নিউজ ডেস্ক :
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরমধ্যে ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি পর্যায়ে কিছু পণ্য বাদে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আদায় করা হয়। নতুন বাজেটে আগাম কর ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। পাশাপাশি অগ্রিম কর সমন্বয় করার জন্য ব্যবসায়ীদের দুই কর মেয়াদের পরিবর্তে চার কর মেয়াদে সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এই প্রস্তাব করেন। তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা টাকার প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এ বছর দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি করার ক্ষেত্রে অগ্রিম করের পরিমাণ ৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া অগ্রিম কর সমন্বয় করার জন্য দুই কর মেয়াদের পরিবর্তে চার কর মেয়াদে সমন্বয় করা হবে। তাছাড়া আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর হ্রাস করে দেশীয় উৎপাদনমুখী কাঁচামাল সরবরাহ সহজতর করার পদক্ষেপ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার ৩৫ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এই স্তরের করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত এই বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি করহার কমানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফলে টানা পাঁচ বছর পর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে। এতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীরা উপকৃত হবেন। অন্যদিকে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে থাকলে বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়। এই অতি-ধনী শ্রেণির ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম হলে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী এক্ষেত্রে ৫০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। তিনি প্রস্তাব করেছেন ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম হলে তাকে ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। এছাড়া ১ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫ কোটি টাকার কম থাকলে ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। আবগারি শুল্ক বছরে একবার দিতে হয়, ব্যাংক এই টাকা কেটে রেখে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।
এছাড়া বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, ফলে বাড়তি কর টেলিযোগাযোগ কোম্পানি নিজেরা বহন না করলে গ্রাহকের ওপর চাপবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে টার্নওভার কর, সিগারেটের মূল্যস্তর বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দেশজ উৎপাদনে ভ্যাট ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ভ্যাটে বেশ বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে কোনও ভ্যাট দিতে হয় না। ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হয়। এই টার্নওভার কর ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া সিগারেটের নিম্ন ও নিম্নমধ্যম মূল্যস্তরে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।
করোনার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর স্থানীয় উৎপাদকদের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে এক বছরের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে সুবিধার আওতায় নতুন করে আরও ছয়টি খাতকে যুক্ত করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। সারচার্জের ক্ষেত্রে যাদের ২০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে তাদের করহার বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।
করোনাকালীন যারা সময়মতো করের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের দণ্ড সুদ মাফ করা ও যারা প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের ২ হাজার টাকা কর রেয়াত দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আছে, তাদের করহার গাড়ির সিসি ভেদে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গাড়ির মালিকদের বার্ষিক করের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির মালিকদের ১৫ হাজার টাকার কর বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি ১৫০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা; ২ হাজার সিসি থেকে আড়াই হাজার সিসি পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা; ২৫০০ সিসি থেকে ৩ হাজার সিসি পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা; ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা; ৩৫০০ সিসির বেশি হলে ২ লাখ টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া মাইক্রোবাসে ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক কর ধরা হয়েছে। এমনকি কার, জিপ রেজিস্ট্রেশনসহ বিআরটিএ প্রদত্ত অন্যান্য সার্ভিস ফির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে আগাম কর শিল্পের কাঁচামালের জন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগের মতো ৫ শতাংশই বহাল থাকছে। বর্তমানে নতুন বা পুরনো রিম সংযোজনে নির্ধারিত ২০০ টাকা কর নেওয়া হয়, যা মোবাইল অপারেটর দিয়ে থাকে। নতুন বাজেটে এই কর বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। স্থানীয় পর্যায়ে যারা সার্জিক্যাল মাস্ক ও পিপিই তৈরি করবে তাদের ভ্যাট মওকুফ করা হচ্ছে। মধ্যম ও নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্যস্তর গড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ছে। বেশ কিছু বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। তবে করোনা প্রতিরোধে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম আমদানি সহজলভ্য করতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি করলে এবং কর ফাঁকি দিলে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন বাজেটে। মূলত দেশ থেকে অর্থপাচার রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০