-----------
জীবন যেখানে যেমন। আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলছি। ছুটে চলা, বড় হওয়া, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। সবই সম্ভব হয় কারও প্রচেষ্টায়। আর নিরবে নিভৃতে সেই ভূমিকা পালন করেন একজন বাবা, ভাই কিংবা একজন মা।
গত ২৯ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে রিক্সা করে নীলক্ষেত যাচ্ছিলাম রিক্সাচালক কাকাটা ছিলেন বয়স্ক, বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ প্রায়। আমি অনবরত উনাকে লক্ষ্য করছি, এই শীতের মধ্যেও তিনি ঘামে জর্জরিত, গলার গামছাটা দিয়ে বার-বার ঘাম মুছতেছিলেন। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবনের গাড়ি।
খুব কৌতুহলী হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কাকা আপনার তো কষ্ট হচ্ছে, আপানার ছেলে-মেয়ে কেউ নেই?’ তিনি তার ভাষায় বললো, ‘মাগো থাকলেই কী! যার-যার সংসার, যে যার-যার মতো। আমাদের খবর আর কে রাখে?’
তার কথায় অভিমান খুব স্পষ্ট। বৃদ্ধ বাবাকে রেখে ছেলে-মেয়েগুলো হয়তো আলাদা
সংসার পাতানে। তার খোজ-খবর নেওয়ার মতো হয়তো তাদের সময় হয়ে উঠে না। কিংবাইচ্ছে করেই নেয় না। অথচ এই বাবা এক সময় তাঁদের বড় করতে নিজের
সমস্ত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন।
আমাদের পারিপার্শিক বাস্তবতায় অনেক সময় দেখি, বাবা তার ছেলে-মেয়েদের
শিক্ষিত করতে নিজের শেষ সম্বল টুকু নষ্ট করে। অশিক্ষিত বাবা আশা করেন,
তার শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে শেষ বয়সে তাকে আশ্রয় দিবে। খোঁজ-খবর রাখবে। কিন্তু
বাবাদের জায়গা শিক্ষিতদের বাড়িতে হয় না। তাদের আশ্রয় হয় বিদ্ধাশ্রমে।
বাবাদের এ বড় ব্যর্থতা! নিজের সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে তারা পারেনি।
এ ব্যর্থতার ফলে জীবনের শেষ বয়স নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আনন্দ-আহ্লাদের
বিপরীতে বৃদ্ধাশ্রমের করিডোরে কেটে যায়।
প্রতি বছর আমাদের দেশে শিক্ষিতদের হার বাড়ে। কিন্তু বাড়েনা মানবিক
শিক্ষার হার। আমরা কী আসলেও শিক্ষিত হচ্ছি? যদি শিক্ষিত হই সত্যিকার
অর্থে, তাহলে কেনো এক বৃদ্ধ বাবা এখনো রিক্সা চালায়! তাহলে কেনো এত বাবা-
মা আজ বৃদ্ধাশ্রমে!
লেখক: ফাতেমা আলী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০