কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিয়ম ভেঙে আগেই প্রচারণা শুরু করেছেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা এলাকায় মতবিনিময়, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এগুলোকে তাঁরা প্রচারণা না বলে বলছেন ‘ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়’।
১৬ মে এই নির্বাচনে প্রার্থিতার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে প্রচারণা, যা চলবে ভোট গ্রহণের এক দিন আগপর্যন্ত।
পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৫-এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবে না। অথচ অনেকেই এই বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সরব আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র হিসেবে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। থেমে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে নেমেছেন আগাম প্রচারণায়।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। ঘরোয়া সভা কিংবা মহল্লাভিত্তিক উঠান বৈঠকেও যোগ দিচ্ছেন প্রার্থীরা। শুক্রবারের জুমার নামাজে মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রার্থীরা বক্তব্য দিচ্ছেন, দোয়া চাইছেন। আগাম প্রচারণার এসব খবর প্রার্থীদের সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছেন।
ভোটাররা বলেন, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আগেই জমে উঠেছে ভোটযুদ্ধ। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদের মেয়র প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে লড়াইটা জমছে।
আগামী ১২ জুন ইভিএম পদ্ধতিতে এই পৌরসভার ভোট গ্রহণ হবে। পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, প্রাক্-নির্বাচনী প্রচারণা যেমন মিছিল, মিটিং শোভাযাত্রা না করার অনুরোধ জানিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গত ২৪ এপ্রিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এরপরও কোনো প্রার্থী সে রকম কিছু করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদ শুভেচ্ছার আড়ালে ভোট
কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। এবারও মুজিবুর রহমানসহ দলের সাতজন নেতা মেয়র পদে লড়তে দলের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন পান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। দলের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক।
ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতা মাহবুবুর ও মাসেদুল মাঠে নেমেছেন। দলীয় লোকজন ও সমর্থকদের নিয়ে তাঁরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে প্রার্থীরা মুসল্লিদের উদ্দেশে দোয়া চেয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
আগাম প্রচারণার বিষয়ে মাসেদুল হক গনমাধ্যমকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এটা তিনি গত ঈদের সময়ও করেছেন।
মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি পৌরসভার নাগরিকদের সেবা দিয়ে আসছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে অতীতের মতো এবারও তিনি ভোটারের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। সঙ্গে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কথাটি ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এটাকে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা মনে করেন না।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছে না বলে দলের দপ্তর সুত্রে জানা যায়। মুলত এই পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই বলে তারা জানান।
তবে সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মেয়র পদে মাঠে নেমেছেন পৌরসভার সাবেক মেয়র ও একসময়ের জামায়াত নেতা সরওয়ার কামাল। তিনি কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও মতবিনিময় সভা করছেন। বিএনপির ভোটারদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন তিনি। আজ দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রার্থিতার ঘোষণা দেন তিনি।
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে মাঠে নেমেছেন ১০-১৫ জন সাবেক-বর্তমান ও সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী। নিজেদের রঙিন ছবি-সংবলিত পোস্টার, কার্ড বানিয়ে প্রার্থীদের অনেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০