এম.ইউ বাহাদুর, কক্সবাজার :
আজকের এই দিনে ২০২১ সালে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন কক্সবাজারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী (কক্সবাজার-৩) আসন,কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বারবার নির্বাচিত সাবেক সফল সভাপতি,জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডশন কক্সবাজার জেলা সভাপতি, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন এডভোকেট ছালামত উল্লাহ।
কক্সবাজারের ইতিহাসে এরকম গুণীজন আর পাব কিনা আমরা জানিনা। আল্লাহ পাক যেন তাহার নেক আমল গুলো কবুল ও সমস্ত গুনাহ মাফ করে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক দান করুক,আমীন।
জীবন বৃত্তান্তঃ...
ক্ষণজন্মা, মহান সত্যব্রতী পুরুষ সালামতুল্লাহ এডভোকেট ১৯৩৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বাহারছড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে কক্সবাজার হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। অতঃপর ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে আই.এ এবং ঢাকা সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন।
স্কুলজীবনে তিনি ফুটবল খেলা ও স্কাউটিং -এ সুনাম অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় স্কাউট্স জাম্বুরিতে কক্সবাজার হাইস্কুল থেকে গ্রুপলিডার হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৬৫ সালে কক্সবাজার কোর্টে আইনপেশা শুরু করেন। তখন থেকে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), এসোসিয়েট প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি), অবজারভার, জনপদপ্রভৃতি পত্রিকার কক্সবাজার প্রতিনিধি হিসাবে তিনি কাজ করেন । কক্সবাজার জেলায় সাংবাদিকতার বিকাশে এবং কক্সবাজার প্রেসক্লাব গঠনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন । তাঁর নেতৃত্বে কক্সবাজারে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কক্সবাজার শাখা ও প্রেসক্লাব গঠিত হয়। তিনি দীর্ঘদিন তদানিন্তন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত আছেন। তিনি তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এছাড়া তিনবার কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। সালামতুল্লাহ এডভোকেট কক্সবাজার ইসলামী সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ কক্সবাজার জেলার স্কাউটস্ কমিশনার ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস্, কক্সবাজার জেলার সহ-সভাপতি ।
এছাড়া কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য। তিনি তদানিন্তন কক্সবাজার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
সালামতুল্লাহ এডভোকেট কক্সবাজার ইসলামিয়া বালিকা কামিল মাদ্রাসা, কক্সবাজার আইন কলেজ, কক্সবাজার মহিলা কলেজ, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার আলহেরা একাডেমী এবং কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। । তিনি দীর্ঘদিন কক্সবাজার আইন কলেজের ইসলামী আইনের অধ্যাপক এবং ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলার আমীর-এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি কক্সবাজার জেলার একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। কক্সবাজারের সাহিত্য বিকাশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর আজীবন সদস্য । কক্সবাজারের নবীনদের লিখা প্রথম হাতেলেখা সাহিত্য পত্রিকা তাঁরই উদ্দ্যোগে প্রকাশিত হয়। তিনি তৎকালীন কলকাতার 'মোহাম্মদী' পত্রিকার ছোটদের বিভাগে লিখতেন।
১৯৯৬ সালে সালামতুল্লাহ এডভোকেট আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভিজিটর্স প্রোগ্রামে (International Visitor Program) যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৫২), মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত (১৯৬১), পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান (১৯৪৯), শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানা সিংহ প্রেমাদাসা (১৯৬৬) এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দীরা গান্ধী (১৯৬১) অংশ গ্রহণ করেন।
আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, ক্যালিফোর্নিয়া, কলম্বিয়া, বার্লিংটন, ফ্রিপোর্ট, স্যানডিয়াগো, শিকাগোসহ বিভিন্ন শহর ও অঞ্চল সফর করেন। তিনি ১৯৯৯ সালে মক্কাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'রাবেতা আল-আলমে ইসলামী' কতৃক আমন্ত্রিত হয়ে উক্ত সংস্থার অতিথি হিসেবে পবিত্র হজ্জ্ব পালন করেন এবং দেশে ফেরার সময় আরব আমীরাতের বাংলাদেশ সমিতি ও ইসলামিক সেন্টার-এর সদস্যদের আমন্ত্রণে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবী, দুবাইসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।
ক্ষণজন্মা এ মহান পুরুষ আজ রাত ৮টা ১০মিনিটে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা ও তিন পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
তথ্যসূত্রঃ বই- 'আমেরিকা ও আমেরিকার দিনগুলো'
লেখকঃ সালামতুল্লাহ এডভোকেট
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০