আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৫ মার্চ চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চ দুদিনই হত্যাকাণ্ড চালায়।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে যে জিয়া, তার দলের নেতারা ৭ মার্চের ভাষণের মর্ম বুঝবে না, এটাই স্বাভাবিক। ধরে নিতে হবে তারা তাদের পুরনো প্রভুদের ভোলেনি। তাদের পালিত দল হিসেবে তারা এখনও আছে।
সোমবার (৮ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনায় সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সে (জিয়াউর রহমান) তো আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে আসছে। তার জন্মও সেখানে। লেখাপড়াও ওখানে। সে কবে বাংলাদেশের হলো? চাকরি সূত্রে বাংলাদেশে এসেছে। সে সূত্রে বিবাহ করে পরে এখানে থেকে যায়। এটাই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদেরকে সম্মান দেয়া হয়েছে। কিন্তু এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেইমানি করেছে। সে এ হত্যাকাণ্ডের (১৫ আগস্ট) মূলহোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। যারা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, এ দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করবে?
তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এটা তাদের একটুও পছন্দ না। তাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু। বিলাসী জীবন কাটিয়েছে। এরা মানুষের কষ্ট বুঝবে কী করে? আমি আমাদের নেতাকর্মীদের বলবো, ওরা কী বললো, এটা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই, চিন্তা করার দরকার নেই। করোনায় তারা কতো কথা বলেছে, কিন্তু টিকা তো তাদের নিতে হলো। আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে বিনা পয়সায় দিচ্ছি। বিনা পয়সার টিকা তো বিএনপি নেতারা নিয়েছে। এর আগে কী বলেছে? এজন্য তারা কী বললো তা দেখার দরকার নেই।
সরকারপ্রধান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে একটি পূর্ণাঙ্গ গেরিলা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। একেকটা লাইন একেকটা নির্দেশনা। এটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। যে দেশ তিনি স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সে দেশের টেলিভিশন-রেডিও তার ভাষণ প্রচার করতে পারতো না। এটি প্রচারে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। তবে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, যারা দেশের আনাচে কানাচে এ ভাষণ বাজিয়েছেন।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা কিছু জানে না, বুঝে না। ৭ মার্চের ভাষণে কিছু খুঁজে পায় না। তারা এখন এ দিবসটি উদযাপন করতে গেছে। অথচ তারাই এটি নিষিদ্ধ করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদা পেয়েছে। নির্বোধরা এটি বুঝেনি। বুঝেছিল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল। এটাই বাস্তবতা। ইউনেস্কো সে ভাষণকে ঐতিহ্যিক দলিল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তারা এ ভাষণটি জাতিসংঘের সব ভাষায় প্রচার ও প্রসার করছে। নিউজউইক জাতির পিতাকে বলেছে, রাজনীতির কবি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, দক্ষ রণকৌশলী ছিলেন। তিনি তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতিকে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল; ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমরা সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ একজন বুঝেননি। তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সিরাজুল আলম খান। তিনি সেদিনের ভাষণের পর আমাদের বাসায় গেলেন। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, লিডার আপনি কী বললেন, সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে। সেখানে আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদসহ অনেকে ছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, ‘আপনারা এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? মানুষ তো খুশিতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে একসঙ্গে স্লোগান দিচ্ছে। মানুষ খইয়ের মতো ফুটছে।’ আব্বাকে বললাম, তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০