ফাইল ছবি
এম.এ ওয়াহিদ :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নং কক্ষ হত্যা করা হয়। কক্ষটি থেকে হত্যার বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে।
রোববার দিবাগত রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১২ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটানো হয়। পরে হলের নিচতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
শের-ই বাংলা হলের ওই কক্ষে যান আবরারের ঢাকার বসবাসরত স্বজনরা। সেখানে গিয়ে তারা স্ট্যাম্প, চাপাতি সদৃশ স্টিলের চাকু এবং মদের বোতল দেখেছেন বলে জানান। ওই রুমে রক্তের ছোপ ছোপ দাগও রয়েছে বলে জানান তারা।
এসব পাওয়া গেলেও আবরারের ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন তার স্বজনরা। সকালে পুলিশ অভিযান চালালে কয়েকটি মদের বোতল উদ্ধার করা হয় ওই কক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ৫-৬টি স্টাম্পও উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুর ১টায় আবরারের মামাতো ভাই আবু তালহা রাসেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ‘খবর পেয়ে আমি সকাল ৬টায় ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে আসি। ওখান থেকে ৭টায় আবরারের হলে যাই। সেখানে আবরারকে মারা হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি একটা চাপাতি, বেশ কিছু ভাঙা ও অক্ষত স্ট্যাম্প আর মদের বোতল। আমি ছবি তুলতে চাইলে আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা বাধা দেয়।’
আবরারের মামা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন আবরারকে ঢামেক মর্গে দেখি তখন তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখি। শরীরের প্রায় সব জায়গায় মোটা মোটা ও লালচে আঘাতের চিহ্ন আছে। আবরার যে রুমে থাকে সেখানে গিয়ে তার ল্যাপটপ ও ব্যাবহারের মুঠোফোন খুঁজলে সেগুলো পাইনি। কে বা কারা নিয়েছে সেটাও বলতে পারছি না।’
সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা হল প্রভোস্টের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকৃতি জানান। পরে চাপাচাপি করলে দেখাতে রাজি হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখায়নি।’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আবরারের মামা মোফাজ্জল হল প্রোভোস্টের সঙ্গে কথা বলতে তার কক্ষে অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবরারকে যে কক্ষে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই কক্ষে নিয়মিত মদের আসর বসত। সেই কক্ষে বেশ কয়েকটি মদের বোতলও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ওই রুমে চারজন থাকতেন, তারা সবাই ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতা।
তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকাল এবং প্রত্যয় মুবিন।
ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ওই রুমে সবসময় মদ্যপান চলত। তারা রাতে মদ খেয়ে চিৎকার করতেন। তাদের কেউ কিছু বলতে গেলে গালিও দিতেন। আশপাশের রুমে যারা থাকেন, তারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারতেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, এটি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হতো। এমনকি তারা যে কাউকে তুলে নিয়ে এসে নির্যাতন করতেন।
এর আগে রোববার রাত ৮টার দিকে হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের সিঁড়ির পাশে আবরারের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ডাক্তারকে খবর দিলে তিনি এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।