—–
ত্যাগের মহিমা নিয়ে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদের দিন সকালে ঈদ জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঈদ উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দেন ধর্মপ্রাণ ও সামর্থ্যবান মুসলমানরা। আল্লাহর রাহে নিজের জানমাল ও প্রিয়তম জিনিস সন্তুষ্ট চিত্তে বিলিয়ে দেওয়ার এক সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়। মূলত মনের পশুকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়াই ঈদুল আজহা’র মূল উদ্দেশ্য। ঈদ নিয়ে তারুণ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আনন্দেও। নানা আয়োজন, কার্যক্রম ও ঘোরাঘুরির মধ্য দিয়ে কেটেছে তাদের ঈদ।
তরুণ শিক্ষার্থীদের আনন্দে কাটানো ঈদ উদযাপন তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান সরকার শুভ।
সুন্দর-স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ উদযাপন
করোনা পরবর্তী কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঈদ পালন করলো মুসলিম সম্প্রদায়। এ উৎসবটিকে ঘিরে সকলের মাঝেই ছিল এক অন্যরকম আমেজ। আর এই আমেজ শুরু হয় ঈদের পূর্ববর্তী দিন থেকেই। হাতে মেহেদী পড়া, এছাড়াও ঈদের দিনের সকল কাজের প্রস্তুতি শুরু হয় এর আগের দিন থেকেই। ঈদুল আযহা মুসলিম ধর্মালম্বীদের এক ধর্মীয় ও প্রাণের উৎসব। ঈদের দিন সকাল হতেই মুসল্লিরা ঈদের নামাজে অংশ নিতে শুরু করে। তারপর শুরু হয় আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানীর কাজ। আর এ কোরবানীর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবিকতা। আর এটি এক অন্যরকম অনুভূতি। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঘোরাঘুরি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পরিবারের সাথে তৈরি হয়ে ঘুরতে যাওয়া – একেকটি একেক রকম আমেজ। দুই বছর পর পাওয়া এই রৌদ্রজ্জ্বল এই ঈদকে বরণ করে নিয়েছে সবাই এবং তৈরি হয়েছিল এক আনন্দমুখর পরিবেশ।
সাফা আক্তার নোলক
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
————–
নির্মূল আনন্দে কেটেছে ঈদ
মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আয়োজন হলো ঈদ উৎসব। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষ এ উৎসবে শামিল হয়েছে। সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যে যার সাধ্যমতো খুশিতে মেতে ওঠেছে। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র দুটি দিন মুসলিম ধর্মের এ উৎসবের নাম ঈদ। ঈদের এ সময় পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু -বান্ধবদের সাথে অন্যরকম অনুভুতির প্রকাশ ঘটেছে। নতুন পাঞ্জাবি পড়েছি,সেলফি তুলেছি বন্ধুদের সাথে। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। সবাই একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। কোরবানি দেওয়ার পর মাংস বন্টনে অংশগ্রহণ এবং গরীবের মাঝে বিতরণ করেছি। বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে এসেছিলো। অনেক হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, আনন্দে পালিত হয়েছে ঈদ। ঈদের দিন বিকাল বেলা নদীর পাড়ে শীতল বাতাশ খেতে ঘুরতে গিয়েছি। নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছি, মোটরসাইকেলে করে বিচরণ করেছি, ছোট্ট বেলার সকল বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে মন ভরে গেছে এ দিনে। অনেকদিন পর পরিবারকে সময় দিয়ে বেশ ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দিয়েছে এই দিনটি। আবার কেউ তার পরিবারকে সময় দিয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই ঈদের রান্না হয়েছে ব্যাপক আয়োজনে। হরেক রকমের মুখরোচক বিভিন্ন খাবার। এ দিনটি আমাদের সমাজে সৌহার্দ্য সম্পীতি বয়ে এনেছে। সব মিলিয়ে অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দিয়েছে ঈদের দিন।
