অন্য কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা তাঁকে ছোটকাল থেকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। এক সময় সাহস করে নেমে পড়লেন। হাত দিলেন ডিজিটাল মার্কেটে জায়গা গড়ার। বহুপথ মাড়িয়ে আজ তিনি সফল একজন ডিজিটাল উদ্যোক্তা। লক্ষ্যস্থির করে মাঠে নামার সেই সাহসে পূরণ হলো তাঁর উদ্যোক্তার স্বপ্ন।
আসলে সত্যিকার সাফল্য হল, ক্রমাগত ব্যর্থতায় দৃঢ় মনোবল ধরে রাখা। সফলতার পেছনের সেসব ব্যর্থতাগুলো আমরা দেখি না বা ইচ্ছা করেই না দেখার ভান করি। অথচ জীবনের শিক্ষা এখান থেকেই শুরু হয়। অনেক কষ্টে পাওয়া সফলতাগুলো সহজে পাওয়া সফলতার চেয়ে বেশি শিক্ষণীয়। কিন্তু এ ব্যর্থতার গল্পগুলো আমরা শুনতে চাই না। অথচ এগুলোই মূলত দৃঢ় অস্তিত্বের গল্প।
বলছিলাম আহাম্মেদ আলী রবিন নামে দেশের অন্যতম একজন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী, ডিজিটাল মার্কেটার ও সফল উদ্যোক্তার কথা। যিনি পরিচিতি লাভ করেন তাঁর চ্যালেঞ্জ গুলিকে জয় করে এবং তাঁর লক্ষ্য অর্জন করেছেন। তিনি একজন গর্বিত উদ্যোক্তা। যিনি ১৪ বছর বয়সে কাজ শুরু করেছিলেন। যখন তাঁর সম বয়সি ছেলেরা সাধারণত কিশোর কান্ডগুলিতে লিপ্ত ছিলো। তখন থেকেই তিনি তাঁর সম্ভাবনার সর্বাধিক ব্যবহার করছেন। তিনি আজ যা হওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন সে পথে অনেকটা সফল বলা বটে।
তিনি ২০২১ সালে একটি বিখ্যাত অডিও এবং ডিজিটাল মার্কেটার সংস্থা “আহাম্মেদ আলী রবিন” এবং “রবিন ডিজিটাল মিডিয়া” এর প্রথম গান “বোদলে যেতে হয় ” দিয়ে তাঁর সংগীত ও ডিজিটাল মার্কেটার জীবন শুরু করেছিলেন। আজ আহাম্মেদ আলী রবিন বর্তমানে ৩ টি ডিজিটাল মার্কেটিং সংস্থার মালিক। সংস্থাগুলো হলো-‘টেকম্যান্ড বিডি’ ‘রবিন ডিজিটাল মিডিয়া’ এবং ‘আহাম্মেদ আলী রবিন’। তিনি তাঁর ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ গুলো মূলত রবিন ডিজিটাল মিডিয়া এবং টেকম্যান্ড বিডির মাধ্যমে করে থাকেন। পাশাপাশি তিনি সুরকার হিসেবেও কাজ করেছেন।
একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার কিশোরদের একটি দল তার পক্ষে কাজ করেছে এবং আজ তার মার্কেটিং দক্ষতা দিয়ে সামাজিক মিডিয়াতে সু-পরিচিত ব্র্যান্ড এবং উদ্যোক্তাদের প্রচার করার পিছনে তিনিই সেই ব্যক্তি। আহাম্মেদ আলী রবিন স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য প্রতিটি ব্র্যান্ডের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে।
এই তরুণ প্রতিভাবান এখন অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং ক্লায়েন্ট পরিচালনা করছেন। তাঁর সাফল্য কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে রবিন বলেছিলেন, ‘সফল হতে হলে অবশ্যই তার অবসর সময় ত্যাগ করতে হবে এবং পরে সুবিধাগুলি কাটাতে সক্ষম হতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আপনার সময়টির ৫ বছর দিন এবং আপনি যতটা পারেন তাড়াতাড়ি করুন। কারণ আমি বিশ্বাস করি এটিই এত সময় প্রতিষ্ঠিত করতে অসীম সাহায্য করবে।’
এভাবে কাজ করছেন তিনি প্রচুর স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট এবং ব্র্যান্ডের সাথে, তাঁর সাথে যুক্ত ব্র্যান্ডগুলির প্রচারের জন্য তিনি একটি বিশাল নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছেন। কঠোর পরিশ্রম, সংকল্প এবং জীবনের ত্যাগ তার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আজ যারা সফল তাঁরা একটা সময় স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি করেছিলেন। ক্রমে তাঁরা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে পৃথিবীকে দেখতে শুরু করে। কেউ জীবনের জটিলতা আর কষ্টগুলোর মর্ম উপলব্ধি করে, কেউ আবার শুধুই আক্রান্ত হয় ।’
রবিনের কথা বলতে গেলে দুটি ছোট গল্পের কথা মনে পড়ে যায়। যে গল্পগুলো আমাদের জানায়- কীভাবে একজন পিছলে পড়ে, একবার-দু’বার নয়; কয়েকবার পড়েও নিজেকে টেনে তোলে। প্রথমটা হলো-মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে ৯ হাজারেরও বেশি শট মিস করেছি। প্রায় ৩০০ খেলায় হেরেছি। ২৬টি ইভেন্টে জেতার ভার দেয়া হয়েছিল আমাকে, মিস করেছি। জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি। আর এ কারণেই আমি আজ সফল।’ এখানে মূল কথাটা খুবই সহজ; কিংবদন্তি হওয়ার আগে তাকে বারবার ব্যর্থ হতে হয়েছিল। তবে প্রতিবার নিজেকে টেনে তুলতে দ্বিধা করেননি। এ ধারাবাহিকতায় ‘পড়ার পর নিজেকে টেনে তোলা’র ব্যাপারটা তাকে কিংবদন্তির আসনে দীর্ঘসময় ধরে আসীন করে রেখেছে। যেমনটি করেছে কিশোর রবিনও।
‘আরও একবার চেষ্টা করা’-এই মন্ত্রই ভিন্নতা তৈরি করে। দ্বিতীয় গল্পটি হলো-খুব কম মানুষই আছেন-যারা মার্কিন লেখক স্টিফেন কিংয়ের কথা শোনেননি। তিনি এখন খ্যাতিমানদের একজন। কিং ৩০ বার তার বিখ্যাত বই ‘ক্যারি’র (Carrie) পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিলেন; ৩০ বারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ৩১তম চেষ্টা না করে তিনি পাণ্ডুলিপিটা ছুড়ে ফেলে দেন। তার স্ত্রী সেটা কুড়িয়ে নিয়ে তাকে আরও একবার চেষ্টা করতে বলেন। বাকিটা ইতিহাস। এটাই সেই ‘আরও একবার’; যা বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমাদের দেশের তরুণেরা খুবই প্রতিভাবান। যেমন-আহাম্মেদ আলী রবিনকে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব, টিকটক এবং স্পটিফাইয়ের অফিসিয়াল শিল্পী হিসেবে যাচাই করা হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশের তরুণকে টপকিয়ে এগিয়ে থাকা; কম কথা নয়।
রবিন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে করোনা মহামারী পরিস্থিতি। বাড়ির বাইরে কাজ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি কোনও প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করতে চান। তবে আপনাকে সেখানে যেতে হবে। তাই আমি এই মুহুর্তে ইউটিউব, স্পটিফাই এবং আইটিউনস এবং সমস্ত স্ট্রিমিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি বাড়িতে গান প্রকাশের জন্য সেরা মিডিয়া মনেকরেন তিনি।’ ‘আমার সঙ্গীতকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে শিল্পী হিসেবে যাচাই করার জন্য টিকটক, ইউটিউব এবং স্পটিফাইকে অনেক ধন্যবাদ। প্রত্যেকে আমার জন্য প্রার্থানা করবেন। যাতে আমি সুস্থ্য থাকতে পারি এবং আরো ভাল গান উপহার দিতে পারি। অনেক ভালবাসা এবং আশীর্বাদ সবার জন্য।’
অনুলেখক: জে,জাহেদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০