মুহা. ইকবাল আজাদ, ঢাকা।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ কে খেলেছেন? অনেকের মনে হতে পারে আশরাফুলের নাম, কেউবা সাকিব, মুশফিক, তামিমও বলে ফেলতে পারেন। নিয়মিত ক্রিকেটের খোঁজ রাখলে আপনি সহজেই উত্তরটা ধরে ফেলতে পারবেন। উত্তরটা বর্তমান ওয়ানডে কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা। খেলেছেন মাত্র ২১৯ ম্যাচ। ম্যাশ থেকে ঠিক এক ম্যাচ পিছিয়ে মুশফিকুর রহিম। সাকিব-তামিম খেলেছেন সমান সংখ্যক ২০৬টি ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহ একটু পিছিয়ে, ১৮৭ ম্যাচ। তবে নিয়মিত খেললে এতদিনে শীর্ষে থাকতেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
২০০১ সালে অভিষেক হয় মাশরাফির। ২০০৬ সালে অভিষিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন লিটল ম্যান মুশফিক। একই বছরে অভিষেক হয়েছে সাকিব-তামিমের। তবুও ম্যাচের তুলনায় বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের ম্যাচ বেশি কেন? উত্তর, মুশফিক খুব একটা ইনজুরিপ্রবণ না। ইনজুরিতে পড়লেও খুব সাংঘাতিক কিছু না হলে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে দলে খেলেছেন। বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, গত পাঁচ বছরে নিয়মিত ওয়ানডে ম্যাচ কে খেলেছেন? পরিসংখ্যান না ঘেঁটেও এক শব্দে উত্তর আসবে 'মুশফিক।'
গত কয়েক বছরে মুশির কয়েকবার গ্লাভস ছাড়ার নাটক ঘটেছে। তবুও ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলেছেন। পারফর্ম করে নিজের প্রমাণ দিয়েছেন। দলে হয়েছেন 'অটো চয়েস।' কিন্তু সর্বশেষ দল থেকে কবে বাদ পড়েছেন মুশফিক? এমন প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেতে পারে স্বয়ং বিসিবি কর্মকর্তারা। সমীক্ষা অনুযায়ী দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুশফিক। ধারাবাহিকতার দরুন 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল' ট্যাগও পেয়েছেন। গত ভারত সিরিজ, বিপিএল, বর্তমান জিম্বাবুয়ে সিরিজ সবখানেই নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। তবুও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে কেন বাদ পড়েছেন এই ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান?
গত ম্যাচে মুশফিকের বাদ পড়ার কারণ জানিয়েছেন খোদ প্রধান নির্বাচক। সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, পাকিস্তানে যাচ্ছেন না বলেই মুশি খেলবেন না শেষ ওয়ানডেতে। তাহলে মুশির জায়গায় খেলবে কে? উত্তর ছিলো, যারা পাকিস্তানে খেলবে তাদের নিয়ে হবে শেষ ম্যাচের আয়োজন। গুঞ্জন আছে, জিম্বাবুয়ের সাথে এটাই মাশরাফির শেষ ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহ পরিবারের পাশে থাকতে কিছুদিন আগে ছুটি চেয়েছেন। পাকিস্তানে কি মাশরাফি-রিয়াদ যাচ্ছেন? নির্বাচকরা কোন উত্তর দিতে পারেননি। যদি তারা নাইবা যান। তাহলে শেষ ম্যাচে রিয়াদ-ম্যাশের বদলি কে? নাকি পাকিস্তান না গেলেও তারা শেষ ম্যাচ খেলবেন? তবে নিয়মের বেড়াজাল শুধু মুশফিকের জন্য? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
'জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে যারা খেলবেন, সেটা একান্তই পাকিস্তানের প্রস্তুতির জন্য'-কিছুদিন আগে ঠিক এমন মন্তব্য করেছেন বিসিবি নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচ হবে আগামী মাসে। একটা ম্যাচ খেলতে এক মাস আগে প্রস্তুতি নিয়েছে কোন দল? ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। নাকি পাকিস্তানে যেতে না চাওয়া মুশিকে শাস্তি দিতে এমন নিয়ম? এটা ক্রিকেট নাকি প্রহসন? পাকিস্তান সিরিজের জন্য সামনে ডিপিএল সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতির মঞ্চ। অথচ সেদিক না তাকিয়ে কি খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন বিসিবি নির্বাচক। যুক্তির কাছে নাকি মুক্তি মিলে। বিসিবির যুক্তি মুক্তি না নিয়ে অদৃশ্যে হারায়। কর্তাদের নিসৃত বাণী হুট করেই পরিবর্তন হয়।
'শেষ ম্যাচ খেলছেন না মুশফিক' গত দুই দিন ধরে এমন শিরোনাম গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার হয়েছে। হয়তো ব্যাপারটি মুশফিক নিজে জেনেছেন। কিংবা ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছেন। তাতে মুশির ক্ষান্তি কই? বিশ্রামের দিনেও মাঠে এসেছেন। কড়া রোদে আড়াই ঘন্টা ঘাম ঝরিয়েছেন। নিজের নিয়মিত রুটিন পালন করেই হোটেলে ফিরেছেন। বলা হয়ে দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী খেলোয়াড় মুশফিক। বিসিবি তার পরিশ্রমী খেলোয়াড়ের কতটা মূল্য দিয়েছে? বরং তাদের কথা থেকে সরে এসেছে। মুশফিককে পাকিস্তান যেতে চাপ দিয়েছে। দল থেকে নাকি বাদ দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে। শেষমেশ না টলাতে পেরে জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে বাদ দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, বিসিবির এমন দুমুখো আচরণ ক্রিকেটের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনবে? একচ্ছত্র আধিপত্য ক্রিকেটে কতটা উন্নতির পথ দেখিয়ে দিবে? কিংবা পেশাদার সংগঠনের অপেশাদার আচরণে কতদিন বা দর্শকদের সমর্থন পাওয়া যাবে? হয়তো সময় বাকিটা বলে দিবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০