রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে দুই দিনব্যাপী ২৬তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
তীর্থোৎসব মূল আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বলন করে আলোক শোভাযাত্রা। প্রায় ৫০ হাজার ক্যাথলিকের মোমের আলোয় আলোকিত হলো গারো পাহাড়। এ উৎসবে সারা দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ অন্য ধর্মাম্বলীরাও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন।
সিনোডাল মণ্ডলীতে মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ কর্মে ‘ফাতেমা রানী মা মারিয়া’ এই মূল সুরে তীর্থোৎসবে যোগ দিয়েছেন প্রায় অর্ধলক্ষ দেশি বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত।
এ ছাড়াও ছিল খ্রীষ্টযাগ, নিশি জাগরণ, জীবন্ত ক্রুশের পথ, মহা খ্রীষ্টযাগসহ নানা অনুষ্ঠান।
পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় শুরু হয় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ শেষে রাত ৮টার দিকে আলোক শোভাযাত্রা, ১১টার দিকে আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, ১২টার দিকে নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তি হয়।
এবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মেঘালয় ও তুরা ধর্ম প্রদেশের পাল পুরোহিত ফাদার টমাস মানখিন।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তীর্থযাত্রা, ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব। ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লিটি। ১৯৯৮ সাল থেকে বার্ষিক তীর্থস্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ ১৯৯৮ সালে এ ধর্মপল্লিকে ‘ফাতেমা রনীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই পালন করা হচ্ছে তীর্থ উৎসব।
শুধু শেরপুর নয়, দেশ বিদেশের প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থী অংশ নেন তীর্থযাত্রায়।
নেত্রকোণার বিরিশিরি থেকে তীর্থে যাওয়া রোবলা সাংমা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি মা ফাতেমা রানী এখানে জাগ্রত আছেন। এ জন্য আমরা দূরদূরান্ত থেকে আসি। উনাকে ভক্তি করি, সম্মান করি। আমাদের মনের ইচ্ছা ও বাসনা মানত করি। সেগুলো পূরণ করেন তিনি।’
ময়মনসিংহের হালুয়া ঘাট থেকে যাওয়া মন্দিরা বলেন, ‘মা এখন বেঁচে নেই। আমাদের মা আমাদের জন্য আসতো। আমরা তিন বোনই আসছি আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রার্থনা করতে। এখানে এলে মা মারিয়া সবার আশা পূরণ করে, তাই আমরা অনেক দূর থেকে আসছি।’
শেরপুরের ব্রিজেট বলেন, ‘আমরা মা মারিয়ার কাছে নিজেদের পরিবার ও দেশের শান্তি কামনায় প্রার্থনা করি। যেন আমরা সবাই একত্রে ভালোভাবে শান্তিতে থাকতে পারি।’
পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফলের জন্য তীর্থে প্রার্থনার জন্য যান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী সুমন্ত বলে, ‘আমি মা-বাবার সঙ্গে এসেছি প্রার্থনার জন্য। যেন সামনের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারি।’
তীর্থোৎসব আয়োজকরা জানান সফলতার কথা।
তীর্থোৎসব সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারি বলেন, ‘এবারের তীর্থোৎসবে ধর্মীয় চেতনায় দেশি বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করেছিল। আমাদের এ আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে সব কিছু সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য আমরা খুবই আনন্দিত।’
তীর্থোৎসবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বলেন, ‘এ উৎসবে সতর্কতা ও শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছে আমাদের টিম। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩০০ সদস্য নিয়োজিত ছিল। চার স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ছিল।
‘এ ছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০