রাফিউল ইসলাম রাব্বি:
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ২৪৬/১০, ৪৮.১ ওভার (মুশফিক ১২৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১; চামিরা ৩/৪৪, সান্দাকান ৩/৫৪)
শ্রীলঙ্কা: ১৪১/৯, ওভার ৪০ (গুনাথিলাকা ২৪; মিরাজ ৩/২৮, মুস্তাফিজ ৩/১৬)
পরিসংখ্যান বা মাঠের পারফরম্যান্স- সব দিক থেকে তারুণ্যনির্ভর এই শ্রীলঙ্কা দলের চেয়ে ঢের এগিয়ে থেকে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। মাঠের লড়াইয়েও তার ছাপ স্পষ্ট। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। বৃষ্টি আইনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লঙ্কানদের হারিয়েছে ১০৩ রানে। এই জয়ের সুবাদে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলেরও শীর্ষে উঠে গেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ ইনিংসে দুই দফা বৃষ্টির কারণে প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বন্ধ ছিল খেলা। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ৩৮তম ওভারে আবার বৃষ্টি নামলে আরো ৪০ মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকে। তখন ৯ উইকেট হারানো লঙ্কানদের সংগ্রহ ১২৬ রান। পরে বৃষ্টি আইনে ৪০ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রানের। ফলে জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১১৯ রান। পরে ১৪১ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ১০৩ রানে জয় পায় বাংলাদেশ দল।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী সুপার লিগের সেরা ৮ দল সরাসরি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবে। তারই অংশ হিসেবে এর আগে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ৩০ পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ০-৩ ব্যবধানে হারায় নামের পাশে পয়েন্ট যোগ হয়নি। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শুরুর দুই ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়া সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ২০ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল।
এই জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চূড়ায় উঠেছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। ৯ ম্যাচে ৪ জয়ে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। তিন ও চার নম্বরে থাকা পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার সমান ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৪০ পয়েন্ট। তিন ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে অবস্থান নিউজিল্যান্ডের। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা শ্রীলঙ্কার ৫ ম্যাচে কোনো জয় নেই।
এদিকে মুশফিকুর রহিমের শতকের উপর ভর করে জেতা ম্যাচে রেকর্ড বইয়ে বাংলাদেশ দল। ২০০২ সাল থেকে চলমান সিরিজের আগ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। যেখানে ৬টি সিরিজ লঙ্কানদের দখলে। বাকি দুটি সিরিজ ড্র হয়। এবার সিরিজ জয়ের আক্ষেপ ঘোচাল টাইগাররা। এতে এশিয়ার সবগুলো পরাশক্তিদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের নজির গড়লো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২৪৬ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। ২৪৭ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি সফরকারীরা। আগের ম্যাচে ২২৪ রানে অল আউট হয়ে ৩৩ রানে ম্যাচ হারা লঙ্কানরা এ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে করে ১৪১ রান। এতে ১০৩ রানে জয় পায় বাংলাদেশ দল।
লক্ষ্য তাড়ার শুরুতেই অধিনায়ক কুশল পেরেরার উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দলীয় ২৪ রানের সময় ব্যক্তিগত ১৪ রানে মিড অনে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। অভিষেক হওয়া শরিফুল ইসলামের এটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। ২৪ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হন আরেক ওপেনার গুনাথিলাকা। খানিক বাদে নিশাঙ্কাকে ফেরান সাকিব। মিড উইকেটে তিনবারের চেষ্টায় বলকে তালুবন্দি করেন তামিম।
পরে ১০ রানে থাকা ধনঞ্জয়াকে আউট করে মাশরাফিন বিন মুর্তজার রেকর্ড স্পর্শ করেন সাকিব। দেশের হয়ে ওয়ানডেতে ২১০ ম্যাচে মাশরাফির উইকেট ২৭০টি। তার মধ্যে ১টি নিয়েছিলেন এশিয়া একাদশের হয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়ে ২১১ ম্যাচে ২৬৯ উইকেট স্পর্শ করেন সাকিব। আরেকটি উইকেট নিলেই ছাড়িয়ে যাবেন মাশরাফিকে।
ধনঞ্জয়ার আউটের পর বান্দারা (১৫), সানাকা (১১), হাসারাঙ্গারা (৬) ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলে বৃষ্টির পর ১৪১ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস। ফল ১০৩ রানে জয় তুলে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ও মিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন। সাকিবের দখলে ২টি। মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়া সাইফউদ্দিনের পরিবর্তে বল করতে নেমে উইকেটের দেখা পাননি তাসকিন আহমেদ। ৮ ওভার বল করে ২৭ রান খরচ করেন তিনি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশ দলের। শুরুতেই ওপেনার তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। সাকিব আল হাসান ফেরেন শূন্য রানে। আরও একবার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ লিটন। এ ম্যাচে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ফিরেছেন ২৫ রান করে। একাদশে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
প্রথম ওয়ানডের মতো এবারও দলের হাল ধরেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আগের ম্যাচে দুজন ১০৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেছিলেন। আজ তাদের জুটি থেকে আসে ৮৭ রান। সান্দাকানকে সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন রিয়াদ। এতে শেষ হয় তার ৪১ রানের ইনিংসটি। পরে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুশফিক।
আগের ম্যাচে ৮৪ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার আর ভুল করেননি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে খেলেন ১২৫ রানের ইনিংস। এতে দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন মুশফিকুর। রঙিন পোশাকে এর আগে সবশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। লঙ্কানদের বিপক্ষে তার দ্বিতীয় ওয়নাডে শতকটি এলো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫ ইনিংস পর।
শেষদিকে সাইফউদ্দিনের ১১ রানের কল্যাণে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। শ্রীলঙ্কার হয়ে চামিরা ও সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০