দেশবরেণ্য প্রবীণ আলিমে দ্বীন, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব, ঢাকা জামিয়া মাদানীয়া বারিধারার প্রতিষ্ঠাতা ও শায়খুল হাদীস আল্লামা শায়খ নূর হোসাইন কাসেমী (রহি’মাহুল্লহ) এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বায়তুশ শরফের সম্মানিত রাহবার আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (হাফিযাহুল্লাহ)।
তিনি বলেন, ‘আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহি’মাহুল্লহ ছিলেন এই দেশের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও শীর্ষ আলিমে দ্বীন। বাংলাদেশের জন্য তিনি ছিলেন রত্নতুল্য। এই ভূখন্ডে ইসলামের একজন অতন্দ্রপ্রহরী। তাঁর ইন্তেকালে বাংলার ইলমাকাশে একটি নক্ষত্রের পতন ঘটেছে। একইসাথে এই জনপদের মুসলিমরা হারিয়েছি একজন নিবেদিতপ্রাণ মুখলিছ আলিমে দ্বীনকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার জানামতে তিনি সারাজীবন সত্য ও ন্যায়-নীতির উপর অটল অবিচল ছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেকোনো ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমৃত্যু তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। হক্বের উপর ছিলেন দৃঢ় মজবুত। বাতিলের সাথে কখনো আপস করেননি।’
‘তিনি দীর্ঘদিন অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ও জামেয়া সুবহানিয়ার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদীসের গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। পাশাপাশি আরও প্রায় ৪৫টি মাদরাসা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলো। দীর্ঘকাল হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব সহীহ বুখারীর পাঠদান করেছেন। ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার মুহাদ্দীসীন তাঁর ছাত্র। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক, শায়খুল হাদিস, একাধিক মাদরাসার স্বনামধন্য পরিচালক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক এবং হক্কানী পীর।’
পীর সাহেব হুজুর আরও বলেন, ‘আল্লামা কাসেমী রহি’মাহুল্লহ সর্বদা লোভ-লালসা ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকতেন। আমরণ তিনি ইখলাছের সাথে দ্বীনের বহুমুখী খিদমাহ করেছেন। দ্বীনি মারকাজগুলো যখন স্বজনপ্রীতির কঠিন থাবায় আপতিত, তখন তিনি যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও নিজপুত্রকে জামিয়া বারিধারায় উসতায হিসেবে নিয়োগ দেননি। এর মাধ্যমে তিনি স্বজনপ্রীতির মূলোৎপাটন করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের বায়তুশ শরফের মরহুম পীর সাহেবানগণও এই নীতির উপর থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
‘বর্তমান এই নাজুক পরিস্থিতিতে, দেশ ও জাতির এই সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহি’মাহুল্লাহ-র এর মতো হক্ব ও ন্যায়ের ঝাণ্ডাবাহী, নিষ্ঠাবান আলিম আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আল্লাহ তায়া’লার হুকুমই শেষ কথা।’
পীর সাহেব হুজুর শোকগ্রস্ত পরিবারের সকল সদস্যকে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘আমি মহান আল্লাহ্ নিকট শায়খের সকল ভালো কাজ কবুল হওয়ার এবং সকল ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা হওয়ার জন্য দু’আ করছি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দু’আও করছি।’