রিফাত বিন জামাল, সিলেট।
প্রথম প্রেমের মতো প্রথম বিশ্বাসটাও অনেকটা চিরস্থায়ী হয়ে যায় মনে। এরপরে যদি সেটা মিথ্যে বা সঠিক না হয়, তবুও সেটাকে অনেকটা সঠিক মনে হয়। কেউ কেউ হয়তো সে মিথ্যের পরে আর সঠিকটা সম্পর্কে জানতে পারেন না। তো সেই গুজব বা মিথ্যেটাই সত্য হিসেবে থেকে যায় আজীবন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের দ্বন্দ্বের বিষয়টাও এমন। এখনও অনেকে মনে করেন সাকিব আর রিয়াদের মাঝে ঝামেলা আছে। হয়তো না জেনে কিংবা জেনেও সমস্যাটা, ওই যে প্রথম বিশ্বাস!
ঘটনা কী?
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পছন্দ হয়নি সাকিবের। আর আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের আগে তিনি পুরোপুরি সুস্থও ছিলেন না। তাই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছে সাকিব আল হাসান অনুরোধের সুরে বলেছিলেন-‘রিয়াদ ভাইকে রেস্ট দিন।’
কথা হচ্ছে, একটা দলের ভেতরে এমন ঘটনা ঘটে। কোচ, অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক আর ম্যানেজার ও নির্বাচকরা বসে যখন একাদশ চূড়ান্ত করেন, তখন অনেকের বিষয়েই কথা হয়। এটা হয়ে আসছে। এখনো হয়। হয়তো আগামীতেও হবে।
মাশরাফির কাছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে না খেলানোর সাকিবের অনুরোধটা ছিল ঠিক তেমনি। সবচেয়ে বড় কথা হলো আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের আগের দিন অফিশিয়াল প্রেস মিটিংয়ে অধিনায়ক মাশরাফি আসেননি। এসেছিলেন কোচ স্টিভ রোডস।
মাশরাফি প্র্যাকটিস শুরুর আগে স্টেডিয়ামের এক কোণে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে কথা প্রসঙ্গে এবং উদাহরণ টানতে গিয়ে শতভাগ অফ দ্য রেকর্ড মানে না লিখার শর্তে বলেছিলেন, ‘আমার তো দিন প্রায় শেষ। এটাই শেষ বিশ্বকাপ। এরপর তো সাকিবই ক্যাপ্টেন হবে। সাকিব অধিনায়ক হলে কিন্তু অনেকেরই খবর আছে। সাকিব অধিনায়ক হিসেবে খুবই সিরিয়াস এবং হার্ড টাইপের। সে মাঠের পারফরম্যান্সকে খুব সিরিয়াসলি নেয়। কেউ এক ম্যাচ ভাল খেলতে না পারলে আর অ্যাপ্রোচটা ঠিক না থাকলে তাকে বাদ দিতেও দ্বিধা করবেনা। এই যেমন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর স্লো ব্যাটিং (৩৮৭ রান তাড়া করে ৪১ বলে ২৮) দেখে তাকে এক ম্যাচ না খেলানোর কথা বলেছিল সাকিব।’
পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ হারলেও মিচেল স্টার্ক, কামিন্সদের বিপক্ষে ১৩৮.০০ স্ট্রাইকরেটে ৫০ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটু বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলেন। ড্রেসিং রুমে ফিরেও নাকি বেশ উচ্চবাচ্য করেন এবং তিনি ফুরিয়ে যাননি, তারও পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে ভাল খেলার-এসব কথা বলেন। সব মিলে ড্রেসিংরুমে একটু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটে। এসব নিয়ে রিপোর্ট লিখেন এক ক্রীড়া প্রতিবেদক।
বাস্তবিক অর্থে, ড্রেসিং রুমের সেদিনের ঘটনাটাও সত্য নয়। পুরো বিষয়টিই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অনেকবার পরিষ্কার করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও বার্তায়, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলে। কালকে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে কথা বলাতেও সে বিষয় সম্পর্কে বলেন তিনি। রিয়াদ বলেন, 'সাকিব আর আমার মধ্যে আসলে কিছুই হয়নি। কোন কথাই হয়নি। কথা কাটাকাটি আসবে কোথা থেকে?’
ড্রেসিং রুমের কথা ড্রেসিং রুমেই শোভা পায়। রিয়াদও মনে করেন এমন, 'ড্রেসিংরুম এমন একটা জায়গা যেটা আমাদের নিজস্ব। আমি প্রত্যেকের নিজের জায়গাকে আমরা সম্মান করি। এখানে অনেকেরই আবেগ জড়িত, অনেকের কষ্ট জড়িত, অনেকের ঘাম জড়িত। অনেকের রক্তও জড়িত হয়তোবা। অনেক সময় আমরা ফিল্ডিং করতে গেলে আমাদের হাত পা কেটেও যায়। আমি ড্রেসিংরুমের কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করব না, কখনওই না। এটা আমি পছন্দও করি না। আমি এটা পছন্দও করি না আমার কোন টিমমেট করুক। ’
সাকিবের সাথে বিষয়টা নিয়ে কিছুটা হতাশও তিনি, ‘কিছু যদি বাইরে আসেও সে জিনিসটা যেন প্রপারলি আসে। ভাঙা ভাঙা যেন কিছু না আসে। যে কথাগুলো বের হয়েছিল সত্য ছিল না, আমি আবারও বলছি। পুরোটা সত্য ছিল না এখানে। জিনিসটা অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। যেটার কারণে আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম।'
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০