জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আকাশ থেকে পড়া একটি ভারী অদৃশ্য বস্তুকে বোমা ভেবে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। পুরো ভাটিয়ারী এলাকায় জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। শনিবার দুপুর পৌনে দুইটার সময় উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের মিত্র বাড়ির পাশে এঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মিত্র বাড়ির পাশে একটি খালি জায়গাতে দুপুরে বিকট শব্দে আকাশ থেকে একটি বস্তু পড়ার শব্দ শুনে এলাকাবাসী। ঐস্থানে বড় একটি গর্ত হতে দেখা যায়। তবে এলাকাবাসী বুঝতে পারেনি উপর থেকে কি পড়েছে। এঘটনা জানার পর এলাকায় হাজার হাজার উৎসুক মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে।
বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাব্বির আহমেদ চৌধুরী প্রশাসনকে জানালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এএসপি (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রানী শাহা, মডেল থানার ওসি ফিরোজ আলম মোল্লা, ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ, ফৌজদার হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ শফিক, ইউপি চেয়ারম্যান নাজীম উদ্দিন।
এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এডিসি পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে টিমও উপস্থিত হয়। জানা যায়, বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা তিন ঘন্টা সময় নিয়ে প্রায় ১২ ফুট গভীর গর্ত হয়ে যাওয়া মাটির ভিতর থেকে বস্তুটি উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকৃত বস্তুটি কোন রকম বোমা বা অন্য কিছু নয় এটি সাগর উপকুলে অবস্থিত শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরিত ক্রেনের একটি অংশ ৩০ কেজি ওজনের লোহার পাত।
উপকুলের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে গিয়ে পড়ল ইস্পাতের খণ্ডটি। জানা যায়, উপজেলার ভাটিয়ারী ষ্টেশন রোডের পশ্চিম পার্শ্বে সাগর উপকুল এলাকায় অবস্থিত জিরি সুবেদার ইয়ার্ডের মালিকানাধীন ফেরদৌস ষ্টীল।
এই শীপ ইয়ার্ডে প্রায় ৪/৫ বছর আগে একটি ৫শত টন ওজনের ক্রেন আনেন বিদেশ থেকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও ইয়ার্ড কতৃপক্ষ ক্রেনটি ইয়ার্ডে নামাতে পারেনি। শনিবার দুপুরে ফের চেষ্টা চলছিল ক্রেনটি জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডের কাজে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু বাঁধে বিপত্তি। ওয়্যার টানতে গিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় ক্রেন। ছিঁড়ে যায় ওয়্যার। এ সময় ওয়্যার ছিঁড়ে মহাসড়কের পূর্ব পাশ প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরত্বে ষ্টেশন রোড সিদ্দিক ফকিরের মাজার সংলগ্ন এলাকায় পড়ে এবং ত্রিশ কেজি ওজনের একটি লোহার টুকরো দুই কিলোমিটার দুরত্ব ৪নং ওয়ার্ড ভাটিয়ারি মিত্র বাড়ির পুকুর সংলগ্ন এলাকায় পড়ে।
দুপুর থেকে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়। এত বিকট শব্দে এটা কি পড়লো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিএম সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় সেনাবাহিনীকে স্থানীয় প্রতিনিধিরা অবগত করেন। চট্টগ্রাম থেকে ডাকা হয় বোমা ডিসপোজাল ইউনিট।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার সময় ঘটনাস্থলে আসেন পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্ব সাত সদস্যর বোমা ডিসপোজাল ইউনিট। শুরু হয় অভিযান, প্রায় তিন ঘণ্টা মাটি খনন করে মাটির ১২ ফুট গভীর থেকে উদ্ধার করা হয় পুরাতন জাহাজের ত্রিশ কেজি ওজনের একটি টুকরো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটিয়ারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘ আসলে অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা। ফেরদৌস শীপব্রেকিং ইয়ার্ডটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরত্বে। দুপুরে বিকট শব্দে বহু উপর দিয়ে এসে এখানে এই লোহার টুকরোটি পড়ে। জনমনে শুরু হয় আতংক। আমাকে স্থানীয় মেম্বার জানানোর সাথে সাথে আমি আইন-শৃঙ্গলা বাহিনীকে অবগত করি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা বলেন, "যেই ইয়ার্ড থেকে লোহার টুকরোটি এসেছে শুনেছি, তার দুরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। আমরা তদন্ত করবো এবং অসতর্কতার জন্য ইয়ার্ড কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।"
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০