—————————————-
দীর্ঘ ১৬ বছর পর চট্টগ্রাম ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্যারেড ময়দানে ১ম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে উদ্বোধনী দিনের স্ব-শরীরে একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে হাজির হতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আলহামদুলিল্লাহ। উদ্ধোধনী মাহফিল যেহেতু তাই আগে ভাগেই চলে আসছিলাম।
চান্দগাও থানার অন্তর্গত অদুরপাড়া সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সভাপতি সিরাজ কামালের তত্ত্বাবধানে ৩০ জন ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ পূর্ব গেইট দিয়ে মাহফিলে প্রবেশ করে আবেগাপ্লুত হয়ে আল্লামা সাঈদী রাহঃ এর স্মৃতি বিজড়িত ময়দানে কেঁদে দু চোখের কোনায় টকবগে পানি চলে আসে। তখন মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
গিয়ে চান্দগাও থানার শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ৪নং প্রশাসনিক ওয়ার্ড এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হাফেজ আব্দুল আজিজ শোয়েব ভাইয়ের ইমামতিতে সালাতুল আসর পড়লাম প্যারেড ময়দানে। আসর আদায়ের পর চট্টগ্রাম মহানগরীর শুরা সদস্য ও চান্দগাও ৪নং প্রশাসনিক ওয়ার্ড আমীর ওমর গণি ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল হাকিমের কাছ থেকে স্বেচ্ছাসেবক কার্ড সংগ্রহ করে দায়িত্ব বুঝিয়ে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করি। তখন মাগরিবের সালাতের সময় হয়ে গেলে সবাই মাগরিব সালাত আদায় করে নিদিষ্ট স্থানে অবস্থান করি।
এরপর সন্ধ্যা ৬.১৫টা হওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু হয়ে নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী প্রথমে কুরআন তেলাওয়াত ও ইসলামী সংগীত শেষ হয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও অত্র মাহফিলের সভাপতি অধ্যক্ষ তাহের।
এরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াত আমীর আলাউদ্দিন শিকদার ভাই প্রাণবন্ত ঈমানী জ্বজরায় ভরা বক্তব্য পেশ করছিলেন । এরপর আল্লামা সাঈদীর তাফসীর ও বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া স্পন্দন অডিও ভিজুয়েল সেন্টার এর স্বত্বাধিকারী প্রিয় ভাই সাইফুল্লাহ মানসূর সামান্য স্মৃতিচারণ করে চমৎকার ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ।
এরপর ড. মোস্তফা শাহীন আজহারী নামে একজন আলেম ইসলামী শরিয়তের নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে চমৎকার আলোচনা করেন ।এরপর দর্পন শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত কণ্ঠে সুন্দর ইসলামী সঙ্গীত শ্রোতাদের জাগিয়ে দেয় । তারপর শূরু হয় আল্লামা সাঈদীর প্রায় হুবহু কণ্ঠের যোগ্য উত্তরসূরী ক্বারী মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিনের আশাতীত প্রাণবন্ত বয়ান।
আলহামদুলিল্লাহ । তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর শুরুতেই আল্লামা সাঈদীকে হৃদয় কাড়া ভাষায় স্মরণ করলে শ্রোতাদের মাঝে এক আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় । শ্রোতারা আল্লামা সাঈদীর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে ফেটে পড়েন ।অতঃপর তিনি বেশ বিজ্ঞতার সাথে আল-কুরআনের পরিচিতি তুলে ধরেন খুব স্বল্প সময়ে । এক পর্যায়ে তিনি মৌমাছি সহ কুরআনে বর্ণিত বিজ্ঞান, আল্লাহর কুদরত ও সাহাবিদের খেলাফত নিয়ে চমৎকার তাত্বিক তাৎপর্যময় আলোকপাত করেন ।অতঃপর শুরু হয় মুমিন মুসলমানের জন্য কুরআন হাদিস ও সাহাবাদের চরিত্রের আলোকে দশটি মৌলিক গুণণাবলী নিয়ে হুজুরের মন্ত্রমুগ্ধতায় ভরা বিস্ময়কর বয়ান । ওয়াজের মাঝে মাঝে তো আমার মনে হচ্ছিল যেন আমাদের শহিদ আল্লামা দেলোয়ার হোছাইন সাঈদী আবার ফিরে এসেছেন স্মৃতি বিজড়িত প্যারেড ময়দানে । যদিও সেটি সম্ভব নয় এবং আল্লামা হওয়াও কারো পক্ষে সম্ভব নয় । হে আল্লাহ আল্লামাকে শহীদি মর্যাদা এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন। আল্লামা সাঈদীর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত প্যারেড ময়দানে মাহফিলে প্রথম বারের মতো আলোচনা করে মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিন যতটুকুন করেছেন এটিকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ মনে হয়েছে আমার কাছে। বিশেষতঃ আলোচনার শেষে তিনি ছোট্ট অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষায় যে মুনাজাতটি করেছেন সেটি মকবূল দোয়া মনে হয়েছে আমার নিকটে ।সবচেয়ে বড় কথা কানায় কানায় ভরা প্যারেড ময়দানের লক্ষ লক্ষ জনতাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছেন তিনি কুরআনের সূরের মূর্ছনায় এটাই বড় কথা ।এছাড়াও অতীতের তুলনায় আজকের আয়োজনটি আমার কাছে আরো আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্হাপনায় ভরা মনে হয়েছে । হে আল্লাহ ঐতিহাসিক মাহফিলটি শেষ পর্যন্ত সুসম্পন্ন করতে তোমার কুদরতি হাতে ব্যবস্হা করুন । আমিন ।
আকতার কামাল মহসিন, চট্টগ্রাম