অনলাইন ডেস্ক:
দায়িত্ব পাওয়ার পরই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষা হিসেবে দেখা দিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। সে কারণে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইসি। নিজেদের প্রথম নির্বাচন দিয়ে ‘ক্লিন ইমেজ’ তৈরি করতে চায় আউয়াল কমিশন। এ কারণে নির্বাচনের এক মাস আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ১৫ মে থেকে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১২ মে থেকে ৩জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্র ও ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ইভিএম কাস্টমাইজ ও ভোটগণনার সময় প্রার্থী এবং প্রার্থীর প্রতিনিধিকে রাখা হবে।
নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক দফায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে প্রথম ধাক্কা খায় ইসি। আমন্ত্রিত অতিথিদের অধিকাংশই অনুপস্থিত থাকেন সেসব বৈঠকে। এটি ইসির ইতিহাসে বিরল। এছাড়া সঠিক সময়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতেও ব্যর্থ হয়েছে ইসি। এ সিটির মেয়াদ ১৬ মে শেষ হলেও ভোট হচ্ছে একমাস পর, ১৫ জুন। এ নিয়ে ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি জবাবও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জাগো নিউজেকে জানিয়েছিলেন, সীমানা সংক্রান্ত মামলা ছিল কুমিল্লা সিটিতে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এ নিয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব বিলম্বে পেয়েছি। তাই সঠিক সময়ে ভোট হচ্ছে না।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সঠিক সময়েই জবাব দিয়েছি।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত প্রস্তুতির অভাবের কারণেই সেখানে সঠিক সময়ে নির্বাচনের তফসিল দিতে পারেনি। এখন সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
প্রতিটি কেন্দ্র ও ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা
কুমিল্লা সিটির সবগুলো কেন্দ্রে নির্বাচন হবে ইভিএমে। আর ভোট বিতর্কমুক্ত করতে সবগুলো কেন্দ্রের সবগুলো কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসাতে চায় ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, মূলত ইসির প্রস্তুতির অভাবের কারণেই কুসিকে নির্বাচন করতে দেরি হয়েছে। সেখানে ইভিএমে নির্বাচন হবে। এটার জন্য প্রস্তুতি দরকার ছিল। এছাড়া ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি এবং ভোট কক্ষে (ভোটাররা যেখানে ভোট দেবেন, সেই গোপন স্থান ছাড়া) একটি করে সিসি ক্যামেরা থাকবে। যাতে সেখানে কোনো অনিয়ম হলে পরবর্তীতে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
ইসি আলমগীর আরও বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন নির্বাচনী মালামাল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, তখন বা তার আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা চালু থাকবে। ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এ ক্যামেরা থাকবে। ইভিএম কাস্টমাইজ ও ভোট গণনার সময় প্রার্থী এবং প্রার্থীর প্রতিনিধিকে নির্বাচনের প্রতিটি স্তরে রাখতে হবে। শুধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন না, কোনো নির্বাচনেই আমরা ঘাটতি রাখব না।
এক মাস আগেই বিজিবি মোতায়েন
এই নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ১৫ মে থেকে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১২ মে থেকে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও সব ধরনের শোডাউন বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
মটরসাইকেল ধরপাকড়, জরিমানা
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সেখানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং নাশকতা ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। নিবন্ধন ও লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পুলিশকে বেশি তৎপর হতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত বিভিন্ন টহল ও চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে ২৩৭টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এছাড়া ৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শুধু মোটরসাইকেল কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নির্বাচনের সময় অধিকাংশ অপরাধ, শোডাউন মটরসাইকেলের মাধ্যমেই হয়। এজন্য সন্দেহভাজনদের টার্গেট করা হয়।
৭৪৫ সিসি ক্যামেরা
মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী আরও বলেন, এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১০৫টি আর ভোটকক্ষ ৬৪০টি। সে ক্ষেত্রে ৭৪৫টি সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে কেন্দ্রে বিশেষ অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা রাখা হবে। যাতে কোনোটা কাজ না করলে বা নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপন করা যায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শুধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নয়, সব নির্বাচনেই ইসি যতই ভালো ব্যবস্থার কথা বলুক না কেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন। আবার কুমিল্লায় সরকারি দলের বাইরের কেউ যদি নির্বাচিত হয়, সেটাও যে সুষ্ঠু হয়েছে তাও বলা যাবে না। কারণ সেখানে ইভিএম’র মাধ্যমে নির্বাচন হবে। যা এখনো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তার কোনো লক্ষণ দেখছি না। সুতরাং নির্বাচন কমিশন তাদের নষ্ট ইমেজ থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবে না।
বিএনপি না স্বতন্ত্র?
বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তারা। এর আগেও এই সিটিতে অংশ নেয়নি দলটি। তবে তাদের সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম সাক্কু স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র হিসেবেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আরফানুল হক রিফাত। ১৩ মে সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড’র সভায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৫ মে’র মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৭ মে। ভোট গ্রহণ করা হবে ১৫ জুন।
সুত্র: জাগো নিউজ অনলাইন।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি /এনভি