আব্দুল মুনতাকিন জুয়েল
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ ছাড়াই ফেলে দেওয়া কনটেইনার-বোতলের মাধ্যমে বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী শাহীন।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই বয়সেই ৪০টি বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছে। শাহীনের আবিষ্কারের তালিকায় রয়েছে ভূমিকম্প সতর্কতা অ্যালার্ম সিস্টেম, চুরি রোধে অনলাইন মেসেজিং সিস্টেম। তার আশ্চর্যমূলক আরেকটি আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোনের গোপনীয়তা রক্ষার্থে রয়েছে এমন এক ধরনের বিশেষ চশমা। যা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনকে ব্যবহারকারীর চোখে ঠিকঠাক দেখালেও অন্যান্যরা চোখে সাদা দেখতে পাবে।
বর্তমানে বেতার-বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিষয়ে গবেষণা করছেন এ ক্ষুদে বিজ্ঞানী। অল্প দূরত্বে সাফল্য পেলেও তা ৩ কি.মি. পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সে। এলাকায় বিজ্ঞানী নামে পরিচিত শাহীনের বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খুকশিয়া গ্রামের মৃত শাহারুল ইসলামের ছেলে। পেশায় দর্জি
ছিলেন শাহীনের বাবা।
২০২১ সালে নাকাইহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় শাহীন। আর্থিক সমস্যার কারণে তার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া হয়নি। বর্তমানে নাকাইহাট ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছে।
কলেজে ভর্তির পরপরই ২০২৩ সালে ৪৪তম বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয় শাহীন। মেলায় তার আবিষ্কারগুলো জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার এনে দেয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান লাভ করে সে।
মানবিক বিভাগে পড়েও অসাধারণ বিজ্ঞানমনস্ক শাহীন। তার আবিষ্কারে মুগ্ধ-বিস্মিত স্থানীয়রা।তারা জানান, হাতের কাছে পাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে শাহীন বানিয়ে ফেলেছেন কোনো যন্ত্র। একের পর এক সফলতা তাকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে
এগিয়ে যেতে। এভাবে সে ৪০টির বেশী কাজে সফলতা পেয়েছে।
এ বিষয়ে খুদে বিজ্ঞানী শাহীন জানান, ছোটবেলা থেকেই বিশেষ কিছু দেখলেই তা নিয়ে গবেষণা- আবিষ্কারের অদ্ভুত এক আগ্রহ সৃষ্টি হয় মনে। যেখানেই কোনো সমস্যা দেখছেন সেটা সমাধান করার চেষ্টা করেন তিনি।
তিনি আরও জানায়, তার লক্ষ্য এসব যন্ত্রগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া। সেই সঙ্গে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু শাহীনের এগিয়ে যাওয়ার পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থসংকট। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চলমান এ অগ্রযাত্রায় ভ‚মিকা রাখতে দৃঢ় প্রত্যয়ী শাহীন।
শাহীনের মা শোভারাণী বলেন, বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আবিষ্কারের নেশা আমার ছেলের ছোটবেলা থেকেই। পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে শাহীন ৪র্থ।
স্বামী মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে ৩ ছেলে আর ২ মেয়েকে মানুষ করেছি। ছেলের ধারাবাহিক অর্জনে আমি গর্বিত। তবে অর্থসংকটে গবেষণা-আবিষ্কার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ছেলের সঙ্গে ব্যথিত তিনিও।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০