করোনার প্রভাবে থমকে আছে পুরো দেশ। স্থবির হয়ে আছে মানুষের নিয়মিত কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের কর্মপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রুটিন অনুযায়ী এতদিনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার হিংস্র থাবায় পরীক্ষা নেওয়ার কোন সুযোগ পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উল্টো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা দিতে হয়েছে। দেশ বাঁচাতে অঘোষিত লকডাউন পন্থা বেছে নিয়েছে সরকার। গৃহবন্দীর দিনে কিভাবে কাটছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দিন। সেসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে লিখেছেন- মুহা. ইকবাল আজাদ।
ইসরাত জাহান অপূর্বা।
হলিক্রস কলেজ, ঢাকা।
আমাদের পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে হুট করে বাসা ফিরতে হবে, এমনটা কখনো কল্পনায় আসেনি। করোনার প্রভাবে কিছুদিন আগে হোস্টেল ছেড়ে বাসায় ফিরি। এতদিন গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হবে এটাও ভাবনায় আসেনি। সামান্য কিছু বই নিয়ে বাসায় এসেছি। ইচ্ছে না থাকলেও এখন পাঠ্যবই রিভিশিনে সময় কাটাই। কোন অধ্যায়ে নিজেকে দুর্বল মনে হলে একটু বেশি করে পড়ি। যদিও পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় পড়ায় ততটা আগ্রহ কাজ করছে না। তবুও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। গল্প, উপন্যাসে আমার বেশ দুর্বলতা। বইমেলা থেকে কেনা সব বইগুলো ইতিমধ্যে পড়ে শেষ করেছি। যেহেতু রমজান মাস চলছে, ধর্মের প্রতি যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছি। সুযোগ পেলে কোরআন তেলওয়াত করা হয়। নফল নামাজ আদায় করা হয়। সবমিলিয়ে অবসর সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
রিফাত বিন জামাল।
সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট।
লকডাউনের এই সময়টুকু বিরক্তিতেই কাটছে বলা যায়। রুটিনমাফিক কিছু চলছে না। পরীক্ষা হচ্ছে না বলে পড়াশোনার ছন্দপতন ঘটেছে। কিছুদিন আগেও পরীক্ষার জন্য কিছুটা মানসিক চাপে ছিলাম। পরীক্ষা না হওয়ায় এখন অনেকটা কমেছে। আমার ক্রীড়া প্রতিবেদক হওয়ার খুব ইচ্ছে। সুযোগ পেলেই এখন ক্রীড়া জগতে বিচরণ করা হয়। খেলাধুলা নিয়ে জানার খুব চেষ্টা করছি। ক্রীড়া মহলের নানাবিধ বই পড়া হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ছি। এই অবসরে নিজেও লেখার চেষ্টা করছি। কয়েকটি ওয়েবসাইটে খেলাধুলা নিয়ে ইতিমধ্যে লিখেছি। এতকিছুর মাঝে পড়াশোনাকে একেবারে ভুলে বসিনি। অনিয়মিত হলেও পাঠ্যবইগুলো পুনরায় পড়া হয়। আমার পরিচিত অধ্যায়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে আমার দ্বারা সেসব অধ্যায়ে কোন ভুল না হয়। পাশাপাশি রমজানে কোরআন মাজীদ অর্থসহ বুঝে পড়ার চেষ্টা করছি।
তিশা আক্তার তন্নী।
আই.ই.এস স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা।
বাল্যকাল থেকে আমার ধর্মভীরু মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠা। পূর্বের ন্যায় এখনো প্রতিনিয়ত আমার দিনের সূচনা ঘটে কোরআন তেলওয়াত এর মাধ্যমে। করোনার এই বন্ধে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি একটু বেশি ঝুঁকছি। তবে পড়াশোনা একেবারে থেমে নেই। নিয়মিত পাঠ্যবইয়ের পুনরাবৃত্তি করছি। যেহেতু মেডিকেলে পড়ার প্রবল ইচ্ছে। সেহেতু জীববিজ্ঞান বইটা তুলনামূলক বেশি পড়া হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে ‘টেইন মিনিটস স্কুল’ এর লাইভ ক্লাসগুলো করা হচ্ছে এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলোর জন্য অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেলের প্রস্তুতির জন্য বাসায় বসে বিগত সালের প্রশ্নগুলোর সমাধান করছি। করোনার প্রভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আমাদের উপকার নয়, বরং ক্ষতিই করেছে। পরীক্ষার জন্য পড়াশোনায় অন্যরকম একটা স্পৃহা সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে পরীক্ষার দিনক্ষণের অনিশ্চয়তায় অধ্যয়নের আগ্রহটা অনেকখানি হারিয়ে বসেছি, তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আশরাফ আলী।
আলআমিন একাডেমি, চাঁদপুর।
গৃহবন্দীর দুর্বিষহ জীবনটা অলসতায় হারিয়ে যাচ্ছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যাপারটি আমার পড়াশোনার খেই হারিয়েছে। দিন কাটছে গান শোনা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এপ্সগুলোতে। এখন আর নিয়ম করে পড়াশোনা করা হয়ে উঠে না। মাঝেমধ্যে পাঠ্যবইয়ে চোখ বুলানো হয়। পরীক্ষা নেই বলে পড়াশোনার আগ্রহে ভাটা পড়েছে। আমার স্মরণশক্তির স্থায়িত্ব তুলনামূলক কম-ই। পরবর্তীতে ভুলে যাওয়ার ভয়ে এখন খুব জোরালো ভাবেও পড়তে পারছি না। এতকিছুর মাঝেও আমি ইন্টারনেট থেকে একটা ভালো সুবিধা গ্রহণ করছি। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে ইউটিউব থেকে ‘ইংলিশ স্পিকিং’ ভিডিওগুলো দেখছি। বাসায় বসে নিয়মিত চর্চা করছি। সবমিলিয়ে বলা যায়, পড়াশোনা নয়, বরং হেলায় কাটছে দিন। পৃথিবীর সব অসুখের ঘোর কেটে উদিত হবে সুদিন। সেদিন থেকে হয়তো আমার কিংবা আমাদের সবকিছু আবার নিয়মমাফিক যাত্রা করবে।