ঢাকামঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

পুঁথিসম্রাট জালাল খান ইউসুফী পুঁথিসাহিত্যের এক উজ্জল নক্ষত্র

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৩০ নভেম্বর ২০২১, ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

আনোয়ার হোসেন রনি সাংবা‌দিক ও ক‌বি

পুঁথিসাহিত্য আমাদের লোকজ সংস্কৃতি ঐতিহ্যের এক অনবদ্য অংশ। এক সময় বাংলার গ্রামে গঞ্জে ও প্রতিটি পাড়ায় ঘরে ঘরে ছিল পুঁথিকাব্য। সন্ধ্যায় রাত হয়ে গেলেই কুপি জ্বালিয়ে শুরু হত পুঁথিপাঠ আসর। সে সময় পুঁথিপাঠককে ঘিরে গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মনোযোগ সহকারে পরিবাবের সবাই শুনতেন পুঁথিপাঠ। প্রাচীনকালে মূলত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষেরাই ছিল পুঁথি অনুরাগী। তাদের লেখাপড়া বা ভাবনা-চিন্তার পরিধি আটপৌরে হলেও অন্যরা যে একে অবহেলা করতো, তা কিন্ত নয়। সেকালে পুঁথি ছিল সার্বজনীন। শিশু-কিশোর-বয়স্ক নির্বিশেষে সকলের কাছেই পুঁথি-সাহিত্যের অনুপম কাহিনি- গুলো ছিল অমৃততুল্য। আধুনিক যন্ত্র-সভ্যতার দাপুটে বাস্তবতায় প্রাচীন পুঁথিকাব্য, পুঁথি-কাহিনি বিক্ষিপ্ত ও বিলুপ্ত প্রায় হলেও আজো মানুষ ফিরে যেতে চায় স্বপ্ন, কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেলের সেই বিমূর্ত নান্দনিক স্টেশনে, যেখানে পুঁথিসাহিত্যের মিথ কল্পকথা, লোককাহিনি, লোকাচার, ধর্মকথা, রাজবন্দনা, হাসিকান্না, যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গের রূপছটায় বিরাজ করে অলৌকিক আনন্দ ভুবন। বারো আউলিয়ার বাংলাদেশে শাহজালাল পুন্যভুমি আধাত্নিক রাজধানী সিলেটে যার জন্মভুমি। এ সিলেটী ভাষায় ওলি-আউলিয়ার জীবন কাহিনি নিয়ে দেশবিদেশে এক সুপরিচিত খ্যতিমান কবি নাম। বাংলার আনাচে কানাচে পুঁথিকাব্য বিলুপ্ত হয়ে পুরাতন পুঁথিকাব্য এ সমাজে খোঁজে পাওয়া কঠিন । এসব পুঁথি নিয়ে জাতীয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের সিলেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র । কাব্যকথা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জালাল খান ইউসুফী। লোকজ সংস্কৃতির এ অভিবাবক হিসেবে দেশের আনাচে কানাচে পৌছে দিচ্ছেন লোকজ সংস্কৃতি র্বাতা । পুঁথিকাব্য ও লোকজ সংস্কৃতি সাহিত্য জগতে বাংলার এক জনপ্রিয় নাম।
আঠারো-উনিশ শতকে সিলেট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিকশিত নাগরী লিপিতে প্রচুর পুঁথি লিখিত হয়েছে। নাগরী লিপিতে পুঁথি লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- শীতালং শাহ্, আরকুম শাহ্, শাহনুর শাহ্, আফজল শাহ ওরফে আরমান আলী প্রমূখ। সিলেটের খ্যতিমান পুঁথিকারদের উত্তরসুরি হিসেবে বাংলা ভাষায় পুঁথিকাব্য রচনা করছেন জালাল খান ইউসুফী। তিনি কাব্যকথা সাহিত্য পরিষদের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার ঝরে পরা মেধাবী কবি সাহিত্যিকদের জাতীয় ভাবে তোলে ধরে নবীন প্রবীণ কবি সাহিত্যিকদের মেলবন্ধন সৃষ্টিকারি একজন মানুষ। তেমনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের সঙ্গে আধুনিক যুগের সেতুবন্ধন হচ্ছে পুঁথি। একারণে সুদূর অতীত থেকেই পুঁথিসংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা দৃষ্ট হয়। এদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথম পুঁথি সংগ্রহে হাত দেন কয়েকজন বৃটিশ নাগরিক। তাদের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণের আদি রচয়িতা নাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (১৭৫১-১৮৩০) অন্যতম। তিনি ১৭৭২ থেকে ১৭৮৩ সালে বাংলাদেশে অবস্থানকালে ১২টি বাংলা পুঁথি সংগ্রহ করেন, যা পরে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে ছিলেন।
