———-
সাধারণ মানুষ তো নয়ই, এস এম হলের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই জানি না যে আমাদের হলের সম্মুখভাগে অবস্থিত এই স্তম্ভটি আসলে কি। কোন সময়ই বা এটি নির্মাণ করা হয়েছিল বা কারা এটি আসলে নির্মাণ করেছিলেন। এটি নির্মাণের কোনো উদ্দেশ্য সম্পর্কেও আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অবহিত নয়।
মুখে মুখে প্রচলনের ফলে বেশ কয়েকটি নাম দাঁড়িয়ে গেছে এই স্তম্ভের। অন্যতম প্রচলিত নাম হচ্ছে শিবলিঙ্গ, ঈদগাহ মিনার ইত্যাদি। আসল পরিচয় না জানার কারণে এই স্তম্ভটির প্রতি সঠিক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কিংবা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দিনে দিনে এই স্তম্ভটি এবং তার আশপাশের জায়গাটি সাধারণের আড্ডার জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্তম্ভের পাদদেশে কোন নাম ফলক না থাকায় এসব আমাদের জানাকে আরো কঠিন করেছে।
অনেকে হয়তো মনে করেন, হল নির্মাণের সময়কালেই এটি নির্মিত হয়েছিল। এটি মনে করার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটির নির্মাণশৈলী। নির্মাণশৈলী এবং রং এস এম হলের মূল ভবনের সাথে সাদৃশ্য হওয়ায় অনেকে মনে করেন হল নির্মাণের সময়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
কিন্তু এই স্তম্ভের মূল ইতিহাস আসলে ভিন্ন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য।ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের সংগঠিত হবার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম ঘাঁটি ছিল এই সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, সংগঠিত করেছেন ছাত্রদের এখানে থেকে। বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গাজীউল হক ছিলেন তার সময়ে এই এস এম হলের ছাত্র এবং তিনি আর বঙ্গবন্ধু একই রুমে থাকতেন। অর্থাৎ, ভাষা আন্দোলনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের যে অবদান তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসে স্মরণীয়।
এইসব নানা ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়া মহান শহীদদের স্মরণে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নির্মাণ করা হয় একটি শহীদ মিনার। এই স্তম্ভটি সেই শহীদ মিনার। আমাদের এস এম হলের শহীদ মিনার।
এই শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেছিলেন এবং বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন এস এম হল ছাত্র সংসদ। ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত ভিপি জনাব ফারুক হোসাইন এবং জিএস জনাব শাহে আলম পরিষদ কর্তৃক এই শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শহীদ মিনার নির্মাণকালে এস এম হল ছাত্র সংসদের সভাপতি এবং হল প্রাধ্যক্ষ ছিলেন জনাব অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ মিয়া।
ছাত্র সংসদের নেয়া এই উদ্যোগকে সফল করতে এগিয়ে আসেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তি শিক্ষক ও উপাচার্য জনাব অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী। তিনি হল ছাত্র সংসদকে তৎকালীন সময়ে বিশ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিলেন এই শহীদ মিনার নির্মাণের লক্ষ্যে। শহীদ মিনারের স্থপতি ছিলেন আরেকজন কিংবদন্তি ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলি দবির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বিনা পারিশ্রমিকে স্থাপত্যের স্থপতি হিসেবে কাজ করেন। এস এম হলের ছাত্র এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের শ্বশুর ছিলেন তিনি।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মূল কাঠামো এবং স্থাপত্যশৈলী বিবেচনায় রেখে স্থাপত্যকর্মটি নির্মাণ করা হয়। আর এ কারণেই এটি দেখতে মূল হল কমপ্লেক্সের স্থাপত্যশৈলীর সদৃশ। সংরক্ষণের জন্য চারদিক দিয়ে ছিল শেকলের বেষ্টনী, যা এখন বিলুপ্ত হচ্ছে।
জাতির গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস স্মরণে নির্মিত এই শহীদ মিনারটি এখন কর্তৃপক্ষের কোন রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় নেই। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদ অতিশীঘ্রই এই শহীদ মিনারটি সংরক্ষণ এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দানে সচেষ্ট হবে এ আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।
#জুলিয়াস_সিজার_তালুকদার
#Save_Heritage
#Save_Dhaka_University