কক্সবাজারের টেকনাফে চাকরির প্রলোভনে ডেকে এনে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকু, লাঠি, লোহার রড, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
র্যাব জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলায় একাধিক অপহরণকারী চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের বিদেশে পাঠানো বা স্থানীয় খামার ও ফার্মে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। এভাবে তারা ভিকটিমদের আটক করে মারধর এবং পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা চালাত।
সুজন চাকমাকে ফাঁদে ফেলা
এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় রাঙামাটির বাসিন্দা সুজন চাকমাকে ‘ব্রিলিয়ান্ট অ্যাপস’-এর মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখায় চক্রের সদস্যরা। চাকরি পাওয়ার আশায় তিনি গত ২৯ আগস্ট রাঙামাটি থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হন। ৩০ আগস্ট সকালে শাপলা চত্বরে পৌঁছালে চক্রের সদস্যরা তাকে রিসিভ করে টেকনাফ সিনেমা হলের পেছনে একটি নির্জন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়।
পরে দুপুরে ভিকটিমের পরিবারের কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। সময়মতো টাকা না দেওয়ায় সুজন চাকমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। ৩১ আগস্ট রাতে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে অটোরিকশা চালক মো. ইয়াছিনকে দিয়ে শাপলা চত্বরে ফেলে আসা হয়। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলেও ১ সেপ্টেম্বর ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
র্যাবের অভিযান
ঘটনার পর টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-০৬, তারিখ-০১/০৯/২০২৫, ধারা-৩৬৫/৩৮৫/৩০২/৩৪ পেনাল কোড)। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে নতুন পল্লান পাড়া এলাকা থেকে প্রথমে মো. ইয়াছিন প্র. সাইফুলকে গ্রেফতার করে এবং তার কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরেক অটোরিকশা চালক মো. ইয়াছিন প্র. কালুকে আটক করা হয় এবং ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। এরপর গ্রেফতার দুই আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চক্রের অন্যতম সদস্য সাহাব উদ্দিনকেও আটক করে র্যাব।
চক্রের মূলহোতা এখনও পলাতক
র্যাব জানায়, আটককৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের মূলহোতা আয়াত উল্লাহসহ আরও কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরির প্রলোভনে মানুষকে টেকনাফে এনে অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছে।
সারাদেশে বিস্তৃত ফাঁদ
র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছেন, আবার কারও কারও জীবনও শেষ হয়ে গেছে। রাঙামাটির সুজন চাকমাও সেই ভয়ঙ্কর চক্রের নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন।