জিহান আহমেদ।
আঙুলের ফাঁকে পুড়তে থাকে একটি বেনসন সিগারেট। অবাক হৃদয় অনুভব করে দারিদ্র্যের কোন অনুভূতি নেই। ঠোঁটের ভাজে ছুঁয়ে যাই নৈরাজ্যময় আগুনের মতো গান। অথচ, মুদি দোকানের হালখাতায় লেখা হয় ধ্বংসের উল্লাস। বৃদ্ধ মানুষটা দৌড়াতে থাকে পাহাড়ে, হাঁপিয়ে উঠে আবার দৌড়াতে থাকে। মরুভূমির তপ্ত বালু মাড়িয়ে সে তার নিজের অকেজো পা দু'টো টেনে নিতে থাকে সমুদ্রে। পড়ে থাকে পেছনে, সে দৌড়াতে থাকে তবুও মুখ থেকে ঝেড়ে ফেলে সে পুরনো পথের ধূলোবালি। ক্লান্ত পৃথিবীতে উপচে পড়ে অন্ধকার, কিন্তু সে থামে না। বেলা পড়ে এলেও, কেউ একজন ঘুমাচ্ছে শিশুর মতো। প্রিয়ার জন্য চুড়ি কেনা হয়নি বলে, একজন চিন্তিত খুব দু বেলা তাস খেলা সিগারেট আর আড্ডায় ব্যস্ত একজন আর একজন উড়োনচন্ডি আউল বাউল সন্ন্যাসীদের দলে। এই মুহূর্তেও বৃদ্ধ মানুষটা দৌড়াতে থাকে, এক দীর্ঘ পথ পৃথিবীর সীমান্তরেখা ছুঁয়ে দেখার আগে থামবে না। সে ক্ষিপ্র মেঘের মতো বিলাতে থাকে, উজাড় হতে থাকে। সে ভারি হয়ে আসা শ্বাস টানতে টানতে দৌড়াতে থাকে। বৃদ্ধ বিপুল স্রোতের মতো নিজেকে ভাসিয়ে দেয় সংসারে। সময়ের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে, আমি চিনেছি জীবনদায়ী বৃদ্ধ মানুষটাকে। আমার বাবা হয় তিনি। আত্মআবিষ্কারের মতো যাকে বলে, আমি দেখেছি জীবনের প্রবাহে বৃদ্ধ মানুষটি হয়ে উঠে আমার অস্তিত্ব। ভেঙে পড়া পাহাড়ের মতো, দারিদ্র্যের সংসার আমাদের একটি সবল বাহু, দিনের পর দিন পতন ঠেকিয়ে রেখেছে আরেক বাহুতে আগলে রেখেছে তার প্রিয় গোলাপের বাগান। বিষাদের বিন্যাস দেখি এখন তার বিষণ্ণ অস্থি মাংসে আমার বৃদ্ধ বাবা। তবুও থেমে নেই, দিনমান পরিশ্রমী এখনো তিনি তরতাজা অঙ্গার, জ্বালিয়ে রাখেন উম প্রবল শীতের রাতেও। আমি ঘুমাতে যাই, প্রশান্তবদনে। দারুণ ইচ্ছে হয়, তোমার আলিঙ্গনে গলে যাই, বাবা মৃত্যু এসে আমাকে খুঁজে পাক তোমার বাহুতে ঘুমাতে। জোছনার মনে হোক, মানুষগুলো বড়ো বেশি বিভ্রান্ত তারা জানে না, মহাজগতের সব আলো যে বাবা তুমি। কষ্ট, বুকের কষ্ট বাবা, কবিতায় কি সব বলা যায়, বাবা? কেউ কি অনুভব করে তোমার বুকে কান্নার বরফ জমা? মুদি দোকানির হিসেব বই উল্টে দেখো, দীর্ঘশ্বাস নামে জীবন ফুরিয়ে আসে, তোমার দৌড় আর শেষ হয় না!
বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবাদের বাবা দিবসের শুভেচ্ছা।
শিক্ষার্থী, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০