ছাত্রলীগ নেতাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের জানাজায় অংশ না নেয়ায় ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে ‘পাষণ্ড’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেছেন ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাবেক ডাকসু নেতৃত্বের ব্যানারে ‘বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বুয়েটে আবরারের জানাজায় অংশ নেননি ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এ কারণে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ভিসি সাইফুলের আবরারের জানাজায় যাওয়া উচিত ছিল।
এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আবরার ফাহাদকে হত্যার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জড়িত, এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে কক্ষ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ভিসিকে বলা হলেও তিনি হলে আসেননি। কোনো পদক্ষেপও নেননি। ছাত্রটি মারা যাওয়ার পরও আসলেন না। জানাজাতেও গেলেন না। অনেক পরে তিনি কুষ্টিয়াতে গেলেন কবর জিয়ারত করতে। তাই এই পাষণ্ড ভিসির অপসারণের দাবি জানাই।
ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা মানুষ তৈরি করতে জানে না। একটি মেধাবী ছাত্র রাজনীতি করতে ছাত্রলীগে গেলে খুনি হয়ে বের হয়। ছাত্রলীগ মানে ব্যালট বাক্স ছিনতাই কর। হত্যা কর। র্যাগিং করে, গণরুমে মেধাবীদের রেখে দাও।
তিনি আরও বলেন, আবরার হত্যায় জড়িত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একদিন শুনতে হবে ১৯ জনের ১৮ জনই বেকসুর খালাস। আমরা বিশ্বজিৎ হত্যায় দেখেছি আসামিরা কীভাবে মাফ পেয়ে যায়। তারা এখন বলছে, ফাহাদ হত্যায় ন্যায়বিচার হবে। আমাদের ন্যায়ের প্রতীক আবরার। যত বাধাই আসুক, এই প্রতীক নিয়ে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।
আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ডাকসুর সাবেক জিএস বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা এবং মঙ্গলবার গ্রেফতার হয়েছেন এ এস এম নাজমুস সাদাত।
এদের মধ্যে ১৩ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। আর ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েট শিক্ষার্থীরা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নও দেখতে চান তারা।
সূত্রঃ যুগান্তর