ঢাকাবুধবার , ২৫ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. জাতীয়

সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে হাত গুটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

প্রতিবেদক
রফিকুল ইসলাম জসিম
২৫ জুন ২০২৫, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রথম দিকে বিভিন্ন উদ্যোগ চোখে পড়লেও এখন কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের। সেই সম্ভাবনাময় সাগরাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে বিগত সরকার। একই পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। যে কারণে অধরাই থেকে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় জলরাশি।

সাগরে মালিকানা রয়েছে তেল-গ্যাস উত্তোলন না করা দেশের তালিকাতে সম্ভবত বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের পাশের অংশ থেকে মায়ানমার দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস উত্তোলন করছে। যে কারণে বাংলাদেশে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল বিবেচনা করা হয়।

সাগর নিয়ে বিগত সরকার একযুগের বেশি সময় হাত গুটিয়ে থেকেছে। ২০২৪ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এতে মার্কিন কোম্পানি এক্সোন মবিলসহ ৭টি আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা কোম্পানি দরপত্র কিনেছিল, ২টি কোম্পানি পেট্রোবাংলা থেকে ডাটাও কিনেছিল। দরপত্রের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন হন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দরপত্র জমার সময় এক দফা বাড়ানো হলেও দরপত্র জমাদান থেকে বিরত থাকে কোম্পানিগুলো। যে কারণে দরপত্র পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়।

এরপর পদক্ষেপ বলতে কেনো দরপত্র জমা হলো সে বিষয় একটি কমিটি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সেই কমিটির রিপোর্টের পর থেকেই সবকিছু হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, একবার দরপত্র আহ্বান করার পর কেউ অংশগ্রহণ করেনি। আবার দরপত্র আহ্বান করে যদি সাড়া না মেলে তাহলে বিশ্বের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। যে কারণে আমরা এখনই দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করছি না। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আগ্রহী পাওয়া গেলে তখন দরপত্র আহ্বান করা হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, দরপত্র কিনলেও কেন জমা করেনি, সে বিষয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে জানার চেষ্টা করেছি। অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে, সবগুলো আমাদের হাতে নেই। তারা ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), ডাটার সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছে। ডব্লিউপিপিএফ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনার কথা বলেছে। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই, আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি ডব্লিউপিপিএফ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। ২০০৮ সালে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ জন্য আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। কনোকো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ কিছু শর্ত সংশোধনের আবেদন করে। বাংলাদেশ সেই শর্তে সাড়া না দিলে ২০১৪ সালে ছেড়ে চলে যায়। অন্যদিকে অফসোর বিডিং রাউন্ড ২০১২ আওতায় ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড এসএস-৪ ও এসএস-৯ এর চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ওএনজিসি ভিদেশ কাঞ্চন-১ কূপ খনন করেছে, আরও দু’টি অনুসন্ধান কূপ খনন করবে।

২০১৭ সালে এসএস-১২ ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি পসকো দাইয়ুর সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। ২০২০ সালে ব্লক ফেল চলে যায় পসকো দাইয়ু। ২০২৪ সালের আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। কয়েক মাসের কাজ পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) আপডেট করতেই ৫ বছর সময় পার করে দেয়।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য অনেক জায়গায় ছাড় দেওয়া নতুন পিএসসি করা হয়। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে। কিন্তু তারপরও কোন আগ্রহী প্রতিষ্ঠান না পাওয়াটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মডেল পিএসসি ২০০৮ প্রণয়ন কমিটির প্রধান মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেকে মনে করেছিলেন গ্যাসের দাম বাড়ালেই কোম্পানিগুলো দৌড়ে আসবে। সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেনো জমা হয়নি সেটা তালাশ করার পাশাপাশি কেনো মাত্র ৭টি কোম্পানি দরপত্র কিনেছে সেটাও দেখা দরকার।

পিএসসিতে কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে, এখানে শর্ত দেওয়া হয়েছে দৈনিক ২০ হাজার ব্যারেল (তেলের সমান) গ্যাস উত্তোলন করে এমন কোম্পানি দরপত্র কিনতে পারবে। এখানেইতো অনেক কোম্পানি বাদ পড়ে গেছে। আমি মনে করি গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ১০ হাজার এবং অগভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ৫ হাজার ব্যারেল হওয়া উচিত। তাহলে আরও অনেক বেশি কোম্পানি অংশ নিতে পারবে।

তিনি বলেন, আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ডাটা প্যাকেজের দাম অনেক বেশি। কোন কোন প্যাকেজের দাম মিলিয়ন ডলারের মতো। অন্য দেশে এসব ডাটা ফ্রি দেয়। ১৯৭৪ সালে আমাদের দেশে এসব ডাটা উন্মুক্ত ছিল, তখন অনেক বেশি কোম্পানি অংশ নিয়েছিলো।

বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা আসলে ডাটার ব্যবসা করবো, নাকি গ্যাস দরকার। সেটা আগে চিহ্নিত করা দরকার। ডাটার দাম এতো রাখার কোন যৌক্তিকতা দেখি না।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে দৈনিক অনুমোদিত লোড রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট, প্রকৃত চাহিদা ধারণা করা হয় ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো। বেশি চিন্তার হচ্ছে প্রতিনিয়ত দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ন্ত রয়েছে চাহিদা। এক সময় ২৮০০ মিলিয়ন উৎপাদন হলেও এখন ১৮৭০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। এর অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে স্থবিরতাকে। অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতে মনযোগ বেশি ছিল বিগত সরকারগুলোর।

স্থলভাগে কূপ খনন করেও বড় রিজার্ভ পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়ানো থাকল দুরের কথা বর্তমান উৎপাদন ১৮৭০ মিলিয়ন অব্যাহত রাখাই কঠিন মনে করা হচ্ছে। একমাত্র ভরসা হচ্ছে গভীর সমুদ্র, সেখানে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে খাদের কিনারে থাকা জ্বালানি খাতে মহাবিপজ্জয়ের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই।

10 Views

আরও পড়ুন

সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে হাত গুটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ককটেল বিস্ফোরণ

শান্তিগঞ্জে দরগাপাশা ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মীসভা, ত্যাগীদের মূল্যায়নের অঙ্গীকার

মেলান্দহে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়কে বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ 

ইসলামপুরে শীলদহে যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন

ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ, নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ

স্বাস্থ্য সেবায় সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায় জামায়াত : আব্দুল্লাহ আল ফারুক

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ‘প্রস্তুত ছিলাম’

‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

তারাগঞ্জ স্কুল অ্যন্ড কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠান

নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৩টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার !! 

ইসলামপুর পৌরসভার ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা