জেমস আব্দুর রহিম রানা:
গণমানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকা মানুষগুলো নিজেদের অধিকারের কথা বলার কেউ নেই! হুম আমি সাংবাদিকদের কথাই বলছি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত একাকার করে কাজ করেও মহান এই পেশাটির সাথে জুড়ে গেছে ‘থ্যাংকসলেস’ শব্দটি।
বিশ্ব যখন মহামারি ভাইরাস করোনার কবলে, জনমনে যখন আকুণ্ঠ শঙ্কা, ঠিক তখনো হাজারো সংবাদকর্মী নিজের
জীবনের তোয়াক্কা না করে অবিরাম সংগ্রহ করে চলেছেন করোনার সংবাদ।
ন্যূনতম সতর্কতা ছাড়াই ছুটছেন এয়ারপোর্টে নিচ্ছেন প্রবাস ফেরতদের ইন্টারভিউ তারপর ছুটে চলা হাসপাতালে করোনা রোগীর খোঁজে, সেখানে কথা হচ্ছে করোনার চিকিৎসা করা চিকিৎসকের সাথে। তারপর আবার জন জটলার প্রেস বিফ্রিং। কখনো কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে, কখনো তাকে ঘিরে জনগণের প্রতিবাদ মিছিলে!
ভাবতে পারেন, আমরা যখন মাসের বাজার মজুদ করে বাড়িতে আছি করোনার সতকর্তায় তখন যেই মানুষটি আমাদের জানাচ্ছেন দেশে
করোনার প্রকোপ কতটুকু, বিশ্বে কোথায় কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে থেকে শুরু করে করোনার সব খবরাখবর সেই মানুষটিই ঘরে ফিরছেন কি করোনার চারিদিকে কোনোরকম সুরক্ষা ছাড়াই।
মনে পড়ে যায় হেফাজতের কথা,বিডিআর বিদ্রোহ, ২১ আগস্ট পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় গুলি হচ্ছে, ককটেল ফুটছে, গ্রেনেড ফুটছে আর সংবাদকর্মীরা তখন নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভুলে গিয়ে পাগলের মতো ছবিসহ সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত!
সংবাদকর্মীরা কি তবে মানুষ নয়! তাদের কি নূন্যতম সুরক্ষার কিটগুলো পাওয়ার কোনোই অধিকার নেই?
এইতো সেদিন চিকিৎসক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় উপস্থাপক ডা. আব্দন নূর তুষার তাদের (চিকিৎসকদের) অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগ-আপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমার শুধুই মনে হচ্ছিল কতোটা অসহায় আমরা সংবাদকর্মীরা।
চিকিৎসক তার চিকিৎসা করবেন এই শপথ নিয়েই তিনি এসেছেন এই মহান সেবার পেশায়। তাকে ন্যূনতম সুরক্ষা
দিতেও আমরা পারছি না। তার কি পরিবার নেই, নেই কোনো স্বপ্ন! আর সুরক্ষা ছাড়া চিকিৎসা দিতে গিয়ে মারা পড়লে ক্ষতিটা কি শুধুই তার পরিবারের? এ জাতির কি কোনোই ক্ষতি নেই?
ঠিক তেমনি সাংবাদিকদের কি পরিবার নেই, তার মৃত্যুতে কি এই জাতির কোনোই ক্ষতি হবে না? যখন এই কথাগুলো বলছি, তখন আমার সাংবাদিক সহযাত্রী ভাইরা ভুগছেন শিল্পের দৈন্যদশার মধ্য দিয়ে। চলছে ছাঁটাই, বেতন-ভাতার নাই ঠিক, বছর শেষে ইনক্রিমেন্ট তো পূর্ণিমার চাঁদ, চাকরিটা টিকে থাকলেই যেন পরম পাওয়া! কি অপরাধ আমাদের! বলতে পারেন!
থাক সে কথা, আসুন ফিরে আসি করোনায়। যেখানে জন জমায়েতকে দেখা হচ্ছে আত্মহত্যা হিসেবে সেখানে কি দরকার একটা প্রেস বিফ্রিং এ সবগুলো গণমাধ্যমের যাওয়ার? নিয়ম করে একটা হাউজ গিয়ে সবাই ফুটেজ আর তথ্যগুলো ভাগ করে নিলেই কি হয় না! কিংবা ধরুন, যেই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রেস ব্রিফিং করছেন তারাই না হয় ডিজিটালি ব্রিফিং করলো সেখান থেকে তথ্য আর ফুটেজ নিয়ে হলো সংবাদ। বিশেষ কিছু দরকার পড়লে না হয় সংবাদকর্মীরা আলাদাভাবে হাতে নিলেন মুঠোফোন।
জেমস আব্দুর রহিম রানা,
যশোর জেলা সমন্বয়কারী,
সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদ (এসএসপি) ও যশোর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক নাগরিক ভাবনা এবং স্টাফ রিপোর্টার, নিউজ ভিশন।