জালাল খান ইউসুফী মধ্যযুগীয় পুঁথিসাহিত্য যা আজ বিলুপ্তপ্রায় তাকে আধুনিক অলংকারে হারানো পুঁথিকাব্যকে আবেদনময় রেখে যুগোপযোগী করে আমাদের সমাজে তুলে আনেন। তাঁর পুঁথিকাব্যের ছন্দ তাল আর মোহনীয় সুরের যাদু পাঠক শ্রোতার মনে মুগ্ধতা এনে দেয় অনায়াসে। তাই নিঃসংকোচে ভক্ত পাঠক ও শ্রোতারা যাঁকে পুঁথিসম্রাট অভিধায় অভিসিক্ত করে রেখেছে তিনি গণমানুষের কবি জালাল খান ইউসুফী। চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বুকে লালন করে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যবৃক্ষে সেচ ও সার দিয়ে যাচ্ছেন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। স্বভাবজাত এ চারণ কবি পথে পথে ঘুরে মানুষের জীবন আলেখ্য লেখেন সহজ সরল ভাষায় পুঁথির ছন্দ ও সুরে। সমাজ, রাজনীতির নানা পট-পরিতর্ন, জীবনের জটিলতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দ্বন্ধ, আনন্দ-বেদনা, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও কালের উল্লেখযোগ্য কাহিনিকে উপজীব্য করে তিনি রচনা করে যান কখনো পয়ারে, কখনো লঘু পয়ারে, কখনো ত্রিপদী, কখনো অক্ষরবৃত্তে, কখনো মাত্রাবৃত্তে অথবা স্বরবৃত্ত ছন্দে কাব্যের সহজ-সরল ভাষায়। বিজ্ঞান ও শিল্প বিপ্লবের এ আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে কবি এক দক্ষ কারিগরের পরিচয়ে স্বকীয়তা রাখেন । সময়ের চাওয়া-পাওয়া মাথায় রেখে পুঁথিকে আধুনিক সমাজ উপযোগী করে তুলেছেন। গাঁয়ের মেঠোপথ, লাঙল জোয়ালের বাঁধন কেটে পুঁথিকে তুলে এনেছেন শিক্ষিত সমাজের ড্রইং রুমে কিংবা বন্ধুদের চায়ের আড্ডায়। এতে তাঁর শিল্পশ্রী খুব সহজেই অনুমেয় হয়। সময়কে ধারণ করে পুঁথিসাহিত্যকে বহতা নদীর মতো তরঙ্গায়িত করে প্রবাহিত করে যাচ্ছেন । তাঁকে যুগস্রষ্টা পুঁথিশিল্পী বললে হয়তো অত্যুক্তি করা হবে না। গতানুগতিক সুর ও পাঠের ঢং ভেঙে তিনি অসংখ্য সুরে পুঁথি রচনা ও পাঠের চাল দেখিয়েছেন সফল ভাবে। এমনকাজ একজন শক্তিমান স্বভাবজাত লেখকের পক্ষেই সম্ভব।
আমরা মধ্যযুগীয় পুঁথিকবিদের পুঁথিকাব্যে মনোনিবেশ করলে দেখতে পাই সে সময়ের পুঁথিকবিগণ পয়ার, ত্রিপদী দুটি ছন্দেই চর্চা করেছেন, তার বাইরে, লঘু-ত্রিপদী, চৌপদী ও পঞ্চপদী ছন্দে দু’একজন লিখেছেন, কিন্তু‘ আমাদের আলোচ্য পুঁথিকার জালাল খান ইউসুফী পয়ার, লঘু পয়ার, ত্রিপদী, লঘু-ত্রিপদী, ত্রিপদী ভাটিয়ালী, পঞ্চপদী ভাটিয়ালী, কাব্যসুর বা সহজ সুর, ধুয়া, কাটাধুয়া, ষষ্ঠপদী ধুয়া, ভাওয়াল জারী সুর, পালাসুর, বন্ধুহে সুর, মজিদী সুরসহ পনেরটির অধিক সুর ও ছন্দে লিখতে এবং পড়তে পারেন। এদিক দিয়ে বলা যায় বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাসে এমন প্রতিভা বিরল। তার লেখার মধ্যে রয়েছে- পুঁথিকাব্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পুথিকাব্যে সাত বীরশ্রেষ্ঠ, পুঁথিকাব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনী, হাসুনামা (শেখ হাসিনার জীবনী), রোকেয়া বিবির করুণ কাহিনী, শোকদিবসের পুঁথিকাব্য, নজরুলনামা (নজরুলের জীবনী), হজরত শাহজালালের (র.) জীবনী, পিতায় করছে ছেলে কোরবানী, এরশাদ শিকদারের রোম-হর্ষক জীবন কাহিনী, শাহআব্দুল করিমের জীবনী, শুকপাখি ও কাজল রেখা ইত্যাদি পুঁথিকাব্যে তাঁর কর্মের উজ্জল স্বাক্ষর বিদ্যমান। যেমন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জীবন কাহিনী পুঁথিকাব্যর দৃষ্টান্ত-
বেতনে তার ঘর চলেনা এই কথা কাউকে বলেনা
অন্য কাজের আশা মনে রয়
উন্নিশশ উনষাটের মার্চে মিলিটারী চাকরি হয়
ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তাকে সাধারণ এক সৈন্য করে লয়।

প্রথমে প্রশিক্ষণ চলে তারপরে তার পোষ্টিং হলে
তিন ডিসেম্বর দিনাজপুরে যান
সাড়ে দশটি বছর নূরে দিনাজপুরে দিন কাটান
উন্নিশশ সত্তুরের জুলাই হেডকোর্য়াটার যশোরেতে যান।

যশোরে তার ডিউটি চলে সত্তুরে নির্বাচন হলে
চারদিকে হয় শেখ মুজিবের জয়
শাসকগোষ্ঠীর সহ্য হয়নি নৌকা মার্কার এই বিজয়
পঞ্চপদী ধুয়া রেখে অন্য সুরে বলবো তা নিশ্চয়।
এ সুরটি পঞ্চপদী ধুয়ার সুর নামে পরিচিতি অর্জন করেছে ইতোমধ্যে। আবার তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের জীবন কাহিনী পুঁথিকাব্য ধুয়ার সুর ব্যাবহার করেছেন এভাবে-
বিসমিল্লা জবানে পড়ি বন্দনা গান শুরু করি
স্বরণ করি প্রভু নিরঞ্জণ
দ্বিতীয় বন্দনা করি রাসুল উল্লার পাক চরণ
যার খাতিরে নিরঞ্জণে ও গড়েছেন সুন্দর এই ভুবন।

তৃতীয় বন্দনা আমার জন্মদাতা পিতা মাতার
চতুর্থে ওস্তাদের রাঙা পায়
পিতা-তাতা-ওস্তাদ-গুরু আজকে যাদের উছিলায়
লিখতে পারি গাইতে পারি ও ঘুরি স্বাধীন এ বাংলায়।

পঞ্চমেতে বন্দনা গাই পাঠক-শ্রোতা-ভগ্নি আর ভাই
সালাম-আদাব-শুভে”ছা জানাই
চলোরে ভাই পাঠক শ্রোতা একাত্তর সালেতে যাই
মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও যুদ্ধের বিজয় গাঁথা গাই।

আবার তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জীবন কাহিনী পুঁথিকাব্যে প্রচলিত ত্রিপদী ছন্দ ব্যবহার করে বন্দনা গেয়েছেন এভাবে-

ওহে দয়াবান প্রভু- গোনাগার আমি তবু
——-তোমার করুণা প্রভু চাই
নবীর উম্মত সারা- তোমার করুণা ছাড়া
——-তরে যেতে কোনো পথ নাই।

তোমার হাবীব নবী- তাঁর শাফায়াত কবি
——-পরকালে চায় হে মহান
তার শাফায়াত বিনে- এ অধম দ্বীনহীনে
——-করুণা চাহেনা এ নাদান।

তাই সে রাসূল স্বরি- হাজার দরূদ পড়ি
——-লেখিবার শক্তি কিছু চাই
মধুমাখা ছন্দ দাও- কলম চালিয়ে নাও
——-সর্বময় শক্তি তব শাঁই।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই যে সর্বময় ক্ষমতার আধার, তাই তিনি বর্ণনা করেছে এবং পিয়ারা হাবিবের প্রশংসাও গেয়েছেন এসময়ের পুঁথিছন্দের যাদুকর জালাল খান ইউসুফী। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জীবন কাহিনী পুঁথিকাব্যে ত্রিপদী ভাটিয়ালী ছন্দে লিখেছেন-
যুদ্ধ করে মুক্তিসেনা পাকিস্তানের ভিত নাড়ায়
সিপাহী মুস্তফা কামাল যুদ্ধে প্রাণ হারায় ॥

কি বলবো যুদ্ধের কাহিনী একাত্তরের কথা
রক্ত নদী মূল্য দিয়ে পেলাম স্বধীনতা।
স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পাকিস্তানে হাত বাড়ায়
সিপাহী মুস্তফা কামাল যুদ্ধে প্রাণ হারায় ॥

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান
রেসকোর্স ময়দানে শোনান স্বাধীনতার গান।
নেতার ডাকে যার-যা-ছিল তাই নিয়ে সব যুদ্ধে যায়
সিপাহী মুস্তফা কামাল যুদ্ধে প্রাণ হারায় ॥
আবার কাটাপয়ার ব্যবহার করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জীবন কাহিনী পুঁথিকাব্যে লিখেছেন-
প্রথমে বন্দনা করি মালেক শাই
কোনো কালে যাহার সমান কেহ নাই।
পয়গম্বর বন্দনা করি দ্বিতীয়া
তার প্রশংসা করবো আমি কী দিয়া।
শ্রেষ্ঠ নবী রাসুল তিনি আল-আমিন
পরকালে পাপিগণের যে জামিন।
মহান প্রভুর হাবিব নবী সরোয়ার
তার উছিলায় ক্ষমা করো পরোয়ার।
পুঁথি তাঁর প্রাণের সাথে মিশে থাকলেও সাহিত্যের অন্য শাখা গুলোতেও জালাল খান ইউসুফীর সফল বিচরণ আমরা দেখতে পাই। আধুনিক কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও ছোটগল্পেও তিনি সফলতার স্বাক্ষও রেখে চলেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস-
ফুলের কাঁটা, স্মৃতি, দু’মুঠো মাটি, চাঁদের পরশ, নীল ঢেউ, ছুঁয়ে যাই ইত্যাদি। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য ছোটগল্পগ্রন্থ- জেলে ও ডাকাতের গল্প, বৃষ্টি গিয়েছিল পরীর দেশে, একাত্তরের কিশোর যোদ্ধা, যামদো ও রামদো ভূতের গল্প, সাত যুবকের ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে থাকার গল্প ইত্যাদি। কিশোর কাব্যগ্রন্থ- শুভ্র তুলোর নাও, নীল সবুজের পাল, চিরিপ চিরিপ কিরিপ কিরিপ। এছাড়াও নতুন লিখিয়ে বন্ধুদের জন্য লিখেছেন- ‘লেখালেখির কলাকৌশল’।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আধুনিক যুগের পুঁথিসাহিত্যের ইতিহাস নতুন সংযোজন তাঁর সংকলিত ‘বাংলাদেশের পুঁথিকাব্য’ গ্রন্থ। তার লেখা রোমান্টিক কবিতা পাঠে আমরা তার প্রেমিক হৃদয়ের পরিচয় পাই। বিরহী কপোতের মতো তিনি তাঁর কাব্যে রচে যান ব্যথিত হৃদয়ের আর্তনাদ-
আমার ব্যথায় আমিই কাঁদি আমার দুখে কেঁউ কাঁদে না
কষ্ট ব্যথার মনের সাথে কারো হৃদয় কেউ বাঁধেনা
দাগ লাগা এক মনের মাঝে নতুন যে কেউ দাগ দাগে না
ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না কি”ছু আমার ভাল্লাগে না।
কবি জালাল খান ইউসুফীর কবিতার বিষয় বৈচিত্র ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত হয়। অগাধ দেশপ্রেম ও প্রকৃতি প্রেমেপূর্ণ তাঁর শুভ্র তুলোর নাও কিশোরকাব্য গ্রন্থে’ বিচিত্র ধরনের লেখার মধ্য থেকে বর্ষাকালের ছবি কবিতাটি তুলে ধরছি-
বৃষ্টি ঝরে বৃষ্টি পড়ে টুম-টুমা-টুম-টুম
ঝুম-ঝুমা-ঝুম-ঝুম।
গাঁয়ের পথে ভীষণ কাদা
আঁধার আকাশ আবার সাদা
বর্ষাকালের ছবি

অনেক রকম দৃশ্য দেখে পদ্য লেখেন কবি।
শিশুতো ‘চিরিপ চিরিপ কিরপ কিরপ’ ছড়াগ্রন্থে’ আমরা অগাধ দেশপ্রেম ও প্রকৃতি সচেতন একজন কবিকে দেখতে পাই-
নতুন পাতা নতুন কুঁড়ি নতুন নতুন ফুল
গোলাপ-বেলি-হাসনা-হেনা দোলছে দোদুল দুল।
শিমুল জবা কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছে গাছে
বাতাস এল তালবেতালে ফুল গুলোসব নাচে।
তাছাড়া ফুলের ছড়া, ফলের ছড়া, মাছের ছড়া, পাখির ছড়া, পিঠার ছড়া, বিড়ালের বা”চা, গরীবের শীত, সত্যের চাষ, শরৎ এলো তাই এমন নানা নামের লেখা থেকে অনুমান করা যায় যে তার কবিতায় বিষয় বৈচিত্রতার ছোঁয়া কম লাগেনি। যেমন-
যুদ্ধ ফেরত বীর বলে মা সব হারিয়ে এলাম
আব্বু এবং বোনকে দিয়ে স্বাধীনতা পেলাম
আজ থেকে মা লাখ বোন আমার
দৃপ্ত পায়ে চলবে
যুগের পরে যুগের মানুষ এই ইতিহাস বলবে
মাগো এই ইতিহাস বলবে।
(শুভ্র ভুলের নাও, কাব্যগ্রন্থ)
এই লেখাটিতে কবির দেশপ্রেমের চেতনা মূর্ত হয়েছে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার মতো। অপরূপ প্রকৃতির বর্ণনা তার কবিতায় যেন জয়নুলের চিত্রকল্পের প্রকাশ পায়। তার উদাহরণ আমরা এ কবিতায় এভাবে দেখতে পাই-
গ্রীষ্ম শেষে মেঘের বাদাম বর্ষা এসে উড়ায়
নানান রঙের পাল দেখে মন আনন্দে খুব জুড়ায়।
শরৎ কালে নদীর পারে
শুভ্রকাশের সারে সারে ওরে সাদা পাল
শিমুল জবা কৃষ্ণচূড়ার পাল টুকটুক লাল।

স্বর্ণালী ধান সোনার বাদাম হেমন্তী গায় গীত
ঘোর কুয়াশার বাদাম উড়ে আসছে এবার শীত।
নীল সবুজের পাল উড়ে গাঁয়
ঋতুর রাজা বসন্ত চায় রোদের বাদাম তুলে
নীল সবুজের পাল ভরে যায় নানান ফুলে ফুলে।

আমার এদেশ নীল সবুজের পাল উড়ানো নাও
সকল দেশের রানী- মাকে যাও না দেখে যাও।
(নীল সবুজের পাল, কাব্যগ্রন্থ’)
তদুপরি সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ কবি জালাল খান ইউসুফী সাহিত্য সাধনার মধ্যদিয়ে সকল জাতি, সকল গোষ্ঠি, সকল দেশ সকল সময় ও তাঁর কালকে জয় করে নিবেন। বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাসে পুঁথির ছন্দে রচিত হয় সম্পাদকীয় মাসিক কাব্যকথা পত্রিকা, আর সেই পত্রিকার সফল সম্পাদক জালাল খান ইউসুফী। পুঁথিসাহিত্যের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র নিজের আলোয় আলোকিত করে চলেছেন আমাদের আধুনিক পুঁথিসাহিত্যের ভুবন। তিনি কবিতা গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস ইত্যাদি দু’হাতে লিখলেও পাঠক শ্রোতা ইতোমধ্যেই তাঁর নানা সুর ও ছন্দের পুঁথিকে ব্যাপক ভাবে গ্রহণ করেছে, তারই বাস্তব প্রমাণ লেখা ও পড়ার কারণে তাঁর পাঠকশ্রোতারা তাকে পুঁথিস্রাট উপাধিতে ভূষিত করেছে। শুধু তাই নয়, উদার দিগন্ত সাহিত্য সংসদ ও পাঠাগার নামে একটি সাহিত্য সংগঠন সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে এক বিশাল জনসমুদ্রে তাঁকে ভূষিত করে পুঁথিসম্রাট উপাধিতে। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুঁথির আশেক শ্রোতারা তাকে একের পর এক পুঁথিসম্রাট অভিধায় ভূষিত করে সংবর্ধিত করে যাচ্ছে।
তার আলোকে আরো দ্যুতিময় করতে, আধুনিক বাংলা পুঁথিসাহিত্যের বিস্তৃতি বৃদ্ধির জন্য আমাদেরও তার সহযোগী হতে হবে। তবেই আমরা পেতে পারি পুঁথিসাহিত্যের আধুনিক একটি উজ্জ্বল ভুবন।

আ‌নোয়ার হো‌সেন র‌নি
সাধারণ সম্পাদক,
ছাতক প্রেসক্লাব, সুনামগঞ্জ

74 Views

আরও পড়ুন

লোহাগাড়ায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব‌ সম্পন্ন

নাগরপুরে শিক্ষক নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ৫৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত ছানোয়ার

নাগরপুরে দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪ অনুষ্ঠিত

বাইশারী বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ফ্যামিলি বাসাসহ ৪ দোকান পুড়ে ছাই !!

সুন্দরবন’র আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও শংকা কাটেনি এখনও

শেরপুরে ‌’কানেক্ট জাপান এডুকেশন’ ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধন

আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

চলছে তীব্র তাপদাহ এতে জনজীবন অতিষ্ঠ গ্রীন ভয়েস কক্সবাজার জেলার বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ

রাসিক মেয়রের সাথে ফটোজার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ।

নাগরপুরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নতুন নেতৃত্বে হোসেন-ওয়াহিদ-কানিজ

রাঙামাটির কাউখালীতে বজ্রপাতে মৃত্যু-১ আহত-৪

বজ্রপাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে খাগড়াছড়িতে নিহত-৩