মোসাঃ সামিনা আক্তার:ঢাবি
হে বিশাল নিশ্চল আকাশ, আমি কি পাবো কভু ছুঁতে তব এ হস্তে? কতবার আর তাকবো তোমাতে, শুধু এ নয়ন জুড়ে?
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার মাথার উপরের এই বিশাল আকাশটির শেষ কোথায়? কেমন হতো যদি আপনি দেখতেন আকাশ আর মাটি একসাথে মিশেছে? আসলেই কি পৃথিবীতে এমন কোন স্থান আছে? “হ্যঁ, আছে”!
যখন পৃথিবীর সুন্দরতম স্থানগুলোর কথা ভাবেন তখন নিশ্চয়ই পাহাড় পর্বত বা বনভূমির কথা মাথায় আসে।কিন্তু একবার ভাবুন তো বিশাল এলাকা জুড়ে লবণে ঠাঁসা কোনো সমভূমির উপর দাড়িয়ে আপনি সেটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন আর দেখেছেন আকাশ মাটির মিলন, তবে ব্যাপারটা কেমন হতো?ভাবতে অবাক লাগলেও পৃথিবীতে এমন স্থান আছে।আর সেটি হচ্ছে” সালার ডি ইউনি”। এটি হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ লবণ সমভুমি এবং দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম চমকপ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সালার শব্দটি স্প্যানিশ,যার অর্থ লবণের সমতল।আর ইউনি অর্থ ঘের বা পরিবেষ্টন করা। তাহলে একত্রে এর অর্থ দাড়ায় আবদ্ধভাবে পরিবেষ্টিত লবণের সমতল। বলিভিয়ায় অবস্থিত আলতিপ্লানো মালভূমির একটি অংশ সালার ডি ইউনি নামে পরিচিত।এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মালভূমি।বিষ্ময়কর এক আয়না ভূমি সালার ডি ইউনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চিলির সীমান্তের সঙ্গে অবস্থিত। এই লবণভূমি টি হাজার বছরের প্রাগৈতিহাসিক হৃদ গুলোর বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এটি ১০৫৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে যা প্রায় ১০ বিলিয়ন টন লবণ দ্বারা বেষ্টিত।
সালার ডি ইউনি সল্ট ফ্ল্যাটের চারদিক ঘিরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কিছু হৃদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লেগুনা কলোরাডা, লেগুনা ভার্দে নামের হৃদ দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্ষার সময় আশেপাশের হৃদগুলো থেকে পানি প্লাবিত হওয়ার ফলে এ লবণ ভূমি টি প্লাবিত হয় এবং সেখানে ২০ ইঞ্চির মতো গভীর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ইশ যদি কখনও পাখির মত আকাশে উড়তে পারতাম! ওই নীলাভ আকাশের শুভ্র মেঘে ভেসে বেড়াতে পারতাম ! সেখান থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও আকাশের শুভ্র মেঘের রাজ্যে চরে বেড়ানোর অনুভূতি প্রাপ্তি সম্ভব হতো! মরচে পড়া রেলগাড়ির সমাধি, চোখ ঝলকানো লবণের হৃদ, লবণের তৈরি হোটেল, ফুটন্ত কাদাঁর পুল, প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি ইত্যাদি কারণে সালার ডি ইউনি ভ্রমণপিপাসুদের নিকট অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য স্থল। লবণের তৈরি হোটেলটির নাম” লুনা সালাদা”। এখানে প্রবেশের শুরুতেই রয়েছে একটি প্রাচীন রেল কবরস্থান। এছাড়া আপনার কাছে থাকা সকল ডিভাইস চার্জ করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ লিথিয়াম রয়েছে। লবণ ও ব্যাটারির প্রাচুর্যে ভর্তি সালার ডি ইউনি শুধু পর্যটকদের লীলাভূমিই নয়।
আমেরিকার ভূগোল বিষয়ক জরিপ এখানে ৯ মিলিয়ন টন লিথিয়াম ধাতু রয়েছে তাছাড়া ২০১৯সালের এক গণনা অনুযায়ী লিথিয়াম ধাতুর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মজুদ রয়েছে এখানে। সালার ডি ইউনি তে শুষ্ক মৌসুমে রাত্রিকালীন শীতল আবহাওয়া, তীব্র মরুভূমির মতো সূর্যতাপ থাকা সত্বেও এখানে জীবনের স্থায়িত্ব অনেক বেশি। সালার ডি ইউনির জীব বৈচিত্র্য অসাধারণ ও মনমুগ্ধকর। এখানে অমোঘ সৌন্দর্যের অধিকারী গোলাপী রাজহাঁস ও বিরল প্রজাতির হামিং বার্ড রয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আপনি সামান্য দূরে দেখতে পাবেন এমন দৃশ্য,মনে হবে যেন আকাশ আর মাটি এখানে মিশেছে! যদিও আপনার চোখে দেখা এই সামান্য দূরটা কখনো কাছে হবে না! সে যেন এক চাঁদকে আপনার পিছনে ফেলা গল্পের মতো! তবুও উপভোগ করতে পারবেন যেন আকাশ আর মাটি এখানেই মিশেছে!
অবশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রাকৃতিক আয়না ভূমি ও বৃহত্তম লবণের সমতল ভূমির অপরূপ সৌন্দর্য সত্যিই মনমুগ্ধকর। তাইতো এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ দ্বিতীয় মালভূমি নামে বিবেচিত। যা অপরূপ সৌন্দর্যে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত। ” পৃথিবী তুমি আমায় করিয়াছো মুগ্ধ, যত দেখি ততই মনে হয় দেখিনি। তোমার বুকে আছে এমন অবাক দৃশ্য, নাম তার সালার ডি ইউনি!”