‘He was beautiful. He was the point of difference. He has always been the point of difference.’
ফুটবলের সবচেয়ে জাদুকরী রাতটায় ব্রিটিশ ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলেছেন লিওনেল মেসিকে কেন্দ্র করে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালটাকে অনেকেই এখন মেনে নেন ফুটবল বিশ্বকাপের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল হিসেবে। আর সেই ফাইনালের পর লিওনেল মেসি যখন এগিয়ে যাচ্ছেন সেরার পুরস্কার নিতে, তখন ঠিক এভাবেই মেসিকে বর্ণনা করে নিয়েছিলেন পিটার ড্রুরি।
দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেয়ার কাজটা তো করেছেন মেসি আজ প্রায় ৩১ বছর ধরেই। সেই ৬ বছর বয়সে যখন দাদির হাত ধরে এলাকার ফুটবলে পা লাগিয়েছেন। তখন থেকেই মেসি যেন ‘দ্য পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স।’ ছোট্ট একটা বাচ্চা ভীষণ অবলীলায় বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার চেয়ে উঁচু উঁচু খেলোয়াড়দের পাশ কাটিয়ে– পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স তো সম্ভবত এভাবেই হয়।
বিজ্ঞাপন
কিংবা এই তো চলতি সপ্তাহের শুরুতেই। কনকাকাফ অঞ্চলের কোনো ক্লাব যা করতে পারেনি, সেটাই করেছেন লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি। ইউরোপের কোনো ক্লাবকে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে প্রথমবার হারায় উত্তর আমেরিকা মহাদেশের একটি ক্লাব। সেখানেও ছিল মেসির বাঁ পায়ের মাহাত্ম্য।
বিজ্ঞাপন
অপবাদ ছিল হেডে গোল করতে পারেননা, সেটা করেছেন ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। যে গোলটাকে মেসি নিজেই বলেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা গোল। অপবাদ ছিল ইংলিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে মেসি নিষ্প্রভ। কিন্তু বর্তমান বলছে ইংলিশ ফুটবলের টপ সিক্স ক্লাবের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার একজন এই আর্জেন্টাইন।
সবচেয়ে বড় অপবাদ ছিল লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার না। বার্সেলোনার মেসি যতটা উজ্জ্বল, ততটা আলো ছড়ায়নি আর্জেন্টিনার জার্সিতে। অথচ ২০২৫ সালে এসে মেসিকে ক্লাবের জার্সিতে যত আপন লাগে, আর্জেন্টিনায় তারচেয়ে বেশি মোহনীয় মনে হয়।
পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্সটা অবশ্য ২০২১ থেকে। যেদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠ ব্রাজিলে গিয়ে সেই ব্রাজিলকেই হারিয়ে জিতে এসেছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপাটা। এরপর ফিনালিসিমা আর ২০২২ সালের সেই অসামান্য বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার। সেখান থেকে মেক্সিকো ম্যাচে প্রবল চাপের মুখে একটা ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শট– আরও একবার মেসি হয়ে উঠলেন সেই পার্থক্য গড়ে দেয়া মানুষটা। এরপর বাকি সব জটিলতা পেরিয়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসি হলেন অমর। হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারও।
মেসির গল্পগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে, কারণ জীবনে কোনো এক পর্যায়ে সবাই চায় ‘পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স’ হয়ে জিতে আসতে। কোনো এক গল্পে সবাই নিজেকে বিজয়ী দেখতে চায়– আর মেসি হয়ত সেটার সবচেয়ে বড় অণুপ্রেরণার একজন। হরমোন থেকে শুরু করে ফুটবল মাঠ– মেসি জিতেছেন সবই। আর এখন মেসি উপভোগ করেন নিজের কাজটা, সেটাও হাসিমুখে।
যে হাসিমুখের স্বপ্ন দেখেন প্রতিটা মানুষই। কর্মজীবনের শেষে এমন একটা সফল আর নির্ভার জীবন প্রত্যাশা করা দোষের না নিশ্চয়। মেসি তাই কেবল ফুটবলের মাঠেই হয়ত থেমে থাকেন না, হয়ে ওঠেন জীবনের গল্পের একজন সাধারণ অণুপ্রেরণা। যার গল্পটা আপনাকে শেখায় পার্থক্য গড়ে দেয়া একজন মানুষ হতে।
লিওনেল মেসির বয়স আজ ৩৮। সব পেয়ে যাওয়া মানুষটা এখনো খেলছেন। লক্ষ্যটা সম্ভবত ২০২৬ বিশ্বকাপ। নিজেকে যেখানে অমর করেছেন, সেই মঞ্চ থেকেই বিদায় নিতে চাইছেন মেসি। সেটাই স্বাভাবিক। নিজের প্রিয় জায়গা থেকেই শেষ করতে চাইবেন সফলতার গল্পটা। রোজারিওর যে ছেলেটা ফুটবল দিয়ে অমর হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে, তার সঙ্গে আমাদের গল্পটাও হয়ত মিশে যাবে, শেষবারের মতো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০