মুহা. ইকবাল আজাদ, ঢাকা।
ফেনী জেলার বর্তমানের কয়েকজন কৃতী সন্তানদের নাম যদি উল্লেখ করা হয়, তবে প্রথমেই আসবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) নাম। কেউবা বলবেন বিশ্বখ্যাত এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশী মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীনের কথা। কিন্তু একজন ক্রিকেট প্রেমীর সামনে ফেনী জেলা উচ্চারণ করতেই বলে উঠবে ক্রিকেটার সাইফুদ্দিনের নাম।
পুরো নাম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ডাক নাম সাইফে’ই হয়তো তার অধিক সন্তুষ্টি। তাই হয়তো জার্সির পিছনে সাইফ নামেই দেখা যায় ক্রিকেট মাঠে। দর্শকের চোখে সাইফের আবির্ভাব হয় ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। এক বছর পরেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় সাইফুদ্দিনের। খেলেছেনও কয়েক ম্যাচ। অফফর্ম আর ইনজুরির কারণে বাদও পড়েছেন। দাঁতে দাঁত চেপে সাইফ আবার নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন। হাতে পেয়েছেন বিশ্বকাপের টিকেটও। ক্রিকেট বিশ্বে নিজের জাত চিনিয়েছেন ২০১৯ এর বিশ্বকাপে।
সাইফুদ্দিন একজন বোলিং অলরাউন্ডার। দৃষ্টি নন্দন ইয়ার্কার ছোঁড়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও করেন নয়ন জুড়ানো কাভার ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তার মারকুটে ব্যাটিংয়ে অনেকেই ভারত বধের স্বপ্ন দেখছিলো। তবে স্বপ্ন আর সত্যি হয়ে উঠেনি। যদিও বিশ্বকাপই দর্শকদের কাছে সাইফকে চিনিয়েছেন নতুন করে। ৭ ম্যাচে ২৯ গড়ে রান করেছেন ৮৭। বল হাতে ছিলেন সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকায়। ৭ ম্যাচে ঘটিয়েছেন ১৪ উইকেটের পতন। মোস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা বেশি হলেও বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং ইউনিট লিড দিয়েছেন মিস্টার চুয়াত্তর(৭৪)।
ব্যাটিংয়ে কার্যকরী ভূমিকা, বোলিংয়ে এসে ব্রেক থ্রু; অনেকে সাইফুদ্দিনকে মাশরাফির ছায়াই মনে করেন। ম্যাশের সাথে সাইফুদ্দিনের আরেকটি মিল আছে। দুজনেই ইনজুরি প্রবণ। বিশ্বকাপের পরে ইনজুরির কারণে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের কোন ম্যাচ খেলননি ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক। সাইফুদ্দিন কিছু ম্যাচ খেললেও ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। বিপিএলও মিস করেছেন। সদ্য ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। ব্যাট বল হাতে ঘাম ঝরিয়েছেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে খেলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ। সাইফের ইচ্ছা, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। ক্রিকেট পাড়ায় প্রশ্ন, সাইফুদ্দিন বিশ্বকাপের ‘সাইফ’ হয়ে ফিরতে পারবেন তো?
বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ইনজুরিতে ভুগেন দলের ফাস্ট বোলাররা। কেউ কেউ ইনজুরির জন্য দল থেকে দ্রুতই বিদায় নিয়েছেন। লম্বা ইনজুরিতেও ভুগেছেন এক সময়ের বিশ্ব মাতানো বাংলার মোস্তাফিজুর রহমান। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন। আগের মতো বলের ধার, ধারাবাহিকতার ঢেউ, সবটুকুই যেন হারিয়ে বসেছেন। বর্তমানের মোস্তাফিজ মানেই বড্ড রান খরুচে কিংবা কারো চোখে দলের বোঝা। সাইফুদ্দিনও কি মোস্তাফিজ হবেন? নাকি ধারাবাহিকতায় অটুট থাকবেন? দর্শক মনে এমন প্রশ্নের উদয় অবশ্যই হবে।
নিজেকে প্রস্তুত করতে বিসিএলের তৃতীয় রাউন্ডে যোগ দিয়েছেন সাইফুদ্দিন। বিসিবি উত্তরাঞ্চলের হয়ে খেলেছেন এক ম্যাচ। দুই ইনিংসে ব্যাট করে যথাক্রমে ০ এবং ৪ রান করেছেন। বল হাতে নেই বিশেষ কিছু। প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভারে ২ মেইডেনে ৩৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ ওভারে ৫৯ রান বিলিয়েও ছিলেন উইকেটহীন। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে আগের মতো প্রত্যাবর্তন সব ক্রিকেটারদের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। সাইফুদ্দিন কি চ্যালেঞ্জ উতরিয়ে দলে ফিরে সেরাটা দিতে পারবেন? নাকি পিছিয়ে পড়বেন মোস্তাফিজের মতো?