রাবি প্রতিনিধি :
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর, সোমবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে “বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়”। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম আব্দুল লতিফ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আশরাফুজ্জামান, প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রফেসর ড. বারকুল্লাহ বিন দূরসহ শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটির আহ্বায়ক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক মো. রাশেদুল আলমের পক্ষ থেকে ❝শিক্ষার সকল স্তরে ইসলাম তথা নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি❞ পাঠ করেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন।
উত্থাপিত ৬ দফা দাবি হলো-
১. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-র মূল কমিটিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ❝ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগ❞ থেকে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পুস্তক প্রণয়নের জন্য ৪ জন এবং সকল স্তরে প্রণীত পুস্তকের শরয়ী বিষয়াদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নূন্যতম ২ জন গ্রহণযোগ্য, বিতর্কমুক্ত, নির্ভরযোগ্য শিক্ষাবিদ এক্সপার্ট অন্তর্ভুক্ত করা। বিতর্কিত ও ভ্রান্ত চিন্তা লালনকারী, ইসলাম বিদ্বেষী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতাদর্শের বহির্ভূত কাউকে এ কমিটিতে রাখা যাবে না।
২. কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ সংশোধিত) প্রবিধান সংশোধন করে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাষক ও সহকারী (আরবি ও লাইব্রেরিয়ান) পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গ্রাজুয়েটদের আবেদন করা সুযোগ পুনবহাল করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি।
৩. প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের সকল বিভাগে ইসলাম শিক্ষা আবশ্যিককরণ।
৪. সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু নিশ্চিতকরণ।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ফিকহ, কুরআন, হাদিস ইত্যাদি বিভাগ নিয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বা শরীয়া অনুষদ চালু করা।
৬. ইসলামিক স্টাডিজ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে GED এর অন্তর্ভুক্তকরণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে ৬ দফার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান বলেন, অত্যান্ত সুকৌশলে ইসলাম শিক্ষাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ইসলাম শিক্ষাকে কলেজ পর্যায়ে গুচ্ছের মধ্যে নিয়ে প্রথম ছাত্রদের থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বিলিন করেছে নাস্তিক, বাম ও ইসলাম বিদ্বেষীরা। সমাজে যেভাবে অনৈতিকতা ও বৈষম্য ছড়িয়ে পড়েছে, তার থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার সকল স্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই।
প্রফেসর ড. এ কে এম আব্দুল লতিফ বলেন, কলেজগুলোতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগকে ঐচ্ছিক করে দেয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীরা এ সাবজেক্ট নিতে চাইলেও পারছে না! এ ধরনের বৈষম্য কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটির ঘোষিত ৬ দফার সাথে আমি পূর্ণভাবে ঐক্যমত প্রকাশ করছি।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. মো. আশারাফুজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ইসলাম শিক্ষার তেমন উন্নতি হয়নি। বরংচ ইসলাম শিক্ষা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো পিছিয়ে পড়েছে। এটি হয়েছে কতিপয় স্বৈরাচার শাসকের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার কারণে। আজকের মানববন্ধনে উত্থাপিত ছয় দফা দাবিকে আমি সমর্থন করছি। এই দাবিসমূহ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বাস্তবায়ন করা হয়।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল আল মমুন বলেন, বিগত ১৬ বছর সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্হায় যে পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় ইসলামিক শিক্ষার কোন কিছুই আর অবশিষ্ট রাখা হয় নাই। আমি চাই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্হায় আবারও ইসলামের নৈতিক শিক্ষা চালু করা হোক। ইসলামি শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
প্রফেসর ড. বারকুল্লাহ বিন দূর ইসলামী শিক্ষার প্রতি সকল বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মোঃ বায়জিদ হাসান (তৃতীয় বর্ষ), মাসুম বিল্লাহ (দর্শন বিভাগ চতুর্থ বর্ষ), ইব্রাহিম হোসেন (চতুর্থ বর্ষ), জুই আক্তার (তৃতীয় বর্ষ), দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
মো. তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৩ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।