ঢাকা:
২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অধিনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১৬৫০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার যোগগাদানে জটিলতা নিরসনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে এই বিপুলসংখক কর্তাকর্তাগণ নিয়োগের ক্ষেত্রে হইকোর্টে চলমান রিটের দ্রুত নিষ্পত্তি ও অন্যান্য জটিলতা নিরসনসহ দ্রুত যোগদানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবি জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বরাবার ১৬৫০ জন সুপারিশপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আবুল বশর নামে একজন চিঠিটি লিখেছেন।
চিঠি থেকে জানা যায়, দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটানোর ও কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক শূণ্য পদের বিপরীতের ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৬৫০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার স্মারক নং ১২.০১.০০০০.৩৮.১১.০০৮.২০১৭.৮২৬।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ অনুযায়ী আবেদনকারীদের মধ্যে ২০১৯ সালের ২ আগষ্ট প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ওই বছরেরই ১৩ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ১৮ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের ১৪ জানুয়রি পর্যন্ত যথাক্রমে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরিপেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারী যাচাই- বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রাথীদের তালিকা প্রকাশ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রাথীরা নিজ নিজ অঞ্চল ভিত্তিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মহোদয়ের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্রের অনুলিপি জমাদান ও পুলিশ যাচাই কার্য সম্পন্ন করে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চলাকালে স্বার্থধেষী মহলেরর উস্কানিতে কতিপয় অনির্বাচিত প্রার্থী মহামান্য হাইকোর্ট বরাবর রিট দায়ের করে যার পরিপ্রেক্ষিতে মহামন্য হাইকোর্ট নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয় এবং দ্রুত রীটের জবাব দিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রিটের জবাব দেওয়ার পূর্বমূহুর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রমন শুরু হয়। ফলে দেশে মারাত্মকভাবে ভাইরাস ছড়ানো এবং মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কায় মহামান্য হাইকোর্টের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এং সকল প্রকার রিটের শুনানি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপের সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়, এতে দেশ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তার মাঝে দেশে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের তথা সারা পৃথিবীর মানবতার মা, দক্ষ ও সুকৌশলী রাষ্ট্রনায়ক, বঙ্গবন্ধ তনয়া, আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন এবং ঘোষণা করেনে দেশের এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে। আপনি, অবগত থাকবেন কৃষককে এই কৃষি কাজে সার্বক্ষণিক সরাসরি সহযোগীতা করে থাকেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন। এজন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে কৃষক বন্ধু বলা হয়ে থাকে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর লেখা চিঠিতে আরও বলা হয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ বছরের বেশী অতিবাহিত হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ১ বছর ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এমতাবস্তায় আমরা বেকারত্বের কঠিন অভিশাপে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছি। নিয়োগ বোর্ডে সুপারিশপ্রাপ্তদের অনেকেরেই চাকরির বয়সসীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অনেক প্রার্থী নির্বাচতি হওয়ার পর স্বপ্নের এই চাকরির জন্য বেসরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে সুপারিশপ্রাপ্তরা দিনে দিনে হতাশায় মিজ্জিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, কোভিডি-১৯ এর ছোবলে অনেকেরই পরিবার পরিজনের মধ্যে মৃত্যু ঘটছে এবং অনেকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এছাড়াও অনেকের পরিবার তাদের ছোট পরিসরের ব্যবসায় লোকসানের ফলে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
আমরা খুবই অসহায় জীবন অতিবাহিত করছি যার সবটুকু ভাষয়া প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছি কিন্ত এখন পর্যন্ত এর কোন সমাধান পাইনি। তাই এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আপনার দৃষ্টিতে আনার লক্ষ্যে গত বছরে ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আশানুরুপ অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
আবুল বশর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের ভরসা “মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার কৃষি হবে দুর্বার” এই টেকশই কৃষিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্রুত প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত উসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের যোগদানের মাধ্যমে দেশ ও কৃষককে সহযোগীতা করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাননীয় পরিষদ সচিবের সুদৃষ্টি এবং সহায়ক ভুমিকা কামনা করা হয়েছে। এছাড়া দেশের কৃষকের সাথে কাজ করে দেশকে সমৃদ্ধ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে সংশ্লিষ্ট সকাল কর্মকর্তাদের দ্রুত যেগাদানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপারিশপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল বশর সোনালীনিউজকে বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি নির্ভরশীল দেশ এবং এদেশের ৮০শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্ঠায় কৃষি দেশের অর্থনৈতিক প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। অথচ এই ক্ষেত্রটি নিয়ে কাজ করা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ পদ এখনও শূণ্য রয়েছে। যা দেশের কৃষি তথা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার জানামতে, সারাদেশে এই সময়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে যে পরিমাণ লোকবল থাকার কথা তার অর্ধেকেরও বেশি শূণ্য রয়েছে।”
তিনি বলেন, “উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মূলত ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ পাবে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিন জন উপসহকারী থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু আমার জানামতে, বর্তমানে এমনও অনেক ইউনিয়ন রয়েছে যেখানে কেবলমাত্র একজন, অথবা দুই জন দিয়ে কাজ চলতেছে। ফলে বাকি পদগুলো শূণ্য থাকায় সেখানকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত না রাখার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা রয়েছে, তা বাস্তবায়নের সম্মুখ যোদ্ধা হলো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। কিন্তু আমরা নিয়োগ না পাওয়ায় কৃষকদের কোন রকম সহযোগীতা করতে পারছি না। এজন্য দ্রুত সময়ে নিয়োগের পথে জটিলতা নিরসন করে আমাদের দ্রুত নিয়োগ দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়াই আমাদের দাবি থাকবে।”
সুত্র : সোনালী নিউজ
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০