রবিন আহমেদ রাজিন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
——————
ঈদ আনন্দ আমাদের নিত্য দিনেই কাম্য
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মধ্য দিয়ে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের দিন পুরোটাই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায়, এরপরে কোরবানির পশু কে গোসল করানো, তারপর সবাই একসাথে গোসল করতে যাওয়া সবকিছুই অত্যন্ত স্পেশাল ছিল। গোসল করে এসে নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরে সুগন্ধি ব্যবহার করে পরিবারের সবাই একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার মধ্যে এক স্বর্গীয় সুখ পরিলক্ষিত হয়। নামাজ পড়ে এসে পশু কোরবানি, পশুর মাংস কাটা, মাংস বন্টন, মাংস বিতরণ কাজগুলো অন্যান্য দিন থেকে ঈদের দিনকে অনন্য ও উপভোগ্যময় করে তোলে। তবে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যেয়ে মিষ্টি খাওয়া এবং ঈদ সালামি নেওয়া বিষয়টি সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। ঈদের দিনে পড়ন্ত বিকালে যখন পাখিগুলো বাসায় ফেরে তখন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পরিবারের সকলে একসাথে তোলা ক্যামেরা বন্দি ছবির মর্মই আলাদা। এভাবে ঈদের আনন্দ প্রত্যেকটি মনে বিচরণ করে অনাবিল খুশি আর আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি করে।
তাজুল ইসলাম তাসিন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
—————–
ত্যাগই হোক ঈদের মর্মকথা
ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। ইসলামের প্রতিটা ঈদ ত্যাগ করতে শেখায়। গরীব-দুঃখীদের সাথে নিজেদের মাংস ভাগাভাগি করার মাঝেই থাকে প্রকৃত সুখ। এই একটা ঈদ যখন মাংস দেওয়ার মাধ্যমে সবার সাথে কুশল বিনিময় করা হয় এবং দিনটা ভালো কাটে। গ্রামের বাইরে থেকে এসে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া, আড্ডা দেওয়া, ঘুরাঘুরি করা বিষয়গুলো ঈদের আমেজকে নতুন উদ্দীপনায় জাগিয়ে তুলে। সময়মত ফিরতে পারবো কি-না, স্পেশাল দিনেও এই একটা টেনশন কাজ করে। তারপরও এবারের ঈদটা খুব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে অনেক আনন্দের সাথে কেটেছে। ঈদ শেষ হতে না হতেই বোনের বিয়ে। একটা আনন্দের ইতি টানার আগেই আরেকটা নতুন আনন্দের সূচনা হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত মূল্যবান। সবটা দিয়ে উপভোগ করাই হোক জীবনের লক্ষ্য। ঈদ চলে গেলে আসবে, জীবন গেলে নয়। তাই, আসুন সবাই প্রতিটা দিন, ঈদের দিন উপভোগ করি আনন্দের সাথে।
উম্মে মাবুদা
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
——————-
সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিতে ঈদ উদযাপন
দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ গন্ডি থেকে মিলনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষকে উত্তীর্ণ করে যে কোন উৎসব অনুষ্ঠান। মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় এই ঈদ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো খুশি বা আনন্দ। আমরা সবাই এই দিনে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার প্রতি পরম শ্রদ্ধাভক্তিতে, পারস্পরিক প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে হৃদয়ের সব দরজা খুলে সম্পূর্ণভাবে নিজেদেরকে অভিব্যক্ত করে থাকি এই দিনগুলোতে। ঈদের সময় আমাদের বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের সমাগম ঘটে। বাড়ির ছেলেরা সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে এবং সুগন্ধি মেখে ঈদগায় নামাজ পড়তে যাই। বাড়ির মেয়েরা নতুন কাপড় পড়ে বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। আমরা বাসার সবাই বলতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কোরবানির পশুকে একটু আদর করে নি। আমাদের বাড়িতে যতক্ষণ কোরবানি না হয় ততক্ষণ আমরা কিছু মুখে দিই না, কোরবানী হওয়ার পর সকলেই একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। নামাজ শেষ হবার পর বাবা মামারা পশু জবাই করেন, আমরা সকলেই পশু জবাই দেখি। এরপর সারাটা দিন চলে যাই মাংস কাটাকাটি, মাংস বন্টন এবং মাংস বিতরণ। আমাদের বাড়ির ছেলেরা এ সকল কাজে ব্যস্ত থাকে। সারাদিন মাংসের কাজ শেষ হলে শুরু হয় এলাহি খাবারের আয়োজন। হরেক রকম পদের রান্না হয় যেমন কাবাব, কোপ্তা, কোরমা, রেজালা, বিরিয়ানি ইত্যাদি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় একসাথে আড্ডা দেওয়া, মুভি দেখা এবং সেলফি তোলা। বছরের দুটি ঈদে সকলে একসাথে একজোট হয়ে আনন্দে মেতে উঠি। এই ঈদে আমি অনেক অনেক আনন্দ করেছি, নতুন নতুন দায়িত্ব পালন করেছি, এই বছর গরিব মানুষকে মাংস বিতরণ করে খুব আনন্দ পেয়েছি। যারা বছরে ঠিক মতো মাংস খেতে পারে না তাদেরকে মাংস দিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। এইটা ঈদটা পরিবারের সাথে কাটাতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি।
সালিমা নবী
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
——————-
আনন্দ আর ত্যাগের ঈদুল আজহা
ঈদুল আজহার আনন্দ শুরুই হয় গরুর হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কেনার মাধ্যমে। এটা যেমন আনন্দের তেমনি ঝামেলাও বটে, আর যদি গরু কিনতে হয় শেষ দিনে তাহলে তো কথাই নেই। এবার এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতর সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের।আমরা ঢাকা থেকে এসেছি ইদের দুইদিন আগে, শুক্রবার দুই তিনটি গরুর হাট ঘুরেও গরু কিনতে পারেনি। শেষ দিনে রোদের তাপকে উপেক্ষা করে একরকম চওড়া দামেই গরু কিনে আনতে হয়েছে আমাদের। দিনের এমন ঝামেলা শেষে রাতে বাড়িতে আয়োজন মনের প্রশান্তির।
গ্রামীণ নানান খেলাধুলা আয়োজন ছিল সেখানে, সবকয়টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেও কোনো পুরষ্কার না পেলেও ছোটদের মুখে উৎফুল্লতার চিত্র দেখতে পেয়ে ইদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ঈদের দিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ঈদগাহ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম, আব্বু আম্মুকে সলাম করে ঈদগায় গেলাম, ইদের নামাজ শেষে ভাই, বন্ধু, গ্রামের সিনিয়র ভাইদের সাথে কোলাকুলি করে বাড়ি ফিরলাম গরু কোরবানি করার জন্য।
বাড়ির প্রথম গরু হিসাবে কোরবানি হয় আমাদের গরুটাই। আমাদের এবছর লোকবল কম থাকায় আমাকেই গরুর চামড়া ছাড়ানো, গরুর রান থেকে মাংস ছাড়ানো, মাংস টুকরো করা, ভাগ বসানো সব দায়িত্বই আমার উপর ছিল মোটামুটি, মাংস টুকরো করা ভাগ বসানো তো অবশ্য আরও অনেকে সহযোগিতা করেছে। খুব ভালোই লাগলো এমন দায়িত্ব পেয়ে যাকে বলে এক দিনের কসাই। কোরবানির ইদের সবচেয়ে আনন্দদের দৃশ্য হচ্ছে গরীবদের মুখে মুখের হাসি। আর আমি নিজে সে মুহুর্তের দর্শন করতে পেরেছি। এসব কিছু ছাপিয়ে ইদের আমেজ পুরোপুরি শেষ না হতে না হতেই আমাদের ফিরতে হয় ব্যস্ত নগরীতে স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে।
মুশফিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
——-+———-
আবু সুফিয়ান সরকার শুভ
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা