জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার:
চাঞ্চল্যকর যুবলীগ সভাপতি প্রভাষক উদয় শংকর হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মণিরামপুর উপজেলার ভবদহ বিলের মাছের ঘের থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে নিহতের মা ছবি রানী বিশ্বাস এঘটনায় থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং ১৪, তারিখ ১৬/১০/২৩। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এই হত্যাকান্ডকে ঘিরে লোকমুখে ঘুরেফিরে উঠে আসছে মণিরামপুরের আলোচিত এক জনপ্রতিনিধির নাম। ফলে মামলার ভবিষ্যত কোনদিকে গড়াবে তা নিয়েও জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মন্তব্য, টেকারঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেজ্ম্যানেজিং কমিটি ও আলোচিত এক জনপ্রতিনিধির সাথে মনোমালিন্য শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রভাষক উদয় শংকর একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ ছিলেন। তিনি স্কুলের সভাপতি হতে না চাইলেও তাকে প্রভাবিত করে সভাপতি করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ে মাত্র ২ মাসের মধ্যেই নিয়োগ দেয়া হয় তিনজন কর্মচারি। কিন্তু নিয়োগ তিনজনের হলেও প্রতি পদে একাধিক লোকের কাছ থেকে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। যে টাকা উদয় শংকরের হাত দিয়ে চলে যায় আলোচিত সেই জনপ্রতিনিধিসহ ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য নেতাদের পকেটে। এই টাকার মধ্যে চাকরি বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দেয়াকে কেন্দ্র করে ম্যানেজিং কমিটির সাথে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এরই জের হিসেবে তাকে খুন করা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। অনেকে বলছেন, উদয় শংকর নামে সভাপতি হলেও তার মাথায় কাঠাল রেখে কোয়া খেয়েছেন অন্য কেউ।
জানা যায়, মনিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রভাষক উদয় শংকর বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার টেকারঘাট বাজারের অদুরে এ নৃশংস্ হত্যার ঘটনাটি ঘটে। তিনি উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের রনজিত বিশ্বাসের ছেলে। এছাড়া উদয় শংকর মণিরামপুরের নেহালপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ও টেকেরঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন।
হত্যাকান্ডের পরপরই মণিরামপুর থানা পুলিশ, সহকারী পুলিশ সুপার আশেক মাহমুদসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা গিয়ে গুলির ঘটনা অনুসন্ধান করতে শুরু করেন। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানতে না পারলেও টেকারঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাথে চলমান দ্বন্দ্ব, ঘের ব্যবসা, দলীয় কোন্দল ও চরমপন্থী কানেকশনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তদন্তে নামে। এরপর রাতে নিহতের মা ছবি রানী বিশ্বাস আসামীদের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। মামলা নং ১৪। মামলা রুজু হওয়ার পরেই পুলিশ আসমিী আটকে তৎপর হয়। রাতভর অভিযান শেষে আজ (১৭ অক্টোবর) মঙ্গলবার ভোররাতে মণিরামপুর উপজেলার ভবদহ বিলের মাছের ঘের থেকে এই মামলার এজাহারভূক্ত দুইজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলো-মণিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের মৃত অনিল বিশ্বাসের ছেলে পরিতোষ বিশ্বাস (৪৫) ও একই গ্রামের মৃত নিখিল দাসের ছেলে উত্তম দাস (৩৪)।
পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী মোড়ের চায়ের দোকানদার বাসুদেব চক্রবর্তী জানান, মোটরসাইকেল যোগে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি আমার দোকানে আসেন। একজনের মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিল এবং অপরজন ছিলেন খালি মাথায়। তবে তাদেরকে আগে কখনো এ এলাকাতে দেখিনি। তিনি আরও জানান, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে উদয় বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পাকা সড়ক ধরে বাড়িতে যাওয়ার সময় তাকে পেছন দিক থেকে গুলি করা হয়েছে। গুলি শব্দ শুনে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে মোটরসাইকেলে করে দুইজন পালিয়ে যাচ্ছে। শুনেছি সম্প্রতি পাঁচাকড়ি টেকারঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন উদয় বিশ্বাস। নির্বাচনের দুই মাসের মাথায় ওই বিদ্যালয়ে তিনটি কর্মচারী পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। কমিটি গঠন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি এলাকায় একটি মহলের সাথে তার বিরোধ চলছিল।
উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু বলেন, উদয় বিশ্বাস নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন হত্যাকান্ডের কারণ উৎঘাটন এবং ঘাতদের আটকের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই যশোর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, মণিরামপুরের এএসপি (সার্কেল) আশেক সুজা মামুন, র্যাব-৬ এর যশোর ক্যাম্প সদস্য, পুলিশ ইনভেষ্টিগেশন ব্যুরো (পিআইবি) ও ডিবি এর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসামী আটকে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (মণিরামপুর) আশেক সুজা মামুন বলেন, উদয় হত্যাকান্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। ইতোমধ্যেই দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আশাকরি খুব শিঘ্রই অন্যান্য আসামীদের আকট করা সম্ভব হবে।