অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনঃ
ধাধার চরে শুধু ফসলই উৎপাদন হয় না। ফসলের পাশাপাশি অনেক কৃষক চরের মাঝে বিভিন্ন জাতের গবাদিপশুও লালন- পালন করে থাকেন। অনেকে আবার গরু -ছাগলের খামারও গড়ে তুলেতেছেন। গরু পালন করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। ধাধার চরে সারা বছরই দুর্বা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রচুর ঘাস জন্মে। এসব ঘাস পশুদের পছন্দের খাবার। কৃষকের গরু বেড়ে উঠে ও মোটাতাজা হয় ধাধার চরের গজিয়ে উঠা নতুন নতুন ঘাস খেয়ে।
ধাধার চরের রাখাল বালকেরা সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহের জন্যে। নদীর ওপারে বিভিন্ন গ্রামের ছেলে ওরা। ঘুম থেকে উঠেই এসব রাখাল ছেলেরা খাঁচা আর কাঁচি মাথায় করে চরে ঘাস কাটতে বেড়িয়ে পড়েন। ঘাস কাটতে গিয়ে ওরা সমস্ত চর ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় ওরা আবার বাড়ি ফিরে যায়। ধাধার চরের প্রকৃতি, দুর্বা ঘাস ও গবাদিপশুর সাথে ওদের পরম আত্মীয়তা এবং মিতালী। এভাবেই ওরা হয়ে উঠে ধাধার চরের রাখাল রাজা।
পল্লী কবি জসীমউদ্দিন এই রাখাল বালকদের নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবিতার নামই ‘রাখাল ছেলে ‘৷ সে কবিতায় তিনি লিখেছেন, “রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও, বাঁকা গায়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও। কবির সেই কবিতার সাথে মিলিয়ে বলা যায়, -‘ধাধার চরের রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! একবার ফিরে চাও, ধাধার চরে খাচা মাথায় কোথায় চলে যাও’। ধাধার চরের রাখাল ছেলে হয়তো কবির মতো বলে উঠবে, ” ওই যে দেখ পশ্চিম পাড়ে সবুজ ঘেরা গা, লিচু পাতা, কলা পাতায় দোলায় চামর শিশির ধোঁয়ায় পা, সেথায় আছে মাটির ঘর ছন পাতায় ছাওয়া, সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা—-। কাজের ফাঁকে ফাঁকে
ধাধার চরের রাখাল ছেলেরা দল বেঁধে এক সাথে খেলা করে। আবার কেউ কেউ মনের সুখে অথবা দুঃখে বাঁশের বাঁশি বাজায়। দুরন্ত এই রাখাল ছেলেরা ধাধার চরের প্রাণ। ওরা ধাধার চরের রাখাল রাজা।
ধাধার চর দুটি নদীর মোহনায় অবস্থিত। এ কারণে ধাধার চরে গরু চুরির ঘটনা নতুন নয়। চোরের উপদ্রব রোধে চরে রাত্রি যাপন করে রাত জেগে গবাদিপশু পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক।
শামসুল হুদা লিটন
সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক।