃ
শেরাম চন্দ্রা দেবী।আমার মা,জন্মদাত্রী।আর আরেকজন আমার নতুন জন্মের মা লিওনিটা গোমেজ ।যাদের আলো ছায়ার মায়ায় বেড়ে উঠছি।মাকে নিয়ে কত গল্প থাকে সব সন্তানের।আমারো আছে। আমার মা চন্দ্রা দেবী সহজ সরল এক অদ্ভুত মায়াবী মানুষ।আমার আজকের অবস্থানের পিছনে মায়ের অদম্য আত্মবিশ্বাস ও স্নেহগুলোই সাহস হয়ে থেকেছে সবসময়।ছোটবেলায় মা হাতের আঙুল কামড়ে,পায়ের ধূলো কপালে আলতো মাখিয়ে কুসংস্কার পালন করতেন যাতে তার ফর্সা টুকটুকি মেয়ের নজর না লাগে।মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।ছোটবেলা থেকে শুধু ফিসফিস করে কানের কাছে এটুকুই বলতেন,”মা রে আমি বেশী কিচ্ছু চাই না শুধু একটু ঠিকমত মন দিয়ে পড়াশুনা কর আর ভালো মানুষ হও”।জানি না মায়ের কথা রাখতে পেরেছি কিনা তবে চেষ্টা করে যাই প্রতিনিয়ত।
জানি বাবা মাকে তাদের মনে কষ্ট দিয়ে জীবনের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তবু আমি ঠিক জানি মায়েরা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না।কারণ আমি নিজেও একজন মা।যেদিন থেকে মা হয়ে উঠেছি দিন দিন,মাকেই মনে পড়েছে সবসময়।খুব দুর্বল মূহূর্তে মায়ের ঘ্রাণের কাছেই সাহস খুঁজতে মন চেয়েছে।কিছু কঠিন বাস্তবতার বেড়াজালে হয়ত মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত আমি,তবু দূর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাগুলো তোমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম মাগো ভালোবাসি, ভালোবাসব।
আমায় পারলে ক্ষমা করে দিও..
তোমার অদৃশ্য আশীর্বাদ গুলো আমায় সবসময় আগলে থাক। আর আমার এই মা লিওনিটা গোমেজ প্রতিনিয়ত তার মায়ার চাদরে জড়িয়ে আমার এক মায়ের অভাববোধ পূরণ করে যাচ্ছেন।মা,তোমাকেও ভালোবাসি।মায়ের বেলায় আমি খুব সৌভাগ্যবতী জানি,মায়েরা আমাকে পরম মমতায় আগলে রেখেছে,রাখছে।শুধু স্থান ও সময় পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ব মা দিবসে সকল মাদেরকে প্রণাম,শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
রওশান আরা বাঁশি
কবি ও নারী উদ্যোক্তা ঃ
আজ মা দিবস। ফেসবুকে সবাই মাকে নিয়ে লিখালেখি করছে। ভাবলাম আমিও বলি কিছু কথা যা সহজে বলা হয় না কিংবা বলার সুযোগ মেলে না।খোলা চিঠি রুপেই তবে হোক প্রকাশ।
মা, অনেকদিন হলো তোমার পরশ পাই না। তোমার কথা মনে পড়তেই অজানা কিছু শীত মুড়িয়ে দিলো আমায় । তোমাকে নিয়ে এক পাহাড়সম উঞ্চ কমল সুখস্মৃতি মনে জমা রয়েছে ।প্রতিদিন তোমাকে নিয়ে ভাবি। কত শত সুখস্মৃতি মনের অলিগলিতে ঘুরপাক খায়। তোমার কিছু মজার শাসন এখনো চোখ বুজলে ঠোঁটের কোনে এনে দেয় মিষ্টি হাসি। আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। ছয় ভাই বোনকে সামাল দিয়ে তোমাকে সংসারের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি। একবার তোমার ডাকে সারা দেইনি বলে বড় আপা ও আমাকে খাটের নিচে সেই যে ঢুকিয়ে রেখেছিলে আর আমরা আবিষ্কার করলাম দুষ্টুমি করার নতুন নিরাপদ জায়গা। মা তুমি আমার অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে আছো। তোমার ভালোবাসা আমার পথ চলার পাথেয়।
আমার পৃথিবী জুড়ে আছো তুমি।তোমাকে ভালোবাসি মা। সুস্থ থাকো।তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি। আজ মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি রইলো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।
ডাঃ রোমানা আক্তার শিউলী
চিকিৎসক ও লেখিকাঃ
সুন্দর এই পৃথিবীতে সবচেয়ে পবিত্র একটি নাম মা। মায়ার এই মা শব্দের সাথে অন্য শব্দের তুলনা হয় না। আমার মায়ের হাসি, মন উজাড় করা ভালবাসা আমার প্রতি ও তার পরিবারের প্রতি। সত্যি মা-এর মতো আপনজন এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই। আমার মা সবসময় পরিবারের কথা অনেক চিন্তা করতো। মা' কতো কষ্ট করে কতো ব্যথা সর্য্য করে দশ মাস দশ দিন পেটে রেখে আমাকে জন্মেছিলেন আজ উপলব্ধি করি তার কষ্টের কথা,তার অজান্তে কতটা কষ্ট দিয়েছি 'মা' তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমার মতো আপন পৃথিবীতে কেউই নাই। মা তুমি আমার সব আজ তুমি নেই তাই অনেক বেশি মনে পড়ে তোমাকে ।
একদিন দেখি নির্জন রাতে মা কান্না করে আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে দোয়া করেছিলেন তখন আমি শুনতে পেয়ে, আমারও খুব কান্না আসছিলো।
মা আমাকে অনেক বকা দিত,আমি যখন পড়ায় ফাঁকি দেয়,যখন একটু দুষ্টুমি করি তখন তোমার খারাপ লাগতো। কিন্তু মা যে আমার ভালোর জন্য বকেছিল আমার ভবিষ্যতের জন্য। ক্ষমা কর মা আমাকে, খুব ভালবাসি তোমাকে মা । সব ভালো জিনিস টাই আমাদের খাওয়াতে, অল্পটুকুই তুমি খেতে তা-ও লুকিয়ে আমরা দেখতাম না। মাফ করে দিও মা আমাকে। মা তুমি এতো ভালো কেন, কেন আমাদের জন্য এতো কষ্ট করলেন.... কেন?
একদিন আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অনেক কষ্ট লাগতো মায়ের জন্য। হসপিটালে ভর্তি করলাম, রোগ ধরা পরছিল না। অনেক টেস্ট করার পর একদিন ধরা পড়ল মায়ের নাকি ফুসফুসে ক্যানসার। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলামনা। ডাক্তার প্রথমে আমাকে জানালেন, কাকে কি বলব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলামনা চোখের জল আটকানো গেলনা অনবরত জল পড়তে লাগলো থামছিলই না। কেন আল্লাহ মাফ করো আমাদের আর মুখে ভাষা ছিলনা। আমি যদি পারতাম মাকে বাঁচাতে....। বাবা,ভাই, বোন সবাই কাঁদছে। আড়ালে গিয়ে কান্না করতাম লুকিয়ে। মা বলতেন কি হয়েছে? আমার মা কে আমি তখন বলেছি কিছু না ছোট একটা টিউমার বুকে ভালো হয়ে যাবে ডাক্তার বলেছে আমি তখন প্রেকটিসে ছিলাম, কিছুই করার ক্ষমতা ছিলো না আমার। মাকে হারানো কতটা যন্ত্রনা আমি ছাড়া কেউ জানেনা।
মা বলতো অনেক যন্ত্রনা হচ্ছে বুকে, আমার তখন মাথার উপর আসমান ভেঙে পড়ছিল। মনে হয়েছিল আমি সান্তনা দিয়ে বলতাম ভালো হয়ে যাবে কিছুই হবে নাতো। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। ডাক্তার বললো বাড়িতে নিতে
কে বাড়িতে আনলাম। তারপর মা বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতেন, আর বলত আমার মনে কেমন করতেছে, আমি আর শক্তি পাচ্ছি না আমি মনে অই আর বাঁচবো না। বাবা অঝোরে কাঁদছিলেন, আমিও। মাকে বাবা বলতো চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।মা বলতো আমার কোন চিন্তা নাই আমার ছোটো মেয়েটাকে দেখ সবাই মিলে আমরা সবাই কাঁদছিলাম। আমি মায়ের সাথে ঘুমাতাম মা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতেন।
আজকে অনেক মনে পড়ে মা তোমাকে, অনেক ভালোবাসি তোমায়। এতো কষ্টের মধ্যে ও আমার একটু মাথা ব্যাথা হয়েছিল বলে টিপে দিত। মা আমার কোথায় হারিয়ে গেলে। কেউ তো আর এরকম ভালোবাসে না এখন। খুব মনে পড়ে তোমাকে মা। আজ আমি ডাক্তার, আমার ব্যর্থতা নিজের মাকে নিজ হাতে একটুখানি চিকিৎসা দিতে পারিনি, তোমায় খুব বেশি মনে পড়ে মা। কোন এমন দিন নাই তোমাকে মনে পড়েনা।
ক্ষমা করো মা আমায়। মা তুমি মহান।
সবার মা ভালো থাকুক আর মাকে অবশ্যই ভালবাসবেন, কষ্ট দিবেন না....।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০