রফিকুল ইসলাম জসিম ::
রোমাঞ্চকর ভ্রমণ যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য নতুন এক স্থান হতে পারে কমলগঞ্জে ভুত-বাংলো
সাহস থাকলে কমলগঞ্জে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সেখানকার বেশ কয়েকটি অচেনা জায়গায়।
পরিত্যক্ত এখন এ ভূত-বাংলোতে একসময় চা বাগান সাহবেরা থাকলেও এখন নির্জন। অনেক বছর আগে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে সেখানে৷ এমনকি এখানে নাকি সুইসাইডের ঘটনা ঘটলে বাংলোটি ছেড়ে চলে যায় ম্যনেজার এবং পরবর্তীতে আর কেও ঐ বাংলোয় থাকার সাহস করতে পারেনি। আর এ কারণেই ভুত বাংলো বলেই পরিচিত লাভ করেন৷
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে পাত্রখোলা হাজারীবাগ এলাকার এই বাংলোটি যদি সংস্কার করে তাহলে এটি পর্যটন কেন্দ্র গড়া সম্ভব হতে পারে। চা বাগানের উচু টিলায় উপরে ফ্লোরে ঢালাই করা ছাদের ছোটো বড় প্রায় দশটি রুম,সুন্দর কিচেন ও বিশাল গ্যারেজসহ এই বাংলোটি। বড় বড় জানালা- ফাঁকা দেওয়াল জীর্ণ হয়েছে। খসে পড়েছে চাঙড়৷ রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা এতই খারাপ যে চা বাগানের সাহেবের স্মৃতিবিজড়িত হাজারীবাগ ভূত- বাংলো এখন কিনা পরিচিত পযর্টন স্থান।
ভূত বাংলো ছাড়াও আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখানে আরও দেখতে পাবেন সবুজ শ্যামলে চা বাগান, গারোটিলা, হাজারীবাগ মসজিদ ও দুর্গামন্দির৷ প্রথমবার ভূত বাংলো থেকে ঘুরে এসে যা জানলাম তাই পাঠকদের উদ্দেশ্যে আজকের লেখা৷
স্টারলিং কোম্পানি হিসেবে বৃটিশ,স্কটিশ ও ইংরেজরা এই উপমহাদেশে চা উৎপাদন শুরু করেছিলো বহু বছর আগে।তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৭৫ খ্রীস্টাব্দে ১৮৫৭.২০ হেক্টর জমি নিয়ে পাত্রখোলা চা বাগানের পথচলা শুরু হয়েছিল।তৎকালীন বাগান মালিক হিসেবে বৃটিশরা তাদের বাগান ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যবস্থাপকদের থাকার জন্য দৃশ্যমান এবং ব্যয়বহুল বিভিন্ন ছোটো বড় বাংলো তৈরী করে দিয়েছিল। বাংলোগুলো তৈরী করত শ্রমিকদের পাড়া থেকে অনেক দূরে টিলায়।টিলায় এবং একদম আলাদাভাবে তৈরী করার কারন ছিলো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দৃষ্টিনন্দন জায়গা।সৌখিন বৃটিশ ব্যবস্থাপকরা তখন তাদের বাংলোগুলো সাজিয়ে রাখতেন চমৎকার ছবির মতো।
কালক্রমে সেইসব চমৎকার বাংলোগুলো এখন পুরোনো হয়ে গেলেও রয়েছে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে।এর মধ্যে পাত্রখোলা চা বাগানের হাজারীবাগ এলাকায় তখনকার সময়ে হাজারীবাগ ডিভিশন দেখাশোনার জন্য নির্মান করা হয়েছিলো সহকারী ব্যবস্থাপকের জন্য এই বাংলোটি মোজাইক করা ফ্লোরে ঢালাই করা ছাদের ছোটো বড় প্রায় দশটি রুম,সুন্দর কিচেন ও বিশাল গ্যারেজসহ এই বাংলোটি হাজারীবাগের সবচে উঁচু টিলাতে রয়েছে। এই বাংলো নিয়ে রয়েছে বেশ কল্পকাহিনী।
কথিত আছে যে এই বাংলোয় একসময় জীনভূতের প্রভাব পড়েছিলো।বাংলোয় যখন ম্যনেজার থাকতেন না তখন ম্যনেজারের রূপ নিয়ে বাংলোয় আসতো জীন।দিব্যি খাওয়া দাওয়া করে আবার ম্যনেজার আসার সময় হলে কেটে পড়ত।এরকম অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকলে এবং পরবর্তীতে নাকি এখানে সুইসাইডের ঘটনা ঘটলে বাংলোটি ছেড়ে চলে যায় ম্যনেজার এবং পরবর্তীতে আর কেও ঐ বাংলোয় থাকার সাহস করতে পারেনি।তখন থেকে বাংলোটি পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনো দাঁড়িয়ে আছে ভূত বাংলোর আখ্যা নিয়ে।হোক ভূত বাংলো কিন্তু বাংলোর চারপাশ এবং ছাদ থেকে আপনি যে দৃশ্য দেখতে পাবেন তা শিলং-চেরাপুঞ্জির মতই সুন্দর।উঁচু টিলায় থাকার কারনে সেখান থেকে সবকিছু এত চমৎকার দেখায় যা নিমেষেই মনকে সতেজ ও প্রানবন্ত করে তুলবে।এমন প্রাকৃতিক নেশায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করবে ঘন্টার পর ঘন্টা।
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, কিংবা ট্রেনে কমলগঞ্জ আসতে হবে। এরপর ভানুগাছ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে পাত্রখেলা (ভাড়া ৪০ টাকা) আসতে হবে। পাত্রখোলার হাজারীবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা মিলবে এই নিদর্শনটির। একটি গ্রাম্য এলাকা। এখানে খাওয়ার জন্য ভালো রেস্টুরেন্টে নেই। তবে এই এলাকা ছোট ছোট ৬/৭ টং দোকান রয়েছে। এখানে ভ্রমণ করে দিনে দিনেই আপনি ফিরে যেতে পারবেন।