--------------------------------
আমরা ৪ বন্ধু। অফিসের তীব্র চাপের মাঝে যখন একদিন সাগরের নেশা মাথায় উঁকি দিল, তখন আর কিছুই মনে রইলো না। মাথায় একটাই চিন্তা—কক্সবাজার! পরিকল্পনা ছিল না, ছিল শুধু সাগরের ডাক। পকেট ছিল ফাঁকা, তবুও ভেবেছি—যাক, কিছু হবে না, তবুও চল!
-----------------------------------
প্রথম দিন: "যাত্রা শুরু কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে!"
রাত ১০:৩০। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শোভন চেয়ার বুক করে বের হয়ে গেলাম। টিকেটের দাম? মাত্র ৬৯৫ টাকা! মনে হয়েছিল যেন আমরা সারা পৃথিবীটাই পেয়ে গেলাম। সাগরের দিকে এক পা বাড়াতে সবার মধ্যে এক অদ্ভুত উত্তেজনা!
-------------------------------------
দ্বিতীয় দিন: "সাগরের তীরে পৌঁছানো!"
সকাল ৭:৩০। কক্সবাজার রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর, চোখে-মুখে সাগরের শান্তির ঢেউয়ের মতো এক প্রশান্তি। চোখে ছিল ভোরের আলো, আর মনে ছিল সেই অজানা কোলাহল! নাস্তা ছিল একেবারে সাধ্যের মধ্যে—২টা পরোটা, ডাল, ভেজিটেবল মিক্সড আর এক কাপ চা।মাত্র ১০০ টাকা খরচ হল!
তারপর শুরু হলো এক অবিস্মরণীয় হাঁটা, যেখানে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একে একে পা রেখেছিলাম কলাতলী বিচ, সুগন্ধা বিচ আর লাবনী বিচে। ১৯ বার এসেছি, কিন্তু প্রতিবার মনে হয়েছে, এবার যেন প্রথমবার দেখলাম!
এরপর ২০০০ টাকায় ডাবল বেডরুম বুক করলাম (প্রতি জন ৫০০ টাকা), দুপুর ১২টায় চেক-ইন করলাম।
দুপুর ২ টায় দুপুরের খাবারের জন্য বসে গেলাম, মেনু ছিল সাদা ভাত, ডাল, লইট্টা ফিশ কারি আর ভর্তা – মাত্র ১৮০ টাকা খরচ হইলো জনপ্রতি।
-------------------------------------
"অটো রিকশায় মেরিন ড্রাইভ এবং রহমত চাচার গল্প":
বিকেল ৩টায় মেরিন ড্রাইভের পথে যাত্রা শুরু হলো। রহমত চাচা আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে গেলেন। হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক—এই সব বিচের সৌন্দর্য যেন মনে গেঁথে গিয়েছিল। তিন ঘণ্টা ঘুরে, যখন রহমত চাচাকে ১০০০ টাকা দিলাম, তখন তিনি অবাক করে বললেন, “আমি টাকা নেব না, বরং তোমাদের বাসায় দাওয়াত দিচ্ছি।” আমি তো থ!
-------------------------------------
রাতের পরিকল্পনা: "লাইভ মিউজিক আর শহরের সৌন্দর্য"
সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে এসে এক কাপ চা নিয়ে ভাবলাম, এবার কী করা যায়? শহরটা ঘুরবো, আর লাইভ মিউজিক শুনব। কক্সবাজারে অনেক হোটেল-ক্যাফে লাইভ মিউজিক আয়োজন করে, আর আপনি ফ্রিতে উপভোগ করতে পারেন!
----------------------
"রহমত চাচার বাসায়"
রাত ১০টায় রহমত চাচার বাসায় ডিনারে গেলাম। মেনু ছিল সাদা ভাত, ডাল, বয়লার মুরগি আর ভর্তা। কিন্তু সে খাবারের স্বাদ—ভুলে যাওয়া পৃথিবীও মনে হচ্ছিল তখন কাছে চলে এসেছে। মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীটা যেন আমাদের জন্যই তৈরি!
-----------------------
রাতের শেষ অধ্যায়:
রাত ১১টায় আবার সমুদ্রের পাড়ে চলে গেলাম। সাগরের গর্জন, বাতাসের ভেতর আমাদের ৪ বন্ধু গান গাওয়া শুরু করলাম। সমুদ্রের বুকে গান উঠলো:
“একা লাগলে বলিস
মনে মনে আমার নামটা নিস
তোর মুড অন করে দেবো
একটা ট্রিট দিয়ে দিস
উড়ি একসাথে নীলে নীলে
উড়ি একসাথে মিলে ঝিলে…”
আমরা হেঁটেছি, গেয়েছি , রাত ২টা পর্যন্ত সমুদ্রের মাঝেই ছিলাম।
-------------------------------------
"তৃতীয় দিন: The Last Day! ":
সকাল ৮টায় আবার সেই চেনা নাস্তা—পরোটা, ডাল, ভেজিটেবল মিক্সড আর চা। ১০০ টাকায় শুরু হলো শেষ দিন। দুপুরে চেকআউট করে, ১২:৩০টায় আবার ঢাকার পথে রওনা দিলাম। ৬৯৫ টাকার টিকেট দিয়ে ফিরে গেলাম সেই জগতের বাস্তবতায়, যেখানে কক্সবাজারের স্মৃতি রয়ে গেল।
------------------------
রহমত চাচার ভালোবাসা আর কিছু হাসি-মজার মুহূর্তের মূল্য আসলে ঠিকভাবে মাপা যায় না। আর সেই স্মৃতিগুলো? সেগুলো তো মাপতেই অসম্ভব!
----------------------------
এই ছিল আমাদের ২ দিন ২ রাতের কক্সবাজার সফরের গল্প। শেষ হয়নি, আরো অনেক গল্প বাকি আছে। রহমত চাচাকে নিয়ে, সাগরের পাড়ে, বন্ধুদের সঙ্গে... ভালোবাসার গল্প কখনো শেষ হয় না!
----------------------
গল্পকথক :
সৌরভ
জাবি-৩৮ ব্যাচ, আইবিএ
ফাউন্ডার, Sand & Sea - স্যান্ড এন্ড সী
